কোরবানির ঈদের জন্য (পবিত্র ঈদুল আজহা) জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে চলমান কর্মসূচিতে কিছুটা শিথিল ও বিরতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ছুটির (ঈদের ছুটি) পরে সরকারের পক্ষ থেকে শপথের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা না এলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে চলমান কর্মসূচিতে এসে এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন। বিগত দুই সপ্তাহ নগর ভবন তাঁদের নিয়ন্ত্রণে ছিল উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘শপথ যদি না করায়, তাহলে চেয়ারে গিয়ে বসতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না। ঢাকা শহরের জনগণ আমাকে বারবার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমি শহীদ মিনারে গিয়ে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শপথ পড়ে দায়িত্ব গ্রহণ আমি নিজেই কেন নিচ্ছি না। তখন বলেছি, যেহেতু আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী, আমরা চাই না কোনো ধরনের বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক।'

বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এই সরকারকে এখন বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আপনারা যদি শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা না করেন, তাহলে ঢাকা দক্ষিণের ভোটারদের সঙ্গে করে আমি নিজেই শপথ নিয়ে আমি আমার চেয়ার দখল করব। নগর ভবন কীভাবে চলবে সেটা ঢাকাবাসী নির্ধারণ করবে। বহিরাগত কোনো উপদেষ্টা বা প্রশাসককে দিয়ে নগর ভবন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের শেষ কথা, এটাই আমাদের শেষ বার্তা।'

আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের পদ ফিরে পাওয়ার পর শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রতিবাদে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। পরদিন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও যুক্ত হন। ওই দিন নগর ভবনের মূল ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আজ ইশরাক হোসেন বলেন, ‘সামনে যেহেতু ঈদ। জনভোগান্তির কথা সামনে রেখে নগর ভবন অবরোধ বা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি, সেটিতে কিছুটা শিথিল ও বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে ছুটির পরে যখনই শপথের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না আসে, আমরা তখন ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’

সিটি করপোরেশনকে স্থবির করে ফেলার মাধ্যমে যে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে, এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, এর দায় পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের ওপর বর্তায়। তাঁরা শপথের আয়োজন না করে সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত অবমাননা করেছেন।

নগর ভবনে কোনো ‘বহিরাগত’ উপদেষ্টা ও প্রশাসককে ঢুকতে দেওয়া হবে না—এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ইশরাক বলেন, এটা তাঁদের সিদ্ধান্ত। সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, ‘জনগণের ভোটে ও আদালতের রায়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে বহাল রয়েছে। অতএব যা কিছু করতে হবে, আমাদের অনুমতি নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা প্রশাসক বসাব। যত দিন না পর্যন্ত আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তত দিন আইনিভাবে সর্বোচ্চ অধিকার আমাদের কাছেই রয়েছে।'

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ব নগর ভবন আম দ র করপ র ভবন র ব এনপ সরক র শপথ র

এছাড়াও পড়ুন:

দাসত্বের সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি: শিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিম যে দাসত্বের সংস্কৃতি চালু করেছিল আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলীয় লেজুরবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

বুধবার (৩০ জুলাই) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১, সেমিস্টার-১ এ ভর্তিকৃত নবীণ শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “জুলাই ২৪ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করেছি। গত ১৭ বছর আমরা আমাদের নাগরিকত্ব সপে দিয়েছিলাম একটি ফ্যাসিবাদ সরকারের কাছে। যারা পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে দাসত্বের চুক্তি করেছিল। আমরা কখনো ভাবিনি এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।” 

আরো পড়ুন:

কৃষি উপদেষ্টা-চীনা রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎ 

আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে জিবুতির সমর্থন চাইল বাংলাদেশ

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “খুন, আয়নাঘর, বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে চলছিল এই বাংলাদেশ। এর থেকে পরিত্রাণ তোমরাই দিয়েছো। ছাত্র-জনতার এই অর্জনকে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না।”

‍“নতুন বাংলাদেশে তোমরা নিজেদেরকে আপন স্বকীয়তায় উপস্থাপন করবে, রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে তা তোমরা নির্ধারন করবে। তোমাদের ধৈর্যশীল ও রুচিশীলতার পাশাপাশি উন্নত মনের বিবেকবান ও সুন্দর মনের মানুষের পরিচয় দিতে হবে”, যোগ করেন তিনি। 

উপদেষ্টা বলেন, “পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ করতে হবে। সহনশীলতা ও সহমর্মিতার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সহশিক্ষার কার্যক্রমে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পরাদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে হবে।”

ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “নবীন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করে মেলে ধরবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল নলেজ বাড়ানোর জন্য বিশ্ব আঙ্গিকে লাইব্রেরিকে উপযুক্ত করতে হবে, যা গবেষণার কাজকে আরো ত্বরান্বিত করবে।”

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন, প্রক্টর প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, রেজিস্ট্রার (অ.দা) প্রফেসর ড. মো. আসাদ-উদ-দৌলা।

ঢাকা/নূর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ