জামায়াতের প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত
Published: 18th, September 2025 GMT
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ অভিনব। কারণ, তখন দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষ পদের মধ্যে একমাত্র কার্যক্ষম ব্যক্তি ছিলেন রাষ্ট্রপতি। বহাল ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
তৎকালীন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন কি না, এই মর্মে বিদ্যমান সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত চান। সুপ্রিম কোর্ট ইতিবাচক মতামত দেন। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের এই উপদেশ গ্রহণ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ পড়ান।
বিভিন্ন সাংবিধানিক পদধারী যে শপথ গ্রহণ করেন, সেটাও বিদ্যমান সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের বিধানমতে তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত শপথ। যেহেতু বিগত শেখ হাসিনা সরকার ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে, কাজেই প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের শপথবাক্যও সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া হয়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, মুহাম্মদ ইউনূস সরকার তাহলে কোন শপথ পাঠ করলেন? উত্তর হলো, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টারা যে শপথ পাঠ করতেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা সেই শপথ পাঠ করেন। সুতরাং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূলত বিদ্যমান সাংবিধানিক রীতি মেনে শপথ নিয়েছে।
আবারও প্রশ্ন উঠতে পারে, বিদ্যমান সংবিধানবহির্ভূত শপথ গ্রহণ করার জন্য এই সরকার কি বৈধ না অবৈধ? এ বিষয়ে উভয় দিকেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা সম্ভব। এই বিষয়ে আমি সরাসরি উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকছি।
বাস্তবতা হচ্ছে, একটি ক্রান্তিকালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এমন জরুরি ও ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সাংবিধানিক বিধান আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ ও চতুর্থ তফসিলে রয়েছে। আমি এর আগে অনেক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি বলেছি, লিখেছি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত এই সরকারের সব কার্যক্রম, এমনকি পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন পর্যন্ত সময়কালের বৈধতা দিতে গেলেও সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। সে ক্ষেত্রে সমাধান হলো বিদ্যমান সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া বা অধিকতর সংশোধন করা।
এখন প্রশ্ন হলো, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? আমি আগেই উল্লেখ করেছি, পরবর্তী সংসদ গঠিত হওয়ার পর অবশ্যই সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। আর কিছু না হোক, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কার্যক্রমে বৈধতা প্রদানের জন্য হলেও এটি করতে হবে। আমার সুস্পষ্ট মতামত হলো, জুলাই সনদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ, এর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টিসহ সবকিছুই সেই সংশোধনীর মাধ্যমে করা সম্ভব এবং সেটিই বাস্তবসম্মত হবে।
আরও পড়ুনসংস্কার প্রশ্নে বিএনপি যে ছাড় দিল, অন্যরা কি দিচ্ছে২৯ জুন ২০২৫২.বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এখনই একটি বিশেষ অন্তর্বর্তীকালীন সাংবিধানিক আদেশ (আইন) জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার ২০২৫।
আমি এই প্রস্তাবটি দেখেছি। এ ধরনের যেকোনো আদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে হয় এবং বাংলায় ‘যেহেতু’ ও ইংরেজিতে ‘হোয়ারএস’ শব্দ দিয়ে শুরু করতে হয়। প্রস্তাবিত আদেশে মোট ৯টি ‘যেহেতু’ ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় যেহেতুতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ আগস্ট ২০২৪–এর ঘটনাপ্রবাহে ‘কন্সটিটিউয়েন্ট পাওয়ার’ (গাঠনিক শক্তি) বাংলাদেশের নাগরিকের ওপর হস্তান্তরিত হয়েছে এবং সেই ক্ষমতাবলে জনগণ ক্ষমতার মালিকানা গ্রহণ করেছে।
এই ধরনের ধারণা সৃষ্টি করা বাস্তবতাবর্জিত। কারণ, আগেই বলেছি, একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে ও পরিচালিত হচ্ছে পরবর্তী সংসদ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে। কাজেই এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে কোনো আদেশ জারি করা হলে, বর্তমান সরকারের অস্তিত্বই অস্বীকার করা হবে।
প্রস্তাবিত আদেশের মাধ্যমে বিদ্যমান সংবিধানকে ১৯৭২ সালের সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের তিন–চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে বলে বলা হয়েছে। তত দিন পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে বলে বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।প্রস্তাবিত আদেশের মাধ্যমে বিদ্যমান সংবিধানকে ১৯৭২ সালের সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের তিন–চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে বলে বলা হয়েছে। তত দিন পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে বলে বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
তাহলে এত দিন মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার যে সাংবিধানিক, প্রশাসনিক, বিচারিক দায়িত্ব পালন করল, সংস্কারের উদ্যোগ নিল, সেগুলো কিসের ভিত্তিতে করল? জামায়াতের প্রস্তাবিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘জনগণের সর্বসম্মতি’তে (ওয়াইডস্প্রেড কনসেনসাস) ও জনগণের ‘কন্সটিটিউয়েন্ট পাওয়ার’ বলে এই সরকারের কাজ সম্পাদিত হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
তাই যদি হবে, তাহলে কেন রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতি, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার, সংবিধানের ১২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহাহিসাবনিরীক্ষক, সংবিধানের ১৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং অন্যান্য সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দিলেন? রাষ্ট্রপতি যে এত দিন ধরে সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ বলে এত এত অধ্যাদেশ জারি করলেন, আইন প্রণয়ন, সংশোধন ও তার অধীনে বিচারকাজ চলমান রইল, তার কী হবে?
আরও পড়ুনশিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫৩.এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে এবং এসব কাজের অনুমোদন (র্যাটিফিকেশন) ও ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে বিদ্যমান সংবিধানকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু জামায়াতের প্রস্তাব অনুসারে এই বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করা হলে দেশে ব্যাপক ‘সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি হবে। সাংবিধানিক পদ ও প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়বে।
এই প্রস্তাবে বর্ণিত এই আদেশের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হলে সংবিধান, আইন, আদেশ পুরোপুরি কিংবা এগুলোর অসংগতিপূর্ণ অংশ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকারান্তরে এই প্রস্তাবিত আদেশকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। এই বিধান আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদের অনুকরণে লিখিত।
এ ছাড়া এই আদেশ অমান্য করলে বা চেষ্টা করা হলে সেটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, কোনো আদালত এই আদেশের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোনো রায় বা আদেশ দিতে পারবেন না। পরবর্তী নির্বাচনের প্রার্থীকে এটি মেনে চলার জন্য আবশ্যিকভাবে হলফনামা দিতে হবে; এই আদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রচারণা করা যাবে না, এমন বিধানও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে এমন একটি অবাস্তব ও অকার্যকর আইনি বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৪.প্রভিশনাল কন্সটিটিউশনাল অর্ডার ২০২৫ জারি করবে কে? সহজেই অনুমেয় যে সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের দফা ক) এবং খ)–এর বিধানমতে, কোনো অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তন বা রহিতকরণ হয়ে যায়, এমন বিধান করা যাবে না।
সংবিধানের এই বিধান উপেক্ষা করার জন্য আদেশ জারি করে সেটাকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জামায়াত। প্রস্তাবিত আদেশে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই আদেশ প্রণয়ন ও জারি করবে এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে এই প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হবে।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা যখন বিদ্যমান সংবিধানের ওপরই নির্ভরশীল, তাহলে তারা কীভাবে এমন একটি অযৌক্তিক আদেশ প্রণয়ন করবে?
মো. রুহুল কুদ্দুস সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি; সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিএনপি।
*মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন চ ছ দ অন য য র প রস ত ব র ষ ট রপত ন সরক র র এই সরক র গ রহণ কর ক র যকর প রণয ন উপদ ষ ট পরবর ত মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।
এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।
এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।
‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।
এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।
তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমিনেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।
হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।
শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স