ট্রাম্পের শুল্কে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতি হওয়ার পূর্বাভাস
Published: 4th, June 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের জেরে এ বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতির হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে শীর্ষস্থানীয় একটি আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারক গ্রুপ। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি এখন ‘সাধারণ’ ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে, যা আগের ৩ দশমিক ১ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়ে কম।
গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওইসিডি এ হ্রাসের জন্য ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ বাণিজ্য বাধা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছে। তারা সতর্ক করে বলছে, এর প্রভাবে প্রায় কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বজুড়ে দুর্বল অর্থনৈতিক অগ্রগতি অনুভূত হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে একটি বড় সংখ্যক দেশকে শুল্ক আরোপের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন। কিন্তু তাঁর এ অপ্রত্যাশিত পদ্ধতি ব্যাপক অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে।
ওইসিডির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলভারো পেরেইরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রায় সবার জন্যই মূলত অবনতির পূর্বাভাস দিচ্ছি। অতীতে আমাদের পূর্বাভাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান অনেক কম হবে।’ গ্রুপটি এ বছর মার্কিন অর্থনীতির পূর্বাভাস ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে। সেই সঙ্গে ২০২৬ সালে আবারও প্রবৃদ্ধি ধীরগতির হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
ওইসিডি সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকিতে আছে। ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় বারবার অঙ্গীকার করেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে মূল্যস্ফীতি কমবে। গতকাল মঙ্গলবার ওইসিডি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘শুল্কের কারণে আমাদের অর্থনীতি ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে!’ তবে মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মার্কিন অর্থনীতি বার্ষিক দশমিক ২ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছে, যা ২০২২ সালের পর প্রথম সংকোচন।
অন্যদিকে, ওইসিডি এ বছর যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা মার্চ মাসে পূর্বাভাস দেওয়া ১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ করেছে। এটি আরও পূর্বাভাস দেয়, ২০২৬ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ১ শতাংশ বাড়বে, যা কয়েক মাস আগে তারা ১ দশমিক ২ শতাংশ বলেছিল। অন্যান্য দেশের মতো ওইসিডিও বলছে, ‘বাণিজ্য উত্তেজনা’ ও ‘অনিশ্চয়তা বাড়ার কারণে’ যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। কিন্তু গ্রুপটি বলছে, ব্রিটেন নিজস্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
গত মার্চে যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসকে তাঁর স্ব-আরোপিত রাজস্ব নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন পাউন্ডের কল্যাণমুখী কার্যক্রম কর্তন করে ১৪ বিলিয়ন পাউন্ডের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। আগামী সপ্তাহে রিভস তাঁর ব্যয় পর্যালোচনা উপস্থাপন করবেন, যেখানে তিনি বিভাগীয় বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হবেন বলে শঙ্কা রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষায় বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মার্কিন শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি
এএফপি জানায়, মার্কিন শেয়ারবাজার সপ্তাহের হতাশাজনক সূচনা পেছনে ফেলে গত সোমবার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে দিন শেষ করেছে। বিনিয়োগকারীরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক হুমকি থেকে সৃষ্ট নতুন বাণিজ্য অনিশ্চয়তাকে উপেক্ষা করেছেন। এর আগে শুক্রবার ট্রাম্প স্টিলের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার হুমকি দিলে আর্থিক বাজারে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে সোমবার বাজারের অগ্রগতি হয় এবং ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি প্রধান সূচকই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে দিন শেষ করে। এডওয়ার্ড জোন্সের বাজার বিশ্লেষক অ্যাঞ্জেলো কুরকাফাস বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এনভিদিয়া আয়ের কারণে বাজারের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র প রব দ ধ ১ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।