মুঠোফোন বা মোবাইল ফোন বর্তমানে জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধনী, গরিব ও বিত্তবান ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দিনমজুর—প্রায় সবার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এখন মুঠোফোন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ পরিবারের কাছে কমপক্ষে একটি মুঠোফোন রয়েছে। আর ষষ্ঠ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে সিম ব্যবহৃত হচ্ছে ১৯ কোটির বেশি। পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং, ব্যবসা কিংবা পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেই হোক আর নতুন কিছু খুঁজতেই হোক, সবকিছুই এখন মুঠোফোনে।

মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের খরচের একটি বড় অংশ যায় রিচার্জে। কলরেট বা ইন্টারনেট খরচ মেটাতে ব্যবহারকারীরা দৈনিক বা মাসিক হিসেবে রিচার্জ করে থাকেন। ডিজিটালবান্ধব হয়ে ওঠার দৌড়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মোবাইল খরচ, যা নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের তুলনায় তাঁদের মোবাইল খরচ এখন অনেকাংশেই বেড়েছে। ফলে তাঁদের নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। যেহেতু তাঁদের পড়াশোনার জন্য এখন সব সময় সংযুক্ত থাকতে হচ্ছে ইন্টারনেটের সঙ্গে।

মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্রাহকের টাকার একটি বড় অংশ চলে যায় রাষ্ট্রের কোষাগারে, যার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহককে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘ভিওন লিমিটেড নামক একটি গ্রুপের আওতায় আরও পাঁচটি দেশে কাজ করছে বাংলালিংক। বাকি দেশগুলোয় কিন্তু বাংলাদেশের মতো এত বেশি কর দিতে হয় না। কর দিতেই এত টাকা চলে যাওয়ার কারণে আমরা নতুন কোনো উদ্ভাবন নিয়ে আসতে পারছি না। ফলে আমাদের সেবার মান কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আমরা গ্রাহকদের খরচ কম করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

তাইমুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা ২০ বছর ধরে কাজ করছি। বাংলালিংকের রয়েছে প্রায় চার কোটি সাবস্ক্রাইবার। এরপরও আমরা সে হিসেবে লাভবান হয়ে উঠতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারকে শুরু থেকেই অনুরোধ করে আসছি।’

দেশে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, তাদের একজন ব্যবহারকারী যদি মোবাইল রিচার্জে ১০০ টাকা খরচ করেন, তবে ৫০ টাকাই চলে যায় সরকারের কোষাগারে, যার মধ্যে শুধু ভ্যাট দিতে হয় প্রায় ১৩ টাকা, সম্পূরক শুল্ক প্রায় ১৪ টাকা ও সারচার্জ শূন্য দশমিক ৭২ টাকা। এ ছাড়া রেভিনিউ শেয়ারিং ও এসওএফ সাড়ে চার টাকার বেশি এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর রয়েছে প্রায় ১৭ টাকা। সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার আমদানির সময় সরকারকে অনেক ধরনের কর দিতে হয়, যা পরবর্তী সময়ে ভোক্তাদেরই বহন করতে হয়।

তবে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলোয় ভোক্তাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এত টাকা দিতে হয় না। প্রতি ১০০ টাকায় থাইল্যান্ডের ভোক্তারা দেন ২০ টাকা, সিঙ্গাপুরে ১৭ টাকা আর পাশের দেশ ভারতের ভোক্তারা দেন প্রতি ১০০ টাকায় ১৮ টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোনের কলরেট আর ইন্টারনেট শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে সরব প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর। তিনি মনে করেন, এই খাতের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে বিপরীত।

ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখনো বাংলাদেশের মোবাইল ডেটা খরচের ওপরে প্রায় ২০ শতাংশের মতো সম্পূরক শুল্ক আছে। ঠিক যেমন সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক আছে। সিগারেটের ওপর এই শুল্ক থাকার কারণ, সিগারেট গ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হয়। কিন্তু ইন্টারনেট তো আসলে এখন এমন কোনো বিষয় নয়, যা নিরুৎসাহিত করা উচিত।’

দেশে মোবাইল ফোন সেবাদানকারীদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ’। সংগঠনটির সদস্য গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও টেলিটক। এই চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু টেলিটক রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এই সংগঠনটির মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.

) মোহাম্মদ জুলফিকার জানান, গ্রাহকের রিচার্জের অধিকাংশ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাওয়ায় তাঁরা গ্রাহককে তেমন সাশ্রয়ী সেবা দিতে পারছেন না।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘আমরা খুব সুসংগঠিতভাবে উপস্থাপন করে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে কর যা ধার্য করা হয়েছে, তা অনেক বেশি অসহনীয়। সরকার যদি এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখে, তাহলে হয়তো আমাদের জন্য এবং একই সঙ্গে জনগণের জন্য বেশ ভালো হয়।’

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় মুঠোফোন এখন বিলাসবহুল কোনো পণ্য নয়। জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলে জোর দাবি উঠেছে, ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণার। এমন পটভূমিতে সম্পূরক শুল্কমুক্তিসহ অন্যান্য কর ও শুল্ক ন্যূনতম করার দাবি উঠেছে গ্রাহক, ব্যবসায়ীসহ সব মহলে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র হক র ওপর সরক র ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

কারাগারে সুব্রত বাইন

রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সুব্রত বাইনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই রিয়াদ আহমেদ ৮ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। সুব্রত বাইনের পক্ষে তার আইনজীবী বাদল মিয়া জামিন চেয়ে আবেদন শুনানি।

শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ২৮ মে তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ওইদিন আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এম এ এস শরীফের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে এ তিন জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২৭ মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।পরবর্তী সময়ে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী শ্যুটার আরাফাত ও শরীফকে।

অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৮ মে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়। 

ঢাকা/এম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ