সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি কোরবানির পশুর হাট। হাজারো গরু উঠেছে বিক্রির জন্য। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম পুরো এলাকা। এরই মধ্যে বেশকিছু ভারতীয় গরুও দেখা যায়। কয়েকজন বিক্রেতার অভিযোগ, জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু প্রস্তুত। তার ওপর ভারতীয় গরু ওঠায় দাম কমে যাওয়ায় খামারিরা বেকায়দায় পড়েছেন। একাধিক খামারির দাবি, ভারতীয় বাছুর খামারে লালন-পালনের পর বিক্রি করছেন।
বিক্রেতারা জানান, দেড় থেকে দুই বছর আগে ভারতীয় বাছুর গরু এনে স্থানীয় খামারে মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। ঈদের হাটে এসব বিক্রির জন্য তুলেছেন খামারি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

মহির উদ্দিন জানান, কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ৯৭ হাজার। মজুত ৩ লাখ ১৬ হাজার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুও হাটে তোলায় দাম কম। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এলেও কম দামে কিনছেন বলে অভিযোগ খামারিদের। বিশেষ করে, তারা ভারতীয় সাদা জাতের গরু কম দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারদের ভাষ্য, ভারতীয় গরুর দাম কম হওয়ায় এ হাটে আসেন তারা। 
জয়পুরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী রায়হান আলী বলেন, যে পণ্য দেশের জন্য নিষিদ্ধ, তার কোনো বৈধতা নেই। অবৈধ পথে আনা যেমন অপরাধ, তেমনই বড় করে বাজারে বিক্রি করাও অপরাধ।
কুমিল্লা থেকে গুরু কিনতে এসেছিলেন পাইকার সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, ‘পাঁচ-ছয় বছর ধরে হাটে আসছি। ভারতীয় গরু পাওয়া যায়, দামও কম। ৯টি ভারতীয় ও ১২টি দেশি গরু কিনেছি। এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে মোটামুটি লাভও হয়।’ উপেজলার ধলাহার এলাকার খামারি নুর ইসলামের ভাষ্য, ‘দেড় বছর আগে ভারতীয় ১০টি সাদা জাতের বাছুর এনে খামারে মোটাতাজা করেছি। ৯টি হাটে বিক্রি করতে এনেছি। পাঁচটি বিক্রি হয়েছে।’
কয়েকজন খামারি জানান, কোথা থেকে এত ভারতীয় সাদা জাতের গরু এনে হাটে তোলা হয়েছে, তার হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা। বিজিবি বলছে, যেসব ভারতীয় গরু হাটে উঠেছে, সেগুলো আগের। এদিকে মহিষমুন্ডা গ্রামের খামারি কেরামত আলী জানান, তিনি ২৩টি দেশি গরু বিক্রি করতে এনেছেন। ৯ লাখ টাকায় সাতটি বিক্রি করেছেন। আরও ১৩টি আছে। ক্রেতার অভাবে সেগুলো ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মতো অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
রাজধানীর রায়েরবাগ থেকে গরু কিনতে এসেছিলেন পাইকার মাহমুদ আলী। তিনি মূলত ভারতীয় গরু সংগ্রহের জন্য আসেন। কিন্তু এবার আমদানি কম। দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বাদশা মিয়া ছয় মণ ওজনের একটি দেশি ষাঁড় বিক্রি করতে এসেছিলেন। ২ লাখ টাকা দাম উঠলেও বিক্রি করলে অনেক লোকসান হবে জানিয়ে তিনি গরু ফেরত নিয়ে যান। ক্রেতা চাটখুর গ্রামের মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রচুর গরু ওঠেছে। পশুর দাম নাগালের ভেতরে রয়েছে। 
ক্রেতার অভাবে বিক্রি কম হওয়ায় অনেকেই গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে ইজারাদারের অংশীদার উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম স্বীকার করেন। ভারতীয় গরুর বিষয়ে জানতে চাই তিনি বলেন, ‘যে কয়টা উঠেছে, সেগুলো খামারে লালন-পালন করা। এখন বিক্রি করছে, এর সংখ্যাও খুব কম।’
ভারতীয় গরু বেচাকেনার বিষয়টি জানা নেই বলে জানান থানার ওসি মইনুল ইসলাম। বিজিবির ২০ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, সব চোরাচালান বন্ধ। গরুগুলো আগের হতে পারে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।

ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ