মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলীয়করণ, পারিবারিকীকরণ ও ব্যক্তিকরণের ফলে বিচ্যুতি-বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারিনি। তার মানে এই নয় যে, পাকিস্তান ভালো ছিল। ভোটারবিহীন ও রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন ও লুটপাটের মতো একটি অরাজক পরিস্থিতি থেকে জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশের মানুষ একটি পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল। নানান ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, তার মানে এই নয় আগে ভালো ছিলাম। ছাত্র-জনতার স্বপ্ন পূরণে তাই মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায় জাতীয় ঐক্য এখন সময়ের দাবি।

গত শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান স্মৃতি পরিষদের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ও আলোচকবৃন্দ এই মতামত ব্যক্ত করেন। ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবাসীদের দাবি দাওয়া আদায়ে সোচ্চার হোন’ স্লোগানে নিউইয়র্কের জামাইকার হিলসাইডের স্টার কাবাব’র হল রুমে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিরাজুল আলম খান ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান ও দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ছাত্রদের একার আন্দোলন ছিল না। ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছে কিন্তু আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল এই গণঅভ্যুত্থানে। জনগণের ধূমায়িত ক্ষোভ-অসন্তোষ কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবি, ৩২ নম্বরে হামলা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধকে লক্ষ্য করে যা কিছু ঘটেছে তা দুঃখজনক। যুদ্ধাপরাধকে আড়াল করতে ছাত্রদের ঘাড়ে পা রেখে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ফায়দা লুটছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্র মানে মনে করে ভোটতন্ত্র। তারা ভোটের মাধ্যমে নিজের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করতে চায়। আজকে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সিরাজুল আলম খান রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় সেই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব করেছিলেন ৪৫ বছর পূর্বে। ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উন্নীত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন সিরাজুল আলম খান। তার চিন্তা-দর্শন নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে, সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। 

অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন সিরাজুল আলম খান স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব শাহাব উদ্দীন। বক্তব্য রাখেন সিরাজুল আলম খান স্মৃতি পরিষদের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, লিগ্যাল কনসালটেন্ট মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, মুজাহিদ আনসারি, জামান তপন, নজরুল ইসলাম, প্রোগ্রেসিভ ফোরামের নেতা জাকির হোসেন বাচ্চু ,আবুল হোসেন, সৈয়দ জুয়েল প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, সিরাজুল আলম খানের জীবন-দর্শন, রাষ্ট্রচিন্তা, স্বাধীনতা সংগ্রামে অনবদ্য ভূমিকা ও নতুন প্রজন্মের কাছে সিরাজুল আলম খানকে পরিচয় করিয়ে দিতে তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২২ জুন বিকাল ৬টায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জ ল আলম খ ন ন উইয র ক ন স র জ ল আলম খ ন গণঅভ য ত থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 

শেখ হাসিনাকে দশবার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

বুধবার (৩০ জুলাই) রাত ৯টার দিকে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চন্দ্রামুখী সাবলেনের ওপর জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই সাভার, এই আশুলিয়া, এই বাইপাইলের পয়েন্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের ছাত্র-জনতা বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিল ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে। সাভার, আশুলিয়া গণঅভ্যুত্থানের সময় হটস্পট ছিল।”

আরো পড়ুন:

মানুষ পরিবর্তন চায়, এনসিপিকে চায়, নরসিংদীতে নাহিদ

নরসিংদীতে আজ এনসিপির পদযাত্রা 

“এক দিকে নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, অন্যদিকে সাভার আশুলিয়া; ওদিকে গাজীপুর টঙ্গী, আপনারা প্রতিরোধ তৈরি করেছিলেন বলেই ঢাকা সুরক্ষিত ছিল। ঢাকার মানুষ রাজপথে নামতে সাহস করেছিল,” বলেন তিনি।

গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে নাহিদ বলেন, “এই সাভার, আশুলিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা জানি, কী নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, গুলি চালানো হয়েছিল; আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, এখানে বক্তব্য রেখেছেন শহীদ সজলের মা। যাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল নির্মমভাবে।”

“ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা সারা বাংলাদেশে আমাদের ভাইদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিল, সেই শেখ হাসিনাকে দশবার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ আসলে কমবে না। বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিন ক্ষমা করবে না শেখ হাসিনাকে। কোনো দিন ক্ষমা করবে না আওয়ামী লীগকে। কোনো দিন ক্ষমা করবে না কোনো ধরনের রিফাইন আওয়ামী লীগকে,” বলেন তিনি।

ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে আগামীতে নেতৃত্ব তৈরি হবে বলে মন্তব্য করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই উপজেলাগুলো বৈষম্য এবং বঞ্চনার শিকার হয়েছে। আমরা মনে করি এই পাঁচটি উপজেলায় অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব।” 

তিনি বলেন, “শ্রমিক অঞ্চল রয়েছে এই সাভারেও। নানা কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন গড়ে তোলে। কারণ শ্রমিকদের নায্যমুজুরি দেওয়া হয় না। এই শ্রমিকরাই আমাদের গণঅভ্যুত্থানে শক্তি জুগিয়েছিল। রাজপথে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। শ্রমিকের নায্যমুজুরির জন্য লড়াই আমরা লড়াই করতে চাই।”

চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, “আমরা সাভার-আশুলিয়াসহ পুরো ঢাকা জেলাকে চাঁদামুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সন্ত্রাসমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”

জুলাই পদযাত্রার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, আমাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের পদযাত্রায় যে জনস্রোত নেমে এসেছে, সে জনস্রোতে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”

“আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়েছে, হামলা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা থেমে যাইনি, এই জনস্রোত থামানো যাইনি, পদযাত্রা থামানো যাইনি। ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশে, আগামীর ঢাকাতে এনসিপির দিকে এই জনস্রোত থামানো যাবে না,” যোগ করেন নাহিদ।

এনসিপির ঢাকা জেলার নেতা মেহরাব সিফাতের সভাপতিত্বে দলের মুখ্য সংগঠক নাসীরউদ্দিন পাটোয়ারী, ডা. তাসনীম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

সন্ধ্যা ৬টায় পথসভা শুরুর কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থলে আসেন রাত ৯টার দিকে। সন্ধ্যা থেকেই নেতাকর্মীরা সভাস্থলে যোগ দিতে থাকেন। সভা শুরুর পর অন্তত দুই শতাধিক নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। এ সময় সভাস্থলের আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য, এপিবিএন ও র‍্যাব সদস্যদের দেখা যায়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া এনসিপির শীর্ষ নেতারা ৬৪ জেলায় জুলাই পদযাত্রা করে তাদের দলের প্রতিশ্রুতি দেশবাসীকে শুনিয়েছেন। বুধবার ঢাকার সাভারে কর্মসূচি করার আগে তারা নরসিংদীতে পদযাত্রা করেন। একটানা দেশের সব জেলায় একটি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই ধরনের পদযাত্রা কর্মসূচির নজির আর নেই।

ঢাকা/সাব্বির/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 
  • নিউইয়র্কের রাস্তায় নীল সোনম কাপুর
  • ভুল এলিভেটর, যাকে খুশি গুলি, যেন কোনো শুটিং গেম
  • যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তাহলে কি ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠছে
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • নিউ ইয়র্কে গুলিতে নিহত রতনের কুলাউড়ার বাড়িতে শোকের ছায়া 
  • নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দিদারুলের কুলাউড়ার বাড়িতে শোকের ছায়া
  • তিনি ছিলেন আমাদের গর্ব—নিহত দিদারুলকে নিয়ে বললেন নিউইয়র্কের মেয়র
  • নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বন্দুকধারীর গুলিতে পুলিশসহ নিহত ৫
  • উগান্ডায় মামদানির বিয়ের অনুষ্ঠানে জমকালো আয়োজন, ছিল মুখোশধারী নিরাপত্তারক্ষী