ঢাকা থেকে অপহরণের পর নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে উদ্ধার হওয়া নারীটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তিনি একটি বিউটি পারলারের কর্মী। গত ২৮ মে ঢাকার একটি জায়গা থেকে ভাড়ার মোটরসাইকেলে চড়ে আরেক জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পর তাঁকে অচেতন করে নরসিংদীতে নেওয়া হয়। ওই নারীকে নরসিংদীর ঘোড়াশালের একটি সেতুর কাছে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। তাঁর স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকাও আদায় করে অপরাধী চক্র।

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে মো.

শাহ পরান (৩০) নামের ওই মোটরসাইকেলচালককে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল রোববার শাহ পরান এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে নরসিংদীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবাবন্দি দিয়েছেন বলে নরসিংদীর পুলিশ জানিয়েছে।

২৮ মে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ঢাকা থেকে অপহরণের সাত ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘোড়াশাল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান, বেলা তিনটার দিকে তাঁর ভাগনিকে ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে তাঁর কাছে টাকা চাচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাঠিয়েছেন। ওই ব্যক্তি তাঁর ভাগনিকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর নরসিংদীর পলাশ থানার পুলিশ ঘোড়াশাল কালভার্ট ব্রিজের কাছ থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।

নরসিংদী জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অপহৃত নারীকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। পরে ওই নারী বাদী হয়ে পলাশ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা নরসিংদী জেলা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নরসিংদীর পুলিশ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত শাহ পরানের অবস্থান নিশ্চিত হয় এবং শনিবার রাতে কেরানীগঞ্জের বটতলীর দক্ষিণপাড়া থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসবাদে শাহ পরান অপহরণ ও ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল আদালতে জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে শাহ পরান পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, সৌদি আরবে থাকার পর সম্প্রতি তিনি দেশে ফেরেন এবং রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল চালাতেন। তাঁর বাড়ি কেরানীগঞ্জের দক্ষিণপাড়ায়। সেখানে তাঁর দুই স্ত্রী থাকেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীটির ভাষ্য অনুযায়ী শাহ পরান তাঁকে ধর্ষণ করেন এবং শাহ পরানের দুই সহযোগী ওই নারীর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান।

পলাশ থানায় ওই নারীর করা মামলায় বলা হয়, ২৮ মে বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর থেকে তিনি চিকিৎসক দেখানোর জন্য রাইড শেয়ারিংয়ের একটি মোটরসাইকেলে নগরীর শ্যামলীর উদ্দেশে রওনা দেন। মিরপুর ১০ নম্বর পার হওয়ার পর তিনি কিছু মনে করতে পারছিলেন না। ওই দিন রাত ৯টার দিকে ঘোড়াশালের কালভার্ট ব্রিজে পৌঁছানোর পর তিনি স্বাভাবিক হন এবং দেখতে পান মোটরসাইকেলের চালক তাঁকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে ধাক্কা মেরে রাস্তার নিচে ফেলে দেন। এ সময় মোটরসাইকেলচালকের অপর দুই বন্ধু আরেকটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলের চালক তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ সময় তাঁর দুই বন্ধু ওই নারীর মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে থাকা তিন হাজার টাকা তাঁদের নম্বরে স্থানান্তর করে মোটরসাইকেল করে চলে যান।

শাহ পরানের দুই বন্ধুকে খোঁজা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ কর মকর ত ওই ন র ক শ হ পর ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি

‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।

গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।

সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।

তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।

বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।

পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।

সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি
  • টানা ২৬ বছর কারাভোগ, ৬০ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে ‘শিবির’ নাছির