পানির নিচে বিস্ফোরক রেখে কার্চ সেতুতে হামলা চালানোর দাবি ইউক্রেনের
Published: 4th, June 2025 GMT
পানির নিচে বিস্ফোরক ব্যবহার করে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন কার্চ সেতুতে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ) বলছে, ‘কয়েক মাস’ ধরে প্রস্তুতির পর গতকাল মঙ্গলবার সেতুটিকে নিশানা করেছে তারা।
এসবিইউ আরও বলেছে, তারা ক্রিমিয়া সেতুর ভিত্তি স্তম্ভগুলোর নিচের অংশে প্রায় ১ হাজার ১০০ কেজি টিএনটির সমপরিমাণ শক্তির বিস্ফোরক স্থাপন করেছিল। এতে সেতুর ভিত্তির নিচের দিকের অংশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
‘প্রথম ধাপে বিস্ফোরক বিস্ফোরিত’ করার ঘটনায় কোনো বেসামরিক প্রাণহানি হয়নি বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
তবে এসবিইউ যে তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে, সেগুলো তাৎক্ষণিক ও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ইউক্রেনের কাছে সেতুটি রুশ দখলদারির এক ঘৃণ্য প্রতীক। মস্কো খুব সতর্কতার সঙ্গে এটিকে পাহারায় রাখে। পানির নিচে ড্রোন রেখে হোক বা বিস্ফোরক দিয়ে হোক— সেতুতে কোনো হামলা হলে তা ইউক্রেনের জন্য এক বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়।রুশ সংবাদমাধ্যম শুরুতে বলেছিল, সেতুটি সাময়িকভাবে যান চলাচলের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল। স্থানীয় সময় সকাল ১০টার মধ্যে সেতুটি আবার খুলে দেওয়া হয়। তবে পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুটি আবারও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য আজ বুধবার সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেতুর আশপাশে আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে।
রাশিয়ার সরকারি যে টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে সেতুর কার্যক্রম–সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে, সেখানে বলা হয়, ‘সেতুর ওপরে এবং তত্ত্বাবধানের এলাকায় যাঁরা আছেন, তাঁদের শান্ত থাকার এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানার অনুরোধ করা হচ্ছে।’
এ হামলার বিষয়ে রাশিয়া এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কিছু রুশ সামরিক ব্লগার ধারণা করছেন, বিস্ফোরক নয়, বরং পানির নিচে ড্রোন স্থাপন করে সেতুর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আঘাত করা হয়েছে।
এসবিইউ বলছে, তাদের পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভাসিল মালইউক ব্যক্তিগতভাবে এ অভিযানের তদারকি ও পরিকল্পনার কাজটি সমন্বয় করেছেন।
মালইউককে উদ্ধৃত করে এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলা হয়, ইউক্রেন ২০২২ ও ২০২৩ সালে ক্রিমিয়া সেতুকে নিশানা করেছিল। এখন তারা পানির নিচ থেকে হামলা চালিয়ে সে ধারা বজায় রাখছে।
মালইউক বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো অবৈধ রুশ স্থাপনা থাকতে পারবে না।’
ক্রিমিয়া সেতুকে শত্রুবাহিনীর সেনাদের রসদ সরবরাহের রাস্তা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেছেন, এটিকে নিশানা করাটা পুরোপুরি বৈধ।
কার্চ সেতু ক্রিমিয়া সেতু নামেও পরিচিত। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের পর রাশিয়া এটি নির্মাণ করে। ২০১৮ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এটি উদ্বোধন করেন।
ইউক্রেনের কাছে সেতুটি রুশ দখলদারির এক ঘৃণ্য প্রতীক। মস্কো খুব সতর্কতার সঙ্গে এটিকে পাহারায় রাখে। পানির নিচে ড্রোন রেখে হোক বা বিস্ফোরক দিয়ে হোক, সেতুতে কোনো হামলা হলে তা ইউক্রেনের জন্য এক বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুনরাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্বকে কী বার্তা দিল ইউক্রেন০২ জুন ২০২৫‘স্পাইডার ওয়েব’ নামে একটি অভিযানের অংশ হিসেবে ইউক্রেন রাশিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গতকাল সেতুতে হামলা হয়।
কিয়েভ বলেছে, ‘স্পাইডার ওয়েব’ অভিযানের আওতায় তারা লরিতে করে গোপনে ১০০টির বেশি ড্রোন রাশিয়ায় পাঠিয়েছে এবং লরিচালকদের অজান্তে সেগুলো বিমানঘাঁটির কাছে পৌঁছে দিয়েছে। এরপর ওই ড্রোনগুলো ব্যবহার করে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বোমারু বিমানগুলোকে নিশানা করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি
বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ–সংক্রান্ত অধ্যাদেশ মঙ্গলবার রাতে জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, এখন থেকে তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এত দিন তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হতেন।
অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের জন্য মোট পাঁচটি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
এর আগে গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশটি শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই সভায় বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে। সেসব পরিবর্তন এনে রাতে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার।
বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাঁদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
আরও পড়ুনমুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় কেউ হবেন মুক্তিযোদ্ধা, কেউ সহযোগী২৬ মার্চ ২০২৫নতুন সংজ্ঞায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর মাধ্যমে নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা) বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের সংশোধনীতে যে জায়গায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শব্দ ছিল, তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ বলতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধ।