সৌদির আইসিইউতে ৫ মাস, দেশে ফিরে চোখ মেললেন
Published: 2nd, June 2025 GMT
সাত বছর আগে সৌদি আরবে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন আবদুল জব্বার সরদার (৪৫)। বিনা বেতনে তিন বছর করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ। কোম্পানি হাওয়া হওয়ার পর ধরা দিলেও পুলিশ ছেড়ে দেয়। পরে এক বাংলাদেশির সহায়তায় টাইলস মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। ভালোই কাটছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় আবদুল জব্বারের সব এলোমলো হয়ে গেছে।
সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে পাঁচ মাস চিকিৎসার পর আরও সাত মাস ছিলেন সাধারণ শয্যায়। তাঁর মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়; মাথায় জমাট বাঁধে রক্ত। কিন্তু সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না। প্রায় এক বছর ১২ দিন পর স্ত্রীর চেষ্টায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে ফেরেন আবদুল জব্বার। সাত দিন ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে। কঙ্কালসার দেহ ছটফট করছে শয্যায়।
আবদুল জব্বার রাজশাহীর তানোরের হিরানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি সৌদি আরব যান। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর শয্যায় আবদুল জব্বারকে ছটফট করতে দেখা যায়। অনেকটা অচেতন, সারাশরীরে শুধু হাড় দেখা যায়। সেবা করছেন স্ত্রী আদুরী বেগম ও মেয়ে জলি আরা।
আদুরী বেগম সমকালকে বলেন, এ হাসপাতালে ১২ দিন আছেন। সাত দিন রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। এখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবদুল জব্বারের মেরুদণ্ড ও মাথায় জটিল অস্ত্রোপচার করতে হবে। সৌদি আরবের চিকিৎসকরা এটি করলে আমার স্বামী ভালো হয়ে যেত। তারা কোনো চিকিৎসা করেননি। কিছু খেতেও দেননি। তাই অপুষ্টিতে ভুগে আমার স্বামী কঙ্কাল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর টানা পাঁচ মাস আইসিইউতে অচেতন ছিল। পরের সাত মাস ছিল শয্যায়। তবে তারা চিকিৎসাও ঠিকমতো করেনি; খেতেও দিত না। অনেক চেষ্টার পর সরকারিভাবে অচেতন অবস্থায় দেশে এনেছি। হাসপাতালের আইসিইউ থেকে বের করার পর সে চোখ মেলে তাকিয়েছে।
গত ২৫ মে আবদুল জব্বারকে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে দেওয়া হয় সাধারণ শয্যায়। জব্বারের মেয়ে জলি আরা বলেন, বাবা এখনও কথা বলতে পারেন না। মাঝেমধ্যে চোখ মেলে তাকান। এখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন, মাথা ও মেরুদণ্ডে অপারেশন করতে হবে। তাহলে সুস্থ হবেন।
রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আবদুল জব্বার একেবারে কঙ্কাল হয়ে গেছেন। তাঁর শরীরে প্রচুর পুষ্টি দরকার। মাথায় একটি অস্ত্রোপচার লাগবে। এরপর জব্বারের জ্ঞান ফিরতে পারে। তাঁর গলার মধ্যে সৌদি আরবের আইসিইউতে ‘ট্রাকিওটমি টিউব’ দেওয়ায় কথা বলতে পারেন না। কয়েক দিনের মধ্যে এটি বের করা হবে। আশা করছি, তখন তিনি কথা বলতে পারবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র আইস ইউত
এছাড়াও পড়ুন:
আহতদের চিকিৎসা দিয়ে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসকরা
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে আহতদের বিশেষ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান শেষে দেশে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসক দল।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল এবং সফদরজং হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত চার সদস্যের দলটি ঢাকা ছেড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশনায় গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশে আসে এই চিকিৎসক দল।
গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে বহু মানুষ হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই ভারত বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
ঢাকায় অবস্থানকালে ভারতীয় চিকিৎসক দলটি জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে। তারা মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসায় কারিগরি পরামর্শ প্রদান করেন এবং জটিল কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত বিনিময় করেন।
ভারতীয় চিকিৎসকরা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গৃহীত চিকিৎসা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ইনস্টিটিউটের বার্ন কেয়ার ইউনিট ও ক্রিটিক্যাল কেস ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের দক্ষতার প্রশংসা করেন তারা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে ভারত আরো চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে ভারতীয় হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ দেওয়া হবে।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, দেশটির মেডিকেল টিমের এই সফর দুই দেশের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও সহানুভূতির চিরন্তন বন্ধনের প্রতিফল।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী