চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোরবানিতে ৯০০ কোটি টাকার পশু বাণিজ্য
Published: 5th, June 2025 GMT
একদিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমে উঠেছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। এবারের হাটে ক্রেতাদের কাছে দেশি জাতের ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। এসব গরুর দাম বেশি হলেও বড় আকারের গরুর দাম তুলনামূলক কম। সব মিলিয়ে এ জেলায় কোরবানিতে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার পশু বাণিজ্যের আশা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে খামারগুলোতে পশু পালন করা হয়েছে ২ লাখ ৬৯১টি। জেলাজুড়ে মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬৬ হাজার পশু বেশি রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, “এ বছর চাহিদার তুলনায় বেশি কোরবানি পশু রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। সবমিলিয়ে এবার কোরবানি ঈদের জন্য পশু বিক্রি করে ৯০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভবানা রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
সরবরাহ বেড়েছে, তাই গরুর দাম কম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঈদযাত্রা: কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ঢল
গোখাদ্যের প্রভাব পশুর হাটে:
গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী এ জেলার পশুর হাটগুলোয়। গরুর দাম বেশি হওয়ায় হাটগুলোতে দামাদামি করে বিক্রেতাদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না ক্রেতারা। অন্য বছরের তুলনায় এবার গরু বেচাকেনা কম বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বটতলা, শিবগঞ্জের তর্তিপুর, মনাকষাসহ সোনাইচণ্ডি ছোটবড় সব মিলিয়ে ১৯টি হাটে গরু বেচাকেনা চলছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট ও মাঝারি আকারের গরুগুলো ৩১-৩৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আকারে বড় এমন গরু মিলছে দেশি-বিদেশি জাত বিভাজন করে ২৬-২৮ হাজার টাকা মণ দরে।
জেলার রামচন্দ্রপুর হাট থেকে বটতলা হাটে ১০টি মাঝারি ও বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত মাত্র একটা গরু বিক্রি করতে পেরেছি। বাজারে গরু সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। দর্শনার্থী বেশি।”
গরু খামারি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “গত কয়েক বছরের ব্যবধানে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে আড়াই থেকে তিন গুণ। যার কারণে গত বারের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে গরুর দাম বেশি হওয়ায় দামাদামি করেও মনমত গরু কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। যারা ভাগে কোরবানি দেবেন তারাই বেশি দাম দিয়ে হলেও গরু কিনছেন।”
পশুর হাটে এখন গরু বিক্রি না হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খামারিরা। আব্দুর রহমান ও রহমত আলীর ভাষ্য- কাঙ্খিত দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে বড় ক্ষতি মুখে পড়বেন তারা। কোরবানির সময় গরু বিক্রি করতে পুরো বছর ধরে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন গরু বিক্রি না হলে তাদের বিপাকে পড়তে হবে।
ছাগলে দিকে ঝোঁক:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাটগুলোয় গতবার প্রতিমণ গরু ৩০ হাজারেও কম দামে বিক্রি হয়েছিল। সেই তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য কোরবানি যোগ্যপশু দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণও আছে। সব মিলিয়ে এবার কোরবানির জন্য ছাগলের দিকে ঝুঁঁকছেন অনেকেই। কিন্তু সেখানেও দাম বাড়তির দিকে। বিক্রেতারা বলছেন- এরইমধ্যে হাটে আসা বেশিরভাগ ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে অবশিষ্ট ছাগলগুলোতে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম হাঁকছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শিবতলা মহল্লার বাসিন্দা শিহাব আলী বলেন, “গরুর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ছাগলের দামও। ১৪-১৫ হাজারের নিচে ছাগলই পওয়া যাচ্ছে না। তাও যা মিলছে, আকারে অনেকটা ছোট। মানুষের আগ্রহ ১৮-২০ হাজার টাকার ছাগলে। এসব ছাগলের মোট ওজন ৩৮-৪৫ কেজি পর্যন্ত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক বলেন, “এ খাতকে ধরে রাখতে ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। খামার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও গো-খাদ্যের দাম কমানোসহ ভর্তুকি দিলে খামারিরা সব সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন।”
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গর ক রব ন র হ ট প ইনব বগঞ জ ক রব ন র
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’