শপথের ব্যবস্থা না করলে নিজেই শপথ নিয়ে চেয়ার দখল করব: ইশরাক
Published: 3rd, June 2025 GMT
কোরবানির ঈদের জন্য জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে চলমান কর্মসূচিতে কিছুটা শিথিল ও বিরতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
তিনি বলেন, “ছুটির (ঈদের ছুটি) পরে সরকারের পক্ষ থেকে শপথের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা না এলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।”
মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে চলমান কর্মসূচিতে এসে এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন। বিগত দুই সপ্তাহ নগর ভবন তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, “শপথ যদি না করায়, তাহলে চেয়ারে গিয়ে বসতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না। ঢাকা শহরের জনগণ আমাকে বারবার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমি শহীদ মিনারে গিয়ে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শপথ পড়ে দায়িত্ব গ্রহণ আমি নিজেই কেন নিচ্ছি না। তখন বলেছি, যেহেতু আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী, আমরা চাই না কোনো ধরনের বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক।”
আরো পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন
নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটি কারণও নেই
বাজেটের আকার আরো ছোট হওয়া উচিত ছিল: আমির খসরু
বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, “এই সরকারকে এখন বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আপনারা যদি শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা না করেন, তাহলে ঢাকা দক্ষিণের ভোটারদের সঙ্গে করে আমি নিজেই শপথ নিয়ে আমি আমার চেয়ার দখল করব। নগর ভবন কীভাবে চলবে সেটা ঢাকাবাসী নির্ধারণ করবে। বহিরাগত কোনো উপদেষ্টা বা প্রশাসককে দিয়ে নগর ভবন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের শেষ কথা, এটাই আমাদের শেষ বার্তা।”
আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের পদ ফিরে পাওয়ার পর শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রতিবাদে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। পরদিন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও যুক্ত হন। ওই দিন নগর ভবনের মূল ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, “সামনে যেহেতু ঈদ। জনভোগান্তির কথা সামনে রেখে নগর ভবন অবরোধ বা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি, সেটিতে কিছুটা শিথিল ও বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে ছুটির পরে যখনই শপথের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না আসে, আমরা তখন ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।”
সিটি করপোরেশনকে স্থবির করে ফেলার মাধ্যমে যে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে, এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, “এর দায় পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের ওপর বর্তায়। তারা শপথের আয়োজন না করে সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত অবমাননা করেছেন।”
নগর ভবনে কোনো ‘বহিরাগত’ উপদেষ্টা ও প্রশাসককে ঢুকতে দেওয়া হবে না-এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ইশরাক বলেন, “এটা তাদের সিদ্ধান্ত। সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।”
বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, “জনগণের ভোটে ও আদালতের রায়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে বহাল রয়েছে। অতএব যা কিছু করতে হবে, আমাদের অনুমতি নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা প্রশাসক বসাব। যত দিন না পর্যন্ত আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তত দিন আইনিভাবে সর্বোচ্চ অধিকার আমাদের কাছেই রয়েছে।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ইশর ক হ স ন ব নগর ভবন আম দ র র র জন শপথ র ভবন র ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প
ফেনী জেলার তিনটি নদীর ভাঙন ও বন্যার স্থায়ী সমাধানে প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রকল্পের খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পরিচালক তপন কান্তি মজুমদার।
‘মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক এ প্রকল্পে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে ১২৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, নদী খনন, রেগুলেটর, বাঁধ, সেতু, ফ্লাড বাইপাস এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হওয়ার আগে এর অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে নদীতীর বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণে। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। প্রকল্পের ওপর বিস্তারিত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান, ফেনী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব যতন মারমা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের সুপার হাসান মাহমুদ। সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প সফল করতে অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম প্রকল্পটিকে মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফেনী জেলার দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে মাইলফলক সৃষ্টি হবে।
সভায় বিএনপি, জেএসডি, এবি পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন এবং সর্বসম্মতভাবে প্রকল্পটির দ্রুত একনেক অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
এতে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপসচিব) ও ফেনী পৌর প্রশাসন গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সাবেক সাংসদ রেহানা আক্তার রানু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না।
বিএনপি নেতা ভিপি জয়নাল বলেন, সবার উদ্যোগে সম্মিলিত প্রয়াসে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফেনীবাসীর কল্যাণে সবাইকে একাত্ম হতে হবে। একনেকে পাস করতে এই ইউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকতে হবে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘প্রশাসন বলতে আমলাতান্ত্রিক সীমাবদ্ধতাকে জানি। প্রশাসনকে গণমুখী করেছে এই সভা। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই সভার প্রতিফলন হচ্ছে।’
মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু), জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহগ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, সদস্য মশিউর রহমান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন, বিএনপির জেলা সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, এনসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুর রহমান প্রমুখ।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে অন্তত ২০০টি ভাঙন হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় প্রাণ গেছে ২৯ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এবং ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাইতেও ৪২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ২৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।