ইশরাককে শপথ না পড়ালে নগর ভবনের তালা খুলবেন না আন্দোলনকারীরা
Published: 2nd, June 2025 GMT
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনে চলছে টানা অবস্থান কর্মসূচি। ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ইশরাকের সমর্থকদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরাও আন্দোলন করছেন। তারা নগর ভবনের মূল ফটক ও সব বিভাগের অফিস গেটে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগর ভবনের ভেতরের ফটকে অবস্থান নিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। তারা ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে নানা স্লোগান দেন। দুপুরের দিকে নগর ভবনের মূল ফটক ও ভেতরের অংশে ভিড় জমে যায়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কী কারণে মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ পড়ানো আটকে আছে— তা আমাদের জানা নেই। ইশরাক হোসেনের শপথ ছাড়া নগরভবনের তালা খোলা হবে না। জনগণের মেয়র ইশরাক, প্রতিটি নগরবাসী ইশরাককে মেয়র হিসেবে চায়। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নগর ভবনের সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষকদলের আহ্বায়ক মো.
ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে ১৪ মে থেকে টানা ২০ দিন ধরে আন্দোলনে নগর ভবনের সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। করপোরেশনের কর্মকর্তারা অঘোষিত ছুটিতে আছেন।
সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অভিযোগ করেন, ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করতে না দিয়ে সংবিধান ভঙ্গ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের দায়িত্বরত সচিব বা যে উপদেষ্টারা আছেন, তারা সংবিধান ভঙ্গ করেছেন। আর্টিকেল ১১৮ এর অনুচ্ছেদ ৪ এ সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে এবং নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর্টিকেল ১২৬ এ বলা হয়েছে, নির্বাহীরা নির্বাচন কমিশনকে সকল কাজে সহযোগিতা করবে। এক্ষেত্রে আমরা দেখলাম এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে। আর এ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে বিধায় শপথ গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ইশর ক হ স ন নগর ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।