আশ্বিনের সবে শুরু। টিলাভূমির বাড়ি-বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে নানা আকারের জাম্বুরা। তবে এখনো পুরোপুরি পাকেনি। এরই মধ্যে কোথাও গাছ থেকে ফল সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। কোথাও স্তূপ করা ফল বিক্রির জন্য বস্তায় ভরার কাজ চলছে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাম্বুরার চাষ হয়। তবে মিষ্টতা, রসসহ আরও কিছু গুণে ‘জুড়ীর জাম্বুরা’র ভিন্ন নাম রয়েছে। বাজারে এটির চাহিদা বেশি। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আড়তে প্রতিদিন ট্রাকে করে যাচ্ছে এখানকার জাম্বুরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জুড়ীর গোয়ালবাড়ী ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের ৬৬ হেক্টর টিলাভূমিতে সুদীর্ঘ কাল ধরে জাম্বুরার চাষ হচ্ছে। বছরে উৎপাদিত হয় ১২ মেট্রিক টন। এখানে কমপক্ষে তিন শতাধিক ছোট-বড় চাষি রয়েছেন। তাঁরা বংশপরম্পরায় বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। তাতে একেক গাছে একেক রকম ফলন হয়। স্বাদ-মানেও ভিন্নতা থাকে। এ অবস্থায় উন্নত জাত বাছাইয়ের মাধ্যমে ফলটির ব্যাপক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ।

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

মাহমুদুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, জাম্বুরা টিলা-পাহাড়ি এলাকায় বেশি হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, জুড়ীর টিলাভূমির মাটি অম্লীয়। দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানকার মাটিতে খনিজ পদার্থ বেশি। এর ফলে এখানে উৎপাদিত জাম্বুরা অপেক্ষাকৃত মিষ্টি ও রসে ভরপুর থাকে। তাই এ জাম্বুরা দেশখ্যাত হয়ে উঠেছে। এটির চাষাবাদে কৃষকেরা কখনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন না। সার হিসেবে গাছের গোড়ায় মাঝেমধ্যে শুধু গোবর ও খড় দেন। ফলটি বিষমুক্ত বলা যায়।

‘জুড়ীর জাম্বুরা’র ইতিবৃত্ত

জুড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে ভারতের সীমান্তঘেঁষা পশ্চিম কচুরগুল গ্রাম। জুড়ী-লাঠিটিলা পাকা সড়ক পেরিয়ে পশ্চিম কচুরগুলের রাস্তা। কিছুটা পথ ইট বিছানো, আবার কিছুটা কাঁচা। রাস্তার দুই পাশে সবুজ ছোট-বড় টিলা নজর কাড়ে। টিলার ওপর মানুষের বাড়িঘর। সেখানে টিলার ঢালে লাগানো জাম্বুরাগাছে ফল ধরেছে। ফলের ভারে অনেক গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে। স্থানীয় অনেক টিলায় নানা জাতের ফলের বাগান করেছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে জাম্বুরা, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি রয়েছে।

জুড়ীর গোয়ালবাড়ী, পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নসহ পাশের বড়লেখা উপজেলার সীমান্তে পাথারিয়া পাহাড় বনাঞ্চল পড়েছে। ওই বনাঞ্চল বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা ভাগ করে দিয়েছে। পাথারিয়া পাহাড় বনাঞ্চলের একটি অংশ লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন। এ বন জুড়ীর গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে পড়েছে। বনে সামাজিক বনায়ন বাড়ায় ধীরে ধীরে জাম্বুরাগাছের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এরপর বীজের মাধ্যমে আশপাশের লোকালয়ে এ ফলের চাষাবাদ শুরু হয়।

পশ্চিম কচুরগুলের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব ছুরকুম আলী বংশপরম্পরায় এ ফলের চাষ করছেন। তাঁর বাগানে অন্তত ৬০০ জাম্বুরাগাছ আছে। একসময় নিজেই চট্টগ্রামে আড়তে ফল বিক্রি করতেন। এখন ফল ধরার পর স্থানীয় পাইকারেরা বাগান কিনে নেন। এবার দেড় লাখ টাকায় বাগানের সব জাম্বুরা বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে পরিপক্ব না হওয়ায় এখনো তাঁর বাগানের ফল সংগ্রহ শুরু হয়নি। ফল পাকার আগেই কাঠবিড়ালি তা নষ্ট করে ফেলে। এ কারণে এলাকার অনেকে আগেভাগে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিক্রি শুরু হয়। গড়ে একটি জাম্বুরার পাইকারি দাম পড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ঢাকাতেই বেশি যায়। প্রতিদিন বড় ট্রাকে ৪০০-৫০০ আর ছোট ট্রাকে ২০০-২৫০ বস্তা করে জাম্বুরা বোঝাই করে নেওয়া হয়। প্রতি বস্তায় আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০টি জাম্বুরা থাকে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফল পরিপক্ব হয়।

এখনকার চাষিদের মধ্যে আগে উন্নত জাত সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। এ কারণে বিক্রির সময় তাঁরা ভালো দাম পেতেন না।

কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান জানালেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরা বেশ কিছু জাতের জাম্বুরা সংগ্রহ করে আনেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। ফলের রং, পাল্প (ফলের ভেতরে খাবারের আঁশযুক্ত নরম অংশ) সহজে ওঠে কি না, মিষ্টতা ও রসের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ১২টি জাতকে উন্নত চিহ্নিত করেন। হর্টিকালচার বিভাগের সহযোগিতায় ১২টি জাতের মধ্যে আপাতত দুটি জাতের চারা উৎপাদন করা হবে কলম পদ্ধতিতে। চারা হলে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণের পাশাপাশি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ২০২২ সালের দিকে কৃষি বিভাগ ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনবৃদ্ধি প্রকল্পের’ আওতায় অনুসন্ধান চালিয়ে ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-১’ ও ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-২’ নামে এখানকার দুটি জাতের জাম্বুরা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। কলম পদ্ধতিতে দুটি জাতের প্রায় চার হাজার চারা উৎপাদন করে প্রকল্পভুক্ত ১২৭টি উপজেলায় সম্প্রসারণ ও প্রদর্শনী করা হয়। ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘জুড়ীর জাম্বুরা ছড়িয়ে গেল দেশে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উৎপ দ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মিনহাজ মান্নান

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

এ রায়ের ফলে ওই মামলা থেকে মিনহাজ মান্নান অব্যাহতি পেলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মঈন ফিরোজী।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ওই মামলায় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পলাতক অপর চার আসামি হলেন সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী সামিউল ইসলাম খান ওরফে স্যাম ওরফে জুলকার নাইন, আশিক ইমরান ও ওয়াহিদুন নবী।

দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান নারাজি আবেদন দিলে তা নামঞ্জুর হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে মিনহাজ মান্নান একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মিনহাজ মান্নানের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে মিনহাজ মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ মে মামলাটি করা হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এতে কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ইসলামকে আসামি করা হয় এবং আটজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।

আরও পড়ুন১০ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর০৪ মার্চ ২০২১

এ মামলায় কারাবন্দী মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ কারণে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের সময় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির ছিলেন দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান। তাঁরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। সেদিন কার্টুনিস্ট কিশোর আদালতে হাজির না থাকায় তাঁর জামিন বাতিল করা হয়।

আরও পড়ুনআজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত লেখক মুশতাক২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মিনহাজ মান্নান