‘জুড়ীর জাম্বুরা’, নামেই যার পরিচয়
Published: 18th, September 2025 GMT
আশ্বিনের সবে শুরু। টিলাভূমির বাড়ি-বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে নানা আকারের জাম্বুরা। তবে এখনো পুরোপুরি পাকেনি। এরই মধ্যে কোথাও গাছ থেকে ফল সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। কোথাও স্তূপ করা ফল বিক্রির জন্য বস্তায় ভরার কাজ চলছে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাম্বুরার চাষ হয়। তবে মিষ্টতা, রসসহ আরও কিছু গুণে ‘জুড়ীর জাম্বুরা’র ভিন্ন নাম রয়েছে। বাজারে এটির চাহিদা বেশি। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আড়তে প্রতিদিন ট্রাকে করে যাচ্ছে এখানকার জাম্বুরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জুড়ীর গোয়ালবাড়ী ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের ৬৬ হেক্টর টিলাভূমিতে সুদীর্ঘ কাল ধরে জাম্বুরার চাষ হচ্ছে। বছরে উৎপাদিত হয় ১২ মেট্রিক টন। এখানে কমপক্ষে তিন শতাধিক ছোট-বড় চাষি রয়েছেন। তাঁরা বংশপরম্পরায় বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। তাতে একেক গাছে একেক রকম ফলন হয়। স্বাদ-মানেও ভিন্নতা থাকে। এ অবস্থায় উন্নত জাত বাছাইয়ের মাধ্যমে ফলটির ব্যাপক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.
‘জুড়ীর জাম্বুরা’র ইতিবৃত্ত
জুড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে ভারতের সীমান্তঘেঁষা পশ্চিম কচুরগুল গ্রাম। জুড়ী-লাঠিটিলা পাকা সড়ক পেরিয়ে পশ্চিম কচুরগুলের রাস্তা। কিছুটা পথ ইট বিছানো, আবার কিছুটা কাঁচা। রাস্তার দুই পাশে সবুজ ছোট-বড় টিলা নজর কাড়ে। টিলার ওপর মানুষের বাড়িঘর। সেখানে টিলার ঢালে লাগানো জাম্বুরাগাছে ফল ধরেছে। ফলের ভারে অনেক গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে। স্থানীয় অনেক টিলায় নানা জাতের ফলের বাগান করেছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে জাম্বুরা, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি রয়েছে।
জুড়ীর গোয়ালবাড়ী, পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নসহ পাশের বড়লেখা উপজেলার সীমান্তে পাথারিয়া পাহাড় বনাঞ্চল পড়েছে। ওই বনাঞ্চল বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা ভাগ করে দিয়েছে। পাথারিয়া পাহাড় বনাঞ্চলের একটি অংশ লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন। এ বন জুড়ীর গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে পড়েছে। বনে সামাজিক বনায়ন বাড়ায় ধীরে ধীরে জাম্বুরাগাছের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এরপর বীজের মাধ্যমে আশপাশের লোকালয়ে এ ফলের চাষাবাদ শুরু হয়।
পশ্চিম কচুরগুলের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব ছুরকুম আলী বংশপরম্পরায় এ ফলের চাষ করছেন। তাঁর বাগানে অন্তত ৬০০ জাম্বুরাগাছ আছে। একসময় নিজেই চট্টগ্রামে আড়তে ফল বিক্রি করতেন। এখন ফল ধরার পর স্থানীয় পাইকারেরা বাগান কিনে নেন। এবার দেড় লাখ টাকায় বাগানের সব জাম্বুরা বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে পরিপক্ব না হওয়ায় এখনো তাঁর বাগানের ফল সংগ্রহ শুরু হয়নি। ফল পাকার আগেই কাঠবিড়ালি তা নষ্ট করে ফেলে। এ কারণে এলাকার অনেকে আগেভাগে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিক্রি শুরু হয়। গড়ে একটি জাম্বুরার পাইকারি দাম পড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ঢাকাতেই বেশি যায়। প্রতিদিন বড় ট্রাকে ৪০০-৫০০ আর ছোট ট্রাকে ২০০-২৫০ বস্তা করে জাম্বুরা বোঝাই করে নেওয়া হয়। প্রতি বস্তায় আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০টি জাম্বুরা থাকে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফল পরিপক্ব হয়।
এখনকার চাষিদের মধ্যে আগে উন্নত জাত সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। এ কারণে বিক্রির সময় তাঁরা ভালো দাম পেতেন না।
কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান জানালেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরা বেশ কিছু জাতের জাম্বুরা সংগ্রহ করে আনেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। ফলের রং, পাল্প (ফলের ভেতরে খাবারের আঁশযুক্ত নরম অংশ) সহজে ওঠে কি না, মিষ্টতা ও রসের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ১২টি জাতকে উন্নত চিহ্নিত করেন। হর্টিকালচার বিভাগের সহযোগিতায় ১২টি জাতের মধ্যে আপাতত দুটি জাতের চারা উৎপাদন করা হবে কলম পদ্ধতিতে। চারা হলে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণের পাশাপাশি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ২০২২ সালের দিকে কৃষি বিভাগ ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনবৃদ্ধি প্রকল্পের’ আওতায় অনুসন্ধান চালিয়ে ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-১’ ও ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-২’ নামে এখানকার দুটি জাতের জাম্বুরা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। কলম পদ্ধতিতে দুটি জাতের প্রায় চার হাজার চারা উৎপাদন করে প্রকল্পভুক্ত ১২৭টি উপজেলায় সম্প্রসারণ ও প্রদর্শনী করা হয়। ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘জুড়ীর জাম্বুরা ছড়িয়ে গেল দেশে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।
আবেদন ফি ৪০০ টাকা
ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগেআবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
বিস্তারিত দেখুন এখানে
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫