ঢাকায় পরিচিত, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীদের অনেকের সঙ্গেই আমার একটা জায়গায় অমিল। বেশির ভাগেরই বাড়ি ঢাকার কাছাকাছি, নয়তো নাগাল পাওয়ার মতো দূরত্বে। কিন্তু আমি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

এ নিয়ে সহকর্মীরা কত রকম কথা বলেন। মাঝেমধ্যে রসিকতা করে তাঁদের বলি, ঢাকায় কর্মস্থল না হয়ে চীনে হলেই বরং ভালো হতো। কারণ, ঢাকার চেয়ে আমার বাড়ি থেকে চীন সীমান্ত কাছেই হবে হয়তো! নেপাল, ভুটানের দূরত্বও নিশ্চিত কয়েক ঘণ্টা কম হবে। আর ভারত তো আমার কাছে বাড়ির উঠান!

যাহোক, ভূমিকা আর বড় না করি। কিন্তু এতটুকু পড়ে হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ‘বাড়িটা কোথায় আপনার? বাংলাদেশে তো!’ হ্যাঁ, আমার বাড়ি বাংলাদেশেই। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে। আমাদের জেলাটা চিলির মতো। একদম লম্বা। ডান-বাম বলে কিছু নেই, এক সড়কেই পাঁচ উপজেলা। আর ৮০ কিলোমিটারের বেশি লম্বা এই সড়কের শেষ উপজেলাটি আমার। জেলা শহর থেকে বাড়ি যেতেই লাগে চার ঘণ্টা। এই সময়ে হয়তো ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাহলে বুঝুন। আমার বাড়ির দূরত্ব ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে চার শ কিলোমিটার। স্বাভাবিক সময়ে যানজট ছাড়া যেতে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

তো এবার আসি ঈদযাত্রায়। ঈদের তিন সপ্তাহ আগে টিকিট করলাম। কাউন্টারে যেতেই বলল, ‘ভাই, টিকিট তো আরও এক সপ্তাহ আগে শেষ হয়েছে।’ শেষে কতজনকে ধরে টিকিট পেলাম, সেই গল্প নাহয় না-ই বলি। গাড়ির সময় ছিল ৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়, মানে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। বেলা গড়াতেই সব গুছিয়ে আমার বোনসহ রেডি হলাম। বাসা থেকে বের হব, এমন সময় কাউন্টার থেকে ফোন।

ভাবলাম, হয়তো বলবে, সময়মতো চলে আসবেন। কিন্তু না কাউন্টার থেকে যা জানাল, তাতে মাথায় যেন আকাশ পড়ল। ফোনের ওপাশের লোকটা জানাল, আগের রাতে তাঁদের যেসব গাড়ি যাত্রী নিয়ে গেছে, সেগুলো ফিরতে পারেনি। আর ফিরবে কখন, সেটাও তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। তবে জানাল, আশা করছে গাড়ি ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত তিন–চারটা বেজে যাবে। কিন্তু অত রাতে তো যাত্রীরা আসতে পারবেন না। তাই তারা ঠিক করেছে সকাল সাতটায় গাড়ি ছাড়বে।

কাউন্টার থেকে এ কথা শুনে পড়লাম মহামুশকিলে। ভাবলাম, পরদিন সকালে রওনা দিয়ে ঈদের আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারব তো? সঙ্গে বোনও আছে। এদিকে পরিচিতিজন যারা বাড়ির পথে ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বললাম। কেউ বলল, ১০-১২ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে যমুনা সেতু পৌঁছাতে পারেনি। জানলাম, রাস্তায় মাইলের পর মাইল যানজট। গাড়ি দীর্ঘ সময় আটকে থেকে মিনিটখানেক চলে, আবার থামে। কেউ কেউ তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকারও তথ্য দিল। বুঝলাম বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।

১৫ ঘণ্টার অপেক্ষার পর বাসে উঠেছেন এই যাত্রীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক উন ট র আম র ব

এছাড়াও পড়ুন:

দফায় দফায় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত গাজীপুর

পোশাক কারখানার এক শ্রমিক জাকির হোসেনের (২৫) আত্মহনন ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন উত্তপ্ত ছিল গোটা গাজীপুর। আগের রাতের ওই আত্মহননের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকালে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। ভাঙচুর হয় কারখানা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। সংঘর্ষে ১১ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৯ জনকে আটক করেছে। 
 
জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়নপুরের জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন জাকির। গত সোমবার সারাদিন তিনি কাজ করেন কারখানায়। বাসায় ফেরার আগে হঠাৎ কারখানার আট তলা ভবনের ছাদে উঠে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। মারাত্মক রক্তাক্ত অবস্থায় সহকর্মীরা জাকিরকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জাকির নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মোক্তার উদ্দিনের ছেলে।

সহকর্মীদের দাবি, সোমবার জাকির কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ছুটি না দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে জাকির আট তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহনন করেছেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, জাকির ছুটি চায়নি, তাকে লাঞ্ছিতও করা হয়নি। পারিবারিক কলহের কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

এদিকে জাকিরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে তারা এক জোট হয়ে কারখানা ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর চালায়। আগে থেকেই পুলিশ সেখানে অবস্থান করছিল। শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ হাজির হয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারখানার সামনে রাখা পুলিশের একটি এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) গাড়ি শ্রমিকরা ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেলও ছুড়তে থাকে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর দফায় দফায় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলতে থাকে। পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের লাঠিপেটা ও টেয়ারশেলের আঘাতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। তা ছাড়া শ্রমিকদের ওপর গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ১৯টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। 

জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার এজিএম জুবায়ের এম বাশার বলেন, ‘পারিবারিক বিষয় নিয়ে জাকির কয়েক দিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। সেই হতাশা থেকেই জাকির আটতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি ছুটি চাননি। তাঁকে লাঞ্ছিত করার প্রশ্নই উঠে না।
এদিকে কারখানার সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে জাকিরের আত্মহত্যার দৃশ্য। ফুটেজে দেখা যায়, ভবনের আটতলায় উঠে জাকির বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন। দুই হাত দিয়ে চুল টানছেন। এক পর্যায়ে সাদা এক টুকরো কাগজ নিয়ে ভবনের মাঝামাঝি স্থানে রাখেন। পরে ছাদের কিনারায় গিয়ে বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচের দিকে ঝাঁপ দেন। পুলিশ জাকিরের লেখা চিরকুটটি উদ্ধার করেছে। তাতে লেখা রয়েছে– জীবনে সবাই ভালো থাকতে পারে না। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দফায় দফায় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত গাজীপুর