জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টানা পাঁচ দিন বন্ধ চিকিৎসাসেবা। প্রতিদিন বহু রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে কাজে ফিরবেন না। রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছলেও হাসপাতাল সচলে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই।
এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা.

সায়েদুর রহমান জানান, কবে নাগাদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তা তাদের জানা নেই। তবে শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া সেবা চালু করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোপুরি সেবা বন্ধ রাখা অগ্রহণযোগ্য। সরকারের উচিত দ্রুত ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি ও হাসপাতাল চালুর ব্যবস্থা করা।
চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধাদের দুর্ব্যবহার, হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে ২৮ মে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। কর্মসূচি পালনের সময় অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। চিকিৎসক, কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পর সবাই হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরদিন থেকে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম জানান, কবে সেবা চালু হবে, তা তিনি জানেন না। 
কারণ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। রোগীদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেবা চালু হবে। তার আগ পর্যন্ত আশপাশের চক্ষু হাসপাতালে সেবা নিতে রোগীদের অনুরোধ করছি।’
সরেজমিন গতকালও হাসপাতালের সামনে বেশ কয়েকজন রোগীকে পাওয়া যায়। তারা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চোখের রোগীরা প্রতিদিন হাসপাতালে ভিড় করছেন। কারও কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

ছয় মাস পর অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল পাওয়া রোগীর স্বজন শহিদুল ইসলাম সমকালকে জানান, তারা ছয় মাস ধরে অপেক্ষায় আছেন। রোববার এসে জানতে পারেন হাসপাতাল বন্ধ। এতদিন পর সিরিয়াল পেলাম, অথচ রোগীর অস্ত্রোপচার হলো না। কর্তৃপক্ষ এমন প্রতারণা না করলেও পারত। কবে হাসপাতাল চালু হবে, তাও বলছে না। রোগী নিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

রোগী আয়েশা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন এসে অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছি। হাসপাতালে কী কখনও এমন সম্ভব? দেশে গুন্ডামি-নৈরাজ্য হলেও সরকার নির্বিকার।’ হাসপাতালের ফটকের সামনে অপেক্ষায় থাকা রোগীরা জানান, তাদের অনেকের দু’দিনের মধ্যে লেজার করা না হলে সমস্যা দেখা দেবে। ১০ দিন দেরি হলে দৃষ্টিশক্তিও হারাতে হতে পারে। দু’পক্ষের ঝামেলা মেটাতে না পারলে, সরকার কেন আছে?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট যে ঘটনায় বন্ধ হয়েছে, তা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। হাসপাতালের সেবা বন্ধ রাখা কখনও সমাধান হতে পারে না। দিনের পর দিন হাসপাতাল বন্ধ রাখার অর্থ সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। জনগণের অর্থে নির্মিত প্রতিষ্ঠানে কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির কারণে মানুষের ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে সেবা চালু করা। কারণ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হলো– চক্ষু-সংক্রান্ত সরকারি হাসপাতালের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। আইন ভঙ্গ করলে, আইনের আওতায় আনা, অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচার করতে হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র বন ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: এনসিপি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকারকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে যদি অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না।

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ১৯তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির সদস্যসচিব এ কথাগুলো বলেন।

রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে যায়, তাহলে জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব বলেও মনে করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, এ রকম একটা টাইমলাইন অনেক আগেই বলছে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে বিচার-সংস্কারকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করা, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং একই সঙ্গে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণার দিকে যেতে হবে। অবশ্যই জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘এর আগে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে বসে যখন একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন, তখন আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। যদি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না, তা বলার অবকাশ রাখে না।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘যাঁরা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, যাঁরা বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এই ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যদি সরকার নির্বাচনের মতো বিষয়কে খোলাসা ও সুনির্দিষ্ট করতে শুরু করে, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি আমরা পুনর্বিবেচনা করব।’

রোববারের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া। সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • ৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়
  • সরকারের ঘনিষ্ঠরাই বলছে, এই সরকারের নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা নেই: জি এম কাদের
  • সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: এনসিপি