চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তে শুকনো মরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২১৫ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অথচ গতবার কোরবানির ঈদের আগে মসলা পণ্যটির দাম বেড়ে হয়েছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। এবার অধিকাংশ মসলা পণ্যের দামই নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। সরবরাহের ঘাটতি নেই। সঙ্গে সিন্ডিকেট না থাকার সুফল পাচ্ছেন ক্রেতারা।
আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়, যা গতবার ঈদের আগে ছিল ১৬০-১৭০। একইভাবে ৪০ টাকা কমে হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। গতবার আমদানি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ থাকলেও, এবার মিলছে ৫০-৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকার ওপরে গেলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
গতবার ঈদুল আজহায় আমদানি রসুনের দাম ছিল ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, যা এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০। ১৯০-২০০ টাকায় ওঠা দেশি রসুনের দাম এবার ১১০-১২০। মানভেদে আদা মিলছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, যা গতবার ছিল ২২০-২৬০। গতবারের চেয়ে দাম কম তেজপাতা, লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারুচিনি, জিরা, কিশমিশ, বাদাম, এলাচসহ অন্যান্য মসলা পণ্যের।
পাইকারির সুফল মিলছে খুচরা বাজারেও। চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের লুৎফুর রহমান বলেন, ‘৫০ টাকা দরে ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। তিন কেজি করে কিনেছি আদা ও রসুন। এর পরও হাতে অনেক টাকা আছে। সত্যি বলতে, ঈদের আগে মসলার বাজারে এসে বহুদিন পর স্বস্তি অনুভব করলাম।’ আরেক ক্রেতা মো.

জুলফিকার বলেন, ‘এবারের মসলার বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য না থাকায় অনেক কম দামে এবার মসলা কিনতে পারছি।’

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টন মসলা জাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে পেঁয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ দশমিক ৬, আদা ২১ হাজার ১৯, ১০ হাজার ৫৪৩ টন দারুচিনি, এলাচ ১ হাজার ৬১৪ দশমিক ৬ টন, লবঙ্গ ২ হাজার ১৫৪ টন, জিরা ৩ হাজার ৭০২, শুকনো মরিচ ১৭৯ দশমিক ৭, হলুদ ৪ হাজার ৩২৮, গোলমরিচ ১ হাজার ৯ দশমিক ৭২ ও কিশমিশ ৪ হাজার ৮২৩ টন আমদানি করা হয়েছে। খাতুনগঞ্জের মেসার্স এমআই ট্রেডিংয়ের কর্ণধার আরিফ মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, ‘গত ঈদের তুলনায় এবার প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কম। এতে স্বস্তি নিয়ে বাজার করতে পারছেন ক্রেতারা।’

বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় এবার আমদানি ও সরবরাহ বেশি হওয়ায় মসলার দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম অর্ধেকের বেশি কমেছে।’ খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ‘অন্যান্য বছর কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এবার কম আছে। ঈদের আগে দাম আর বাড়বে না। বরং আরও কমতে পারে কিছু পণ্যের দাম।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানির এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে কারসাজি করে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মশল দ র খ ব র মসল র দ ম ক ব যবস য় র মসল দশম ক আমদ ন গতব র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের