রাজধানী ঢাকায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও আকাশ মেঘলা, কোথাও ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও ঝরছে। গতকাল সোমবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এর মধ্যে বেশি বৃষ্টি হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ চট্টগ্রাম অঞ্চলে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, মৌসুমি বায়ু এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণেই এত বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আজ বৃষ্টি আগের চেয়ে কমে আসতে পারে। আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির পরিমাণ আরও কমে যেতে পারে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়টায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৬৬ মিলিমিটার, টেকনাফে ৮৭ মিলিমিটার।

বৃষ্টি হয়েছে উত্তরের বিভিন্ন জনপদেও। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬৫ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ৫৪ মিলিমিটার ও রংপুরে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা খাতুন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু যেহেতু সক্রিয়, তাই আজও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। তবে রাজধানীতে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। আগামীকাল থেকে বৃষ্টি একটু কমে আসতে পারে। এরপর কয়েক দিন শুকনা থাকতে পারে।

তবে একটি বিষয় আবহাওয়াবিদেরা বলছেন যে এখন যেহেতু মৌসুমি বায়ু দেশময় ছড়িয়ে গেছে, তাই বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে কোনো কোনো স্থানে।

গত মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। এপ্রিলের পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তপ্ত মাস মে। সেই মাস বৃষ্টিতে ভিজেছে পুরো দেশ।

দেশে এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত সাত দিন আগে ২৪ মে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। নিম্নচাপের প্রভাব কমে যাওয়ার পর থেকে বৃষ্টির কারণ হলো, মৌসুমি বায়ুর অধিক সক্রিয়তা। এটিই এখন পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল জুন মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। সে অনুযায়ী, এ মাসের মাঝামাঝি একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু এর প্রভাব বাংলাদেশের দিকে কতটা পড়বে, তা অনিশ্চিত এখনো। কারণ, এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, নিম্নচাপের বড় প্রভাব না-ও পড়তে পারে। আর তা যদি না পড়ে, তবে বৃষ্টি বেশি না-ও হতে পারে। এ মাসে আবার এক বা দুটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবার বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে স্বল্পমেয়াদে বন্যা হতে পারে। এ মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা

বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।

এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।

যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ