কেমন দেখতে ছিল ‘আবাবিল’ পাখি
Published: 18th, September 2025 GMT
কোরআনে সুরা ফিল-এ আল্লাহ তাআলা বাদশাহ আবরাহা এবং সেনাবাহিনী ধ্বংসকারী হিসেবে একটি পাখির উল্লেখ করেছেন। অনেকেই পাখিটিকে ‘আবাবিল’ পাখি হিসেবে চিনে থাকে। বস্তুত কোরআনে বর্ণিত এই পাখির নাম আবাবিল নয়। আবাবিল শব্দের অর্থ পাখির ঝাঁক। যেহেতু আল্লাহ তাআলা ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেছিলেন এবং আল-কোরআনেও ‘ত্বইরান আবাবিল’ বলা হয়েছে, সেহেতু অনেকে এই পাখিকে আবাবিল পাখি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সুরা ফিল-এর অনুবাদ
‘(হে নবী) আপনি কি দেখেননি আপনার প্রভু হস্তী বাহিনীর সঙ্গে কী আচরণ করেছিলেন? তিনি কি তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেননি? তিনি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, যারা তাদের ওপর পাথরের কাঁকর নিক্ষেপ করেছিল, আর তিনি তাদের করলেন ভক্ষিত তৃণ-ঘাসের মতো।’
আরও পড়ুনসুরা ফিলের সারসংক্ষেপ১৯ জানুয়ারি ২০২৫আবাবিল পাখির আকৃতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ বলেছেন, এরা ছিল চড়ুই-জাতীয় ক্ষুদ্র পাখি, আবার কেউ বলেছেন শালিক বা শালিক-জাতীয়।আল্লামা ইবনে কাসির বলেন, ‘আবাবিল’ কোনো নির্দিষ্ট পাখির নাম নয়, বরং এর অর্থ হলো দল বেঁধে আসা, ঝাঁক বেঁধে আসা। অর্থাৎ আল্লাহ অসংখ্য পাখিকে একত্রে পাঠিয়েছিলেন, যারা আবরাহার সৈন্যদের ওপর আঘাত করেছিল।
প্রত্যেক পাখির কাছে ছিল ছোট ছোট ‘সিজ্জিল’ বা পোড়ামাটির পাথর। পাথরগুলো তীব্রগতিতে দেহে প্রবেশ করে ভেতর থেকে ক্ষয় করতে শুরু করত ও এর ফলে সৈন্যরা মারা গিয়েছিল। (সুরা ফিল-এর তাফসির, তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৮)
ইমাম কুরতুবি (রহ.
আবার কিছু মুফাসসির উল্লেখ করেছেন যে এরা ছিল সাধারণত দেখা যাওয়া ‘আবাবিল’-জাতীয় পাখির মতো, যারা আকাশে দ্রুত উড়ে ও ঝাঁক বেঁধে চলাফেরা করে। তবে আল্লাহ তাদের বিশেষ দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন, তাই তাদের ক্ষমতা ছিল অলৌকিক। (সুরা ফিল-এর তাফসির, তাফসিরে কুরতুবি)
সিরাত গ্রন্থগুলোতে আসহাবে ফিল ও আবাবিল পাখির ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। ইবনে হিশাম (রহ.) তাঁর সিরাতে উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ তাআলা সাগরের দিক থেকে একপ্রকারের কালো পাখি পাঠালেন।
প্রত্যেকের ঠোঁট ও পায়ে তিনটি করে নুড়িপাথর ছিল। পাথরগুলোর আকার ছিল বুট ও কলাইয়ের মতো। যার গায়েই সেগুলো পড়তে লাগল, সে-ই তৎক্ষণাৎ মারা যেতে লাগল। (সিরাত ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ৩০)
আরও পড়ুনসবচেয়ে সুখী মানুষ হওয়ার শিক্ষা নবীদের জীবন থেকে২০ জুলাই ২০২৫প্রত্যেকের ঠোঁট ও পায়ে তিনটি করে নুড়িপাথর ছিল। পাথরগুলোর আকার ছিল বুট ও কলাইয়ের মতো। যার গায়েই সেগুলো পড়তে লাগল, সে-ই তৎক্ষণাৎ মারা যেতে লাগল।ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রহ.) তাঁর বিখ্যাত তাফসির ‘মাফাতিহুল গাইব’-এ লিখেছেন, এখানে মূল বিষয় হলো আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ, পাখির প্রজাতি নির্ধারণ নয়। আল্লাহ চাইলে ক্ষুদ্রতম প্রাণীকেও বড় শক্তিকে ধ্বংস করার মাধ্যম বানাতে পারেন।
তাই ‘আবাবিল’ শব্দকে প্রজাতির নাম ধরে ব্যাখ্যা করার চেয়ে একে আল্লাহর পাঠানো বাহিনী হিসেবে দেখা উচিত। (সুরা ফিল-এর তাফসির, মাফাতিহুল গাইব)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ওই পাখিগুলোর চঞ্চু ছিল পাখির মতো এবং নখ ছিল কুকুরের মতো। ইমাম ওয়াকিদি (রহ.) বলেন, পাখিগুলো ছিল সবুজ রঙের। ওগুলো কবুতরের চেয়ে কিছু ছোট ছিল। পায়ের রং ছিল লাল। ইকরিমা (রহ.) বলেন, সবুজ রঙের এই পাখিগুলো সমুদ্র হতে বের হয়ে এসেছিল। ওগুলোর মাথা ছিল জন্তুর মতো। (সুরা ফিল-এর তাফসির, তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৮)
আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপতী বলেন, তাদের চঞ্চু ছিল লাল রঙের, মাথা ছিল কালো ও গলা ছিল লম্বা। (তাফসিরে মাজহারি, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩৪৪)
আরও পড়ুননবী ইবরাহিম (আ.) ও চারটি পাখি১৭ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক উ বল ছ ন আল ল হ ত কর ছ ল কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসুর বিবৃতি: বিএনপি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে
জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, এমন বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। রোববার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বিপ্লব। শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ ও একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোনো প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
ডাকসুর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, যা সরাসরি ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।