ভোগান্তি সীমাহীন, টনক নড়ছে না সরকারের
Published: 1st, June 2025 GMT
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টানা পাঁচ দিন বন্ধ চিকিৎসাসেবা। প্রতিদিন বহু রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে কাজে ফিরবেন না। রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছলেও হাসপাতাল সচলে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই।
এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা.
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোপুরি সেবা বন্ধ রাখা অগ্রহণযোগ্য। সরকারের উচিত দ্রুত ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি ও হাসপাতাল চালুর ব্যবস্থা করা।
চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধাদের দুর্ব্যবহার, হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে ২৮ মে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। কর্মসূচি পালনের সময় অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। চিকিৎসক, কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পর সবাই হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরদিন থেকে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম জানান, কবে সেবা চালু হবে, তা তিনি জানেন না।
কারণ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। রোগীদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেবা চালু হবে। তার আগ পর্যন্ত আশপাশের চক্ষু হাসপাতালে সেবা নিতে রোগীদের অনুরোধ করছি।’
সরেজমিন গতকালও হাসপাতালের সামনে বেশ কয়েকজন রোগীকে পাওয়া যায়। তারা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চোখের রোগীরা প্রতিদিন হাসপাতালে ভিড় করছেন। কারও কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
ছয় মাস পর অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল পাওয়া রোগীর স্বজন শহিদুল ইসলাম সমকালকে জানান, তারা ছয় মাস ধরে অপেক্ষায় আছেন। রোববার এসে জানতে পারেন হাসপাতাল বন্ধ। এতদিন পর সিরিয়াল পেলাম, অথচ রোগীর অস্ত্রোপচার হলো না। কর্তৃপক্ষ এমন প্রতারণা না করলেও পারত। কবে হাসপাতাল চালু হবে, তাও বলছে না। রোগী নিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
রোগী আয়েশা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন এসে অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছি। হাসপাতালে কী কখনও এমন সম্ভব? দেশে গুন্ডামি-নৈরাজ্য হলেও সরকার নির্বিকার।’ হাসপাতালের ফটকের সামনে অপেক্ষায় থাকা রোগীরা জানান, তাদের অনেকের দু’দিনের মধ্যে লেজার করা না হলে সমস্যা দেখা দেবে। ১০ দিন দেরি হলে দৃষ্টিশক্তিও হারাতে হতে পারে। দু’পক্ষের ঝামেলা মেটাতে না পারলে, সরকার কেন আছে?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট যে ঘটনায় বন্ধ হয়েছে, তা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। হাসপাতালের সেবা বন্ধ রাখা কখনও সমাধান হতে পারে না। দিনের পর দিন হাসপাতাল বন্ধ রাখার অর্থ সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। জনগণের অর্থে নির্মিত প্রতিষ্ঠানে কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির কারণে মানুষের ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে সেবা চালু করা। কারণ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হলো– চক্ষু-সংক্রান্ত সরকারি হাসপাতালের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। আইন ভঙ্গ করলে, আইনের আওতায় আনা, অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচার করতে হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না: বাম গণতান্ত্রিক জোট
গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে যে ‘মব’ সন্ত্রাসের শুরু হয়েছিল, সেটা এখনো চলছে এবং নগ্ন রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে এমন ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা। জোটের নেতারা বলেছেন, মব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাব এমন যে খারাপ কিছু তো করছে না।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এ কথা বলেন। মব সন্ত্রাস ও মাজার-খানকায় হামলা বন্ধসহ সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথাসময়ে নির্বাচনের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাম জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর যে মব শুরু হয়েছিল, সেই মব এখনো দূর হয়নি। বরং নগ্ন রূপ নিয়েছে।...তাহলে ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) তখন কী করলেন?’
সরকার না চাইলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না মন্তব্য করে রুহিন হোসেন বলেন, মব নিয়ে সরকারের উপদেষ্টারা আকারে-ইঙ্গিতে যা বলেন, তাতে ভাবটা এ রকম যে খারাপ কিছু করছে না। অন্তর্বর্তী সরকার এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারবে না।
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংস্কারের নামে শ্রমিক–কৃষক–মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করছেন না, কিন্তু সংবিধানের চার মূলনীতি পরিবর্তন করতে চান। অবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
‘মব’ সন্ত্রাস ও মাজার-খানকায় হামলা বন্ধসহ সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথাসময়ে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা–কর্মীরা। আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে