সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি কোরবানির পশুর হাট। হাজারো গরু উঠেছে বিক্রির জন্য। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম পুরো এলাকা। এরই মধ্যে বেশকিছু ভারতীয় গরুও দেখা যায়। কয়েকজন বিক্রেতার অভিযোগ, জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু প্রস্তুত। তার ওপর ভারতীয় গরু ওঠায় দাম কমে যাওয়ায় খামারিরা বেকায়দায় পড়েছেন। একাধিক খামারির দাবি, ভারতীয় বাছুর খামারে লালন-পালনের পর বিক্রি করছেন।
বিক্রেতারা জানান, দেড় থেকে দুই বছর আগে ভারতীয় বাছুর গরু এনে স্থানীয় খামারে মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। ঈদের হাটে এসব বিক্রির জন্য তুলেছেন খামারি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুও হাটে তোলায় দাম কম। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এলেও কম দামে কিনছেন বলে অভিযোগ খামারিদের। বিশেষ করে, তারা ভারতীয় সাদা জাতের গরু কম দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারদের ভাষ্য, ভারতীয় গরুর দাম কম হওয়ায় এ হাটে আসেন তারা।
জয়পুরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী রায়হান আলী বলেন, যে পণ্য দেশের জন্য নিষিদ্ধ, তার কোনো বৈধতা নেই। অবৈধ পথে আনা যেমন অপরাধ, তেমনই বড় করে বাজারে বিক্রি করাও অপরাধ।
কুমিল্লা থেকে গুরু কিনতে এসেছিলেন পাইকার সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, ‘পাঁচ-ছয় বছর ধরে হাটে আসছি। ভারতীয় গরু পাওয়া যায়, দামও কম। ৯টি ভারতীয় ও ১২টি দেশি গরু কিনেছি। এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে মোটামুটি লাভও হয়।’ উপেজলার ধলাহার এলাকার খামারি নুর ইসলামের ভাষ্য, ‘দেড় বছর আগে ভারতীয় ১০টি সাদা জাতের বাছুর এনে খামারে মোটাতাজা করেছি। ৯টি হাটে বিক্রি করতে এনেছি। পাঁচটি বিক্রি হয়েছে।’
কয়েকজন খামারি জানান, কোথা থেকে এত ভারতীয় সাদা জাতের গরু এনে হাটে তোলা হয়েছে, তার হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা। বিজিবি বলছে, যেসব ভারতীয় গরু হাটে উঠেছে, সেগুলো আগের। এদিকে মহিষমুন্ডা গ্রামের খামারি কেরামত আলী জানান, তিনি ২৩টি দেশি গরু বিক্রি করতে এনেছেন। ৯ লাখ টাকায় সাতটি বিক্রি করেছেন। আরও ১৩টি আছে। ক্রেতার অভাবে সেগুলো ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মতো অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
রাজধানীর রায়েরবাগ থেকে গরু কিনতে এসেছিলেন পাইকার মাহমুদ আলী। তিনি মূলত ভারতীয় গরু সংগ্রহের জন্য আসেন। কিন্তু এবার আমদানি কম। দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বাদশা মিয়া ছয় মণ ওজনের একটি দেশি ষাঁড় বিক্রি করতে এসেছিলেন। ২ লাখ টাকা দাম উঠলেও বিক্রি করলে অনেক লোকসান হবে জানিয়ে তিনি গরু ফেরত নিয়ে যান। ক্রেতা চাটখুর গ্রামের মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রচুর গরু ওঠেছে। পশুর দাম নাগালের ভেতরে রয়েছে।
ক্রেতার অভাবে বিক্রি কম হওয়ায় অনেকেই গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে ইজারাদারের অংশীদার উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম স্বীকার করেন। ভারতীয় গরুর বিষয়ে জানতে চাই তিনি বলেন, ‘যে কয়টা উঠেছে, সেগুলো খামারে লালন-পালন করা। এখন বিক্রি করছে, এর সংখ্যাও খুব কম।’
ভারতীয় গরু বেচাকেনার বিষয়টি জানা নেই বলে জানান থানার ওসি মইনুল ইসলাম। বিজিবির ২০ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, সব চোরাচালান বন্ধ। গরুগুলো আগের হতে পারে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে আধা ঘণ্টার ঝড়ে শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত, ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অনেক এলাকা
পঞ্চগড়ে মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে জেলা শহর, সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও বোদা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা ঝড় বড়ে যায়। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ও খুঁটি উপড়ে যায়। গতকাল রাত ৯টা থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন আছে জেলার বিভিন্ন এলাকা।
ঝড়ের কবলে পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া, কামাতপাড়া, ডোকরোপাড়া, রামের ডাঙ্গা, রাজনগড় (নতুনবস্তি), সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের বুড়িবান, মালাদাম, মাগুরা ইউনিয়নের সিপাইপাড়া, বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের শিকারপুর, তেলিপাড়া, জগন্নাথ পাড়া, ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরের একটি কাঠালগাছ হেলে সীমানাপ্রাচীরের ওপর পড়েছে। এতে সীমানাপ্রাচীরে কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া ধাক্কামারা ইউনিয়নের বুড়িরবান এলাকায় একটি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পঞ্চগড়-মালাদাম সড়কের মধ্যে পড়ে আছে। চলাচলের বিঘ্ন ঘটায় লোকজন পাশের একটি সুপারিবাগান দিয়ে বিকল্প পথে চলাচল করছেন। সেখান থেকে কিছুটা দূরে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো বট-পাকুরের গাছ উপড়ে সড়কের ওপর পড়েছে। সেখানেও একটি বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে।
এ ছাড়া মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরা সিপাইপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘর উড়ে পাশের একটি ভুট্টাখেতে গিয়ে পড়েছে। একটি টিনশেড ভবনের বারান্দায় গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিপাইপাড়া এলাকার আইজুল ইসলাম, আবদুল মোতালেব, ফয়জুল ইসলাম, পুহাতু মোহাম্মদ ও তবিবর রহমানের বাড়িঘর ভেঙে গেছে।
বুড়িরবান এলাকার বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক প্রসন্ন কুমার রায় বলেন, ‘উপড়ে পড়া বট-পাকুরের গাছ দুটি ২০০ বছর আগের। আমাদের পূর্বপুরুষ সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী এই বট-পাকুর গাছের চারা দুটিকে বিয়ে দিয়ে পাশাপাশি এই সড়কের পাশের রোপণ করেছিলেন। ঐতিহ্যবাহী গাছ দুটি মাত্র ৩০ মিনিটের ঝড়ে উপড়ে পড়েছে।’
বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেব আলী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অন্তত চারটি গ্রামে শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। অনেক গাছপালা মানুষের বাড়িঘরে পড়েছে আবার কিছু গাছপালা সড়কের ওপর পড়েছে। আজ সকাল থেকে লোকজন লাগিয়ে এসব গাছপালা সরানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।’
ঝড়ে পঞ্চগড়ে মাগুরা সিপাইপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে