অধিকাংশ মসলার দাম কম, স্বস্তি ক্রেতার
Published: 1st, June 2025 GMT
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তে শুকনো মরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২১৫ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অথচ গতবার কোরবানির ঈদের আগে মসলা পণ্যটির দাম বেড়ে হয়েছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। এবার অধিকাংশ মসলা পণ্যের দামই নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। সরবরাহের ঘাটতি নেই। সঙ্গে সিন্ডিকেট না থাকার সুফল পাচ্ছেন ক্রেতারা।
আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়, যা গতবার ঈদের আগে ছিল ১৬০-১৭০। একইভাবে ৪০ টাকা কমে হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। গতবার আমদানি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ থাকলেও, এবার মিলছে ৫০-৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকার ওপরে গেলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
গতবার ঈদুল আজহায় আমদানি রসুনের দাম ছিল ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, যা এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০। ১৯০-২০০ টাকায় ওঠা দেশি রসুনের দাম এবার ১১০-১২০। মানভেদে আদা মিলছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, যা গতবার ছিল ২২০-২৬০। গতবারের চেয়ে দাম কম তেজপাতা, লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারুচিনি, জিরা, কিশমিশ, বাদাম, এলাচসহ অন্যান্য মসলা পণ্যের।
পাইকারির সুফল মিলছে খুচরা বাজারেও। চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের লুৎফুর রহমান বলেন, ‘৫০ টাকা দরে ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। তিন কেজি করে কিনেছি আদা ও রসুন। এর পরও হাতে অনেক টাকা আছে। সত্যি বলতে, ঈদের আগে মসলার বাজারে এসে বহুদিন পর স্বস্তি অনুভব করলাম।’ আরেক ক্রেতা মো.
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টন মসলা জাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে পেঁয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ দশমিক ৬, আদা ২১ হাজার ১৯, ১০ হাজার ৫৪৩ টন দারুচিনি, এলাচ ১ হাজার ৬১৪ দশমিক ৬ টন, লবঙ্গ ২ হাজার ১৫৪ টন, জিরা ৩ হাজার ৭০২, শুকনো মরিচ ১৭৯ দশমিক ৭, হলুদ ৪ হাজার ৩২৮, গোলমরিচ ১ হাজার ৯ দশমিক ৭২ ও কিশমিশ ৪ হাজার ৮২৩ টন আমদানি করা হয়েছে। খাতুনগঞ্জের মেসার্স এমআই ট্রেডিংয়ের কর্ণধার আরিফ মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, ‘গত ঈদের তুলনায় এবার প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কম। এতে স্বস্তি নিয়ে বাজার করতে পারছেন ক্রেতারা।’
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় এবার আমদানি ও সরবরাহ বেশি হওয়ায় মসলার দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম অর্ধেকের বেশি কমেছে।’ খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ‘অন্যান্য বছর কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এবার কম আছে। ঈদের আগে দাম আর বাড়বে না। বরং আরও কমতে পারে কিছু পণ্যের দাম।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানির এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে কারসাজি করে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মশল দ র খ ব র মসল র দ ম ক ব যবস য় র মসল দশম ক আমদ ন গতব র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের আলোকেই হবে জুলাই সনদ: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব মতামত দিয়েছে, সে আলোকে পরিবর্তিত প্রস্তাব নিয়েই জাতীয় সনদ (জুলাই সনদ) করা হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার ছিল দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার উদ্বোধনী। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী মাসে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের।
আজকের বৈঠকে সংবিধানের সত্তর অনুচ্ছেদ, নিম্নকক্ষে নারী আসন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধির একটি অংশ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সংস্কার কার্যক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক যুক্তি সামনাসামনি আলোচনা হলে অনেক ক্ষেত্রে অবস্থানগত পরিবর্তন হতে পারে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ের স্বল্পতা রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কী কাজ করছে, তা জানতে জনমনে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছি, যাতে মানুষ আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বুঝতে পারে।’
যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো জুলাই সনদে যুক্ত হবে না বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘সব বিষয়ে আমরা একমত হব না। কিছু জায়গায় একমত হব। বাকিটা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জনগণ কতটা গ্রহণ করবে, সেটা তাদের বিষয়।’
আগামী মাসের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরির কাজ সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, সংস্কার সুপারিশে আমরা যেন ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিচ্ছে ত্রিশটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণ-অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, আমজনতার দল, ভাসানী অনুসারী পরিষদ/ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্য মো. আয়ুব মিয়া, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক ও ইফতেখারুজ্জামান।