গাজীপুরে বৃহৎ বাঁশের হাটে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের
Published: 18th, September 2025 GMT
আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব বাঁশ দিবস। বাংলাদেশে দিবসটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তবে, এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে বাঁশ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। গ্রামীণ জীবনে প্রতিদিনের কাজকর্ম থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ, আসবাবপত্র তৈরি কিংবা বিভিন্ন উৎসব— সবকিছুতেই বাঁশ অপরিহার্য। শুধু তাই নয়, বাঁশকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা, কর্মসংস্থান এবং একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক চক্র।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রতি বুধবার বসে দেশের অন্যতম বৃহৎ বাঁশের হাট। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘গোসিঙ্গা খেয়া ঘাট বাঁশের হাট’ নামে। দীর্ঘ চার দশক ধরে টিকে থাকা এই ঐতিহ্যবাহী বাজার এখনো জেলার অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে বসা এই বাঁশের হাটকে ঘিরে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। শুধু একটি বাজার নয়, এটি হয়ে উঠেছে হাজারো মানুষের জীবিকার ভরসাস্থল ও স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
প্রতি সপ্তাহে এখানে ৩০ লক্ষাধিক টাকার বাঁশ কেনাবেচা হয়। মাস শেষে এ অঙ্ক দাঁড়ায় দেড় কোটিরও বেশি টাকায়। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর এখানকার বাঁশ চলে যায় কুমিল্লাসহ অন্তত ১৫টি জেলায়।
এই হাটকে ঘিরে হয়েছে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান। বাজারের দিনে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকেন বাঁশ আনা-নেওয়া, ট্রলারে তোলা, নদীতে ভাসানো, ভুর বেঁধে রাখা ও লোড-আনলোডের কাজে।
গাজীপুরের উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া বাঁশ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। জেলায় বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আছে অন্তত ৬৫ হাজার বাঁশঝাড়। একটি ঝাড় থেকে বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি বাঁশ পাওয়া যায়।
হাটের দিন সকাল থেকেই বাঁশবাহী ট্রলার ভিড়তে শুরু করে শীতলক্ষ্যার তীরে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন বাঁশ কিনতে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে জমজমাট বেচাকেনা। পাইকারি বাজারে বাঁশের দাম আকারভেদে ১২৫ থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে, বড় আকারের বাঁশ পাইকারি বাজারে ৪০০ টাকাতেও বিক্রি হয়।
ঘর-বাড়ি নির্মাণ, পানের বরজ, সবজির মাচা, মাছ ধরার সরঞ্জাম, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে আধুনিক গৃহসজ্জা সামগ্রী নির্মাণেও বাঁশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এজন্য এখান থেকে ট্রলার ও ট্রাকে করে দেশের নানা প্রান্তে পাঠানো হয় বাঁশ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল সাত্তার মোড়ল বলেছেন, “প্রতি বুধবার এ হাট বসে। এক দিনে ২০-৩০টি ট্রলার বাঁশ এখান থেকে বের হয়। প্রতিটি ট্রলারে প্রায় ১০ লাখ টাকার বাঁশ থাকে।”
গোসিঙ্গা গ্রামের সাব্বির আলম মীর বলেন, “৩৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। আকারভেদে প্রতিটি বাঁশ ১০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। মাসে এক থেকে দেড় কোটি টাকার বাঁশ কেনাবেচা হয় এখানে।”
স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল প্রধান বলন, “বাজারটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে ভেতরে হওয়ায় বাঁশ পরিবহনে সমস্যা হয়। সরকারি প্রকল্পে বাঁশের ব্যবহার কমে যাওয়ায় আগের মতো দামও আর নেই।”গো
সিঙ্গা বাজারের ইজারাদার আক্তারুজ্জামান খান জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে এই হাট বসছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারীরা এসে বাঁশ কিনে নিয়ে যান। মাস শেষে বিক্রির অঙ্ক দেড় কোটি টাকারও বেশি দাঁড়ায়।
শ্রীপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেছেন, “গোসিঙ্গার এই বাঁশের হাট শুধু গাজীপুর নয়, আশপাশের জেলার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতি মাসে দেড় কোটি টাকার বেশি বাঁশ বেচাকেনা হয়ে থাকে।”
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ তলক ষ য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
দিনে ঢাকায় মিছিল, রাতে বাড়িতে ফিরতেই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
রাজধানীর উত্তরায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ জেলা শাখার ব্যানারে মিছিলে অংশ নেওয়ার পর রাতে বাড়িতে ফিরতেই তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নূর হামীম রুশো (২০), ছাত্রলীগ কর্মী আলিফ জাহান ওরফে পার্থ (২০), মো. মারুফ মিয়া (২৫)। তাঁরা সবাই ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা।
আজ শনিবার বিকেলে গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে ঢাকায় মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, বিশেষ অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা রাজধানীর উত্তরার মিছিলে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।