ঢাকার ধামরাইয়ে বসতঘর থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়াত শ্বশুরের রেখে যাওয়া ডেকারেটর ব্যবসা দেখভাল নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বালিশচাপা দিয়ে  শাশুড়ি নারগিস আক্তার ও দুই শ্যালককে হত্যা করে রবিন (২২)। এ ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরের দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

গত ২ জুন বিকেলের দিকে ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রাম থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গত ৪ জুন নিহত নারগিস আক্তারের ভাই আব্দুর রশিদ (৪২) বাদী হয়ে হত্যা মামলা (নম্বর- ০৫) করেন।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা

চুনারুঘাটে গাড়িতে না তোলায় চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

গ্রেপ্তার রবিন ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। নিহতরা হলেন, ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত এলাকার মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী নারগিস আক্তার (৩৭), তার দুই ছেলে মো.

শামীম (২২) ও সোলাইমান (৮)। বড় ছেলে শামীম ডেকারেটরের কাজ করতেন ও ছোট ছেলে সোলাইমান মায়ের কাছে থাকতেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১ জুন রাত ৯টা থেকে দুপুর ২টার দিকে অজ্ঞাত আসামিরা বসতঘরের টিনের বেড়ার দরজা খুলে ঢুকে পরিকল্পিতভাবে তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ খাটের ওপর শুইয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা জানান, থানায় মামলা রুজু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পিবিআই ঢাকা জেলার সদস্যা। এর ধারাবাহিকতায়, রবিন হত্যায় জড়িত রয়েছে, এমন তথ্য উঠে আসে। এর জের ধরে গত ৪ জুন ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের মধুডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি হত্যায় জড়িতের বিষয়ে তথ্য দেন। 

রবিনের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১ জুন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে ওই বাড়ির টিনের বেড়ার দরজা খুলে ঘরে ঢুকে প্রথমে বড় শ্যালক শামীমকে (২২) খাটের পাশে শোয়া দেখে তার মুখের ওপর বালিশ চাপা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে রবিন। এরপর শাশুড়ি নারগিস (৩৭) ও সোলাইমানকে (৮) আরেক খাটে শোয়া দেখে একইভাবে তাদেরও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তিনজনের মরদেহ একই খাটে শুইয়ে কাঁথা দিয়ে ঢেকে ভোর ৪টার দিকে নিজের বাড়ি ফিরে আসে রবিন। 

পর দিন সকাল থেকে নারগিসের মেয়ে নাসরিন তার মাকে ফোন করতে থাকে। তবে তারা ফোন রিসিভ না করায় দুপুর ২টার দিকে তিনি মায়ের বাড়ি আসেন। ঘরে ঢুকে দেখতে পান, তার মা ও দুই ভাই মৃত অবস্থায় কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

পিআইবি জানান, এক বছর আগে মারা যাওয়া শ্বশুর রাজা মিয়ার ডেকারেটরের ব্যবসা দেখাশোনা নিয়ে তৈরি হওয়া পারিবারিক কলহের জেরে শাশুড়ি ও দুই শ্যালককে হত্যা করে রবিন।
 

ঢাকা/সাব্বির/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ন রগ স

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ