কোরবানির ঈদের জন্য জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে চলমান কর্মসূচিতে কিছুটা শিথিল ও বিরতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

তিনি বলেন, “ছুটির (ঈদের ছুটি) পরে সরকারের পক্ষ থেকে শপথের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা না এলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।”

মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে চলমান কর্মসূচিতে এসে এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন। বিগত দুই সপ্তাহ নগর ভবন তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, “শপথ যদি না করায়, তাহলে চেয়ারে গিয়ে বসতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না। ঢাকা শহরের জনগণ আমাকে বারবার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমি শহীদ মিনারে গিয়ে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শপথ পড়ে দায়িত্ব গ্রহণ আমি নিজেই কেন নিচ্ছি না। তখন বলেছি, যেহেতু আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী, আমরা চাই না কোনো ধরনের বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক।”

আরো পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন
নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটি কারণও নেই

বাজেটের আকার আরো ছোট হওয়া উচিত ছিল: আমির খসরু

বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, “এই সরকারকে এখন বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আপনারা যদি শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা না করেন, তাহলে ঢাকা দক্ষিণের ভোটারদের সঙ্গে করে আমি নিজেই শপথ নিয়ে আমি আমার চেয়ার দখল করব। নগর ভবন কীভাবে চলবে সেটা ঢাকাবাসী নির্ধারণ করবে। বহিরাগত কোনো উপদেষ্টা বা প্রশাসককে দিয়ে নগর ভবন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের শেষ কথা, এটাই আমাদের শেষ বার্তা।”

আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের পদ ফিরে পাওয়ার পর শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রতিবাদে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। পরদিন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও যুক্ত হন। ওই দিন নগর ভবনের মূল ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, “সামনে যেহেতু ঈদ। জনভোগান্তির কথা সামনে রেখে নগর ভবন অবরোধ বা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি, সেটিতে কিছুটা শিথিল ও বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে ছুটির পরে যখনই শপথের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না আসে, আমরা তখন ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।”

সিটি করপোরেশনকে স্থবির করে ফেলার মাধ্যমে যে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে, এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, “এর দায় পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের ওপর বর্তায়। তারা শপথের আয়োজন না করে সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত অবমাননা করেছেন।”

নগর ভবনে কোনো ‘বহিরাগত’ উপদেষ্টা ও প্রশাসককে ঢুকতে দেওয়া হবে না-এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ইশরাক বলেন, “এটা তাদের সিদ্ধান্ত। সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।”

বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, “জনগণের ভোটে ও আদালতের রায়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে বহাল রয়েছে। অতএব যা কিছু করতে হবে, আমাদের অনুমতি নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা প্রশাসক বসাব। যত দিন না পর্যন্ত আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তত দিন আইনিভাবে সর্বোচ্চ অধিকার আমাদের কাছেই রয়েছে।”

ঢাকা/এএএম/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ইশর ক হ স ন ব নগর ভবন আম দ র র র জন শপথ র ভবন র ব এনপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার এখনই সময়’

‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’-এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বাংলাদেশ সরকারের এই স্লোগান যেন প্লাস্টিক দূষণের বাস্তবতা। প্রতিদিন হাজার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্যে সয়লাব হয়ে পড়ছে শহর-বন্দর, নদী-নালা ও সমুদ্র উপকূল। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের দৈনন্দিন দুর্ভোগ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। বাকি প্রায় ৫ লাখ টন বর্জ্য থেকে যাচ্ছে প্রকৃতিতে, যা শত বছরেও নষ্ট হয় না। এই দীর্ঘস্থায়ী দূষণ মাটি, পানি ও বায়ুর সঙ্গে মিশে ইকোসিস্টেম ধ্বংস করছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

প্লাস্টিক বর্জ্যের বড় অংশজুড়ে রয়েছে একবার ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল, পলিথিন, প্রসাধনী ও ঘরোয়া সামগ্রী।এগুলো নর্দমা ও ল্যান্ডফিলে গিয়ে বর্ষার পানিতে বাধা সৃষ্টি করে শহরে জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।বর্ষা মৌসুমে ঢাকা শহরে বৃষ্টি হলেই যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় সেটা এসব প্লাস্টিকের কারণেই হয় বলে মনে করেন অনেকে।

আরো পড়ুন:

কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে দাম দিতে হবে : উপদেষ্টা  

কিশোরগঞ্জে পানি উঠছে না নলকূপে, খাবার পানির তীব্র সংকট

দেশের প্রধান তিন নদী-পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় প্রতিদিন পড়ছে প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক ও পলিথিন। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) জানায়, দেশের নদীগুলোর পানিতে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৩৪৫ টন প্লাস্টিক গিয়ে পড়ে, যা সরাসরি বঙ্গোপসাগরে জমা হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে প্লাস্টিকের স্তর তৈরি হচ্ছে, মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী, ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণিবৈচিত্র্য।

ঢাকায় প্লাস্টিক দূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশের মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ৩০ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয় রাজধানীতে। প্রতিদিন গড়ে ৬৮১ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার ৮০ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য। মাথাপিছু বছরে যেখানে গড়ে ৯ কেজি বর্জ্য উৎপন্ন হয়, ঢাকায় তা দ্বিগুণ-১৮ কেজি। নগর ব্যবস্থাপনার জন্য একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্লাস্টিক ব্যবহারকারী শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণের বেশি। ২০১৫ সালের গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের শহরগুলোতে প্রতিদিনের বর্জ্য ৫০ হাজার টনে পৌঁছাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিনের প্যাকেটসহ সিঙ্গেল ইউজ প্রোডাক্টের কারণে শহর ব্যবস্থাপনায় ধস নেমেছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য নর্দমা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নে কংক্রিটের নিচে মাটি হারিয়ে ফেলায় পানির প্রাকৃতিক শোষণও হচ্ছে না। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যে আটকে থাকা ড্রেন ও খালে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দরিদ্র ও বস্তিবাসী মানুষ।

রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “পরিবেশ দূষণের জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিন অন্যতম দায়ী।বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, প্যাকেট ও পলিথিন সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। গত তিন মাসে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১০৮ কিলোমিটর খাল পরিষ্কার করা হয়েছে যার অধিকাংশই প্লাস্টিকে ভরপুর ছিল। সোর্স থেকে প্লাস্টিক না কমালে শুধু পরিষ্কার করে কোন লাভ হচ্ছে না।”

এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ দূষণ রোধ করতে সব সরকারি অফিসে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন।কিন্তু সার্বিকভাবে প্লাস্টিক দূষণের ফলে পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে মুক্ত করতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই, বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি জনসচেতনতা ও সরকারি নজরদারি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ