দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস পূর্তিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ‘আমাদের আমলনামা’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। 

শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ফেসবুক এ পোস্ট দেন তিনি। তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

ঠিক আট মাস হলো বিডা-বেজায় আজকে। সরকারের বয়স প্রায় দশ মাস। ব্যারিস্টার ফুয়াদ ঠিকই বলেছেন। একটা আমলনামা দেওয়া দরকার। আমরা কি শুধু দুইটা প্রেজেন্টেশন করলাম এতদিন ধরে? কিছু সাংবাদিক, ফেসবুক বিশেষজ্ঞ ও বটদের লেখা পড়লে তাই মনে হয়। আমাদের রিপোর্ট কার্ডটি শেয়ার করলাম। ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো।


 
আমাদের কাজ মূলত তিনটা এরিয়ায়:

ক.

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে পলিসি ও এক্সিকিউশন এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া।

খ. যারা দেশে অলরেডি বিনিয়োগ করেছেন, তাদের কেস বাই কেস ইস্যু সমাধানের মাধ্যমে এম্বাসেডর তৈরি করা।

গ. দেশের ইমেজ ইমপ্রুভ করার পাশাপাশি একটা সলিড ইনভেস্টমেন্ট পাইপলাইন গঠন করা।

#ক 
একদম শুরুর দিকে দুইশ’র বেশি দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা ও সিইওদের পরামর্শ অনুযায়ী ৩০টি পদক্ষেপ শনাক্ত করা হয়। তার মধ্যে মোট ১৮টি নির্দিষ্ট সময়সীমার তুলনায় এগিয়ে আছে, ৭টিতে আমরা অন ট্র্যাক আছি, ৫টিতে আমরা প্ল্যান এর থেকে পিছিয়ে আছি। এই প্রগ্রেস আমরা প্রতি দুই মাস পরপর তাদের সাথে ‘স্টেট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট’ নামে ওয়েবিনার হোস্ট করে শেয়ার করি। ওয়েবিনার এর লিংকগুলো কমেন্টে আছে। ডিসেম্বর নাগাদ সবগুলা কমপ্লিট করার টার্গেট।

যেগুলোতে রোডম্যাপ বা অরিজিনাল টাইমলাইন থেকে এগিয়ে আছি (প্রায়োরিটি অর্ডারে নয়):

১. ইনভেস্টর্স কনসালটেশন: ব্যবসায়ে প্ৰতিবন্ধকতা এবং তার সমাধান সম্বন্ধে তাদের সাথে ডিটেল আলোচনা। 

২. ১০০টি ইকোনমিক জোনের বদলে ৫টিতে ফোকাস করা। সেই পাঁচটিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, অন্যান্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর একটা রোডম্যাপ পাবলিশ করা। অব্যবহৃত জমিতে সোলার পার্ক করা। সামরিক শিল্পে সক্ষমতার জন্য একটি মিলিটারি বা ডিফেন্স ইকোনমিক জোন চালু করা।

৩. প্রতি মাসে আন্ত-মন্ত্রণালয় কো-অর্ডিনেশন মিটিং চালু করা; ব্যবসা পরিস্থিতি আলোচনা ও সমস্যা সমাধান করতে।

৪. গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান করতে আলাদা একটি টিম গঠন করা।

৫. বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টাল এর মাধ্যমে পাওয়া সেবার পারফরমেন্স ডেটা (কতগুলো সেবা দেওয়া হলো, কার কতদিন লাগলো) বিডার ওয়েবসাইট এ পাবলিক করা।

৬. এফ ডি আই হিটম্যাপ: বাংলাদেশে কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করা উচিত, কোন সেক্টরে সামনে সরকার পলিসি সাপোর্ট দেবে, এরকম একটা রিসার্চ প্রকাশ করা। এর সিকুয়েল হিসেবে একটি সেমিকন্ডাক্টর টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। আগামী মাসে তারা রিপোর্ট জমা দেবে।

৭. ফরেন কারেন্সি লোন গ্রহণ প্রক্রিয়ার উন্নতি- স্পিড টু মার্কেট, ফ্লেক্সিবিলিটি, ইত্যাদি।

৮. এনবিআর এ গ্রিন চ্যানেল বা অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর চালু করা।

৯. এনবিআর এ ডিজিটাল ইনভয়েসিং বা ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা।

১০. বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর এফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য পোর্ট স্ট্রাটেজি নির্ধারণ। এর ধারাবাহিকতায় একটি ফ্রি ট্রেড জোন স্থাপন।  

১১. স্টার্টার প্যাক: ব্যবসা শুরু করার জন্য বেসিক যে কয়টি অনুমোদন লাগে তা একটা ডিজিটাল ফর্ম এ নিয়ে আসা।

১২. বিডাতে একটি দক্ষ রিসার্চ উইং চালু করা।
 
১৩. এফডিআই প্রোমোশনে সবার জন্য প্রণোদনা বা ইনসেন্টিভ প্রোগ্রাম চালু করা।

১৪. ঢাকায় একটি ম্যাচমেকিং ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন করা।

১৫. ইনস্টিটিউশনাল এক্সেলেন্স: বিডা-বেজাকে ডি নথিতে এনে সম্পূর্ণ পেপারলেস করা। ডে-কেয়ার চালু করা কর্মচারীদের জন্য। বিডা অফিসে বিনোয়োগকারীদের এবং কর্মচারীদের জন্য ক্যান্টিন, মিটিং ফ্যাসিলিটি চালু করা।

১৬. কমিউনিকেশন স্ট্রাটেজি বা যোগাযোগ কৌশলের উন্নতি: পরিমার্জিত নতুন ওয়েবসাইট- যেটা এই মাসের শেষে লঞ্চ হবে, বিডা ও বেজার সোশ্যাল মিডিয়া প্রেজেন্স (লিংকডইন, এক্স, ফেসবুক, ইত্যাদি), লোগো রিভ্যাম্প, স্টার্টার এফএকিউ ইত্যাদি।

১৭. এনবিআর, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রতিনিধি বিডা অফিসে কোলোকেট বা সংস্থাপন করা। প্রত্যেক সরকারি অফিসের ব্যবসায়ীদের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট পারসনের নাম পাবলিশ করা।

১৮. ওয়ার্ক পারমিট/ভিসা ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থার উন্নতি।

অন ট্র্যাক:

১৯. বিডায় গুরুত্বপূর্ণ ইনভেস্টরদের জন্য রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট টিম চালু করা- একই সাথে দুই বছরের একটি প্রোগ্রাম ডিসাইন করে প্রাইভেট সেক্টরের দক্ষ অফিসারদের দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেয়া।

২০. সরকারের সবগুলো ব্যবসায়ী সেবার জন্য করা ওয়ান স্টপ সার্ভিস ও ডিজিটাল প্লাটফর্মকে একীভূত করা বা একটি সিঙ্গেল সাইন ইন প্লাটফর্ম এ নিয়ে আসা।

২১. বিভিন্ন লাইসেন্সিং এর প্রয়োজনীয়তা চ্যালেঞ্জ করে লাইসেন্স এর সংখ্যা কমিয়ে আনা।

২২. সরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাইভেটাইজ করা।

২৩. মার্জার ও একুইজিশন রুল সংস্কার।

২৪. বিডা-বেজার আইন আধুনিকীকরণ।

২৫. বিডা, বেজা, বেপজা, হাই টেক পার্ক ও পিপিপি অথরিটিতে সমন্বয়হীনতা কমাতে তাদের একই ছাতার নিচে নিয়ে আসা।

পিছিয়ে আছি: 

২৬. প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইসারি কাউন্সিল চালু করা: সরকারকে একদম আনফিল্টার্ড ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য।   

২৭. ট্যাক্স রুলস: ইনকিউবেশন, গ্রান্ডফাদারিং, সানসেট রুলস। 

২৮. ক্যাপিটাল রিপেট্রিয়েশন নীতি ও প্রক্রিয়া সংস্কার। 

২৯. বিডার সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার/আধুনিকায়ন। 

৩০. এনার্জি সিকিউরিটি বা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ স্ট্রাটেজি।

অনেকগুলো উদ্যোগ আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, ইউএনডিপি, বিভিন্ন এম্বাসি আর প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করছি। অনেকেই বিনা পারিশ্রমিকে দেশসেবা বা সাহায্য করছেন। তাদের ছাড়া কিছুতেই সম্ভব হতো না আগানো। সংস্কারের কাজ আদৌ হচ্ছে কিনা, তাদেরকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন।    

#খ 

দেশের এক্সিস্টিং বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করা এবং তাদের হয়ে পলিসি অ্যাডভোকেসি করা জরুরি। নতুনরা এসে তাদের কাছেই জানতে চাইবেন এ দেশে ব্যবসা করা উচিত কিনা। 

- বেশ কিছু কোম্পানির ইস্যু সমাধান করা হয়েছে। যেমন: ইয়ংওয়ান গ্রুপ, মেটলাইফ, শেভ্রন, লাফার্জ, বাংলাদেশ অটোমোবাইলস। তারা পাবলিকলি এগুলা শেয়ার করেছেন। আরও অনেকে বাকি আছেন। তারা ডিসার্ভ করেন। কিন্তু লোক সল্পতার কারণে সবাইকে সাহায্য করতে পারছি না।

- পলিসি অ্যাডভোকেসির ক্ষেত্রেও কাজ হচ্ছে। যেমন: ফুল ও পার্শিয়াল বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স পলিসি সংস্কার, ম্যান মেড ফাইবার আনুষঙ্গিক ইম্পোর্ট ডিউটি হ্রাস, ইন্সেটিভ এর জন্য নো ডেডাক্শন সার্টিফিকেট ইস্যু প্রক্রিয়া বদল ইত্যাদি। কিছু রিফ্লেকশন এই বাজেট এ এসেছে। আরও অনেক কিছু বাকি রয়ে গেছে। লম্বা লিস্ট। সামনে আশা করি, আরও দেখতে পাবেন। 

#গ
আমরা আগে কখনও ইনভেস্টর পাইপলাইন ট্র্যাক করতাম না। ইনভেস্টর আমাদের দেশে এমনিতেই আসবে, এই আরোগ্যান্স এর কোনো কারণ নাই। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট মেনুর অনেকগুলা অপশন এর মধ্যে একটা। তাছাড়া বিদেশে বসে গুগল সার্চ করলে আমাদের নিয়ে যে পারসেপশন তৈরি হয়, সেটা রিয়েলিটির চেয়ে অনেক বেশি নেগেটিভ। সামনের দিনগুলিতে এমন চাতক পাখির মতো যাতে বসে থাকতে না হয়, ইনভেস্টররা যাতে জানেন কেন বাংলাদেশ ২.০ আগের চেয়ে আলাদা, দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের যাতে ম্যাচমেকিং হয়, সেজন্য আমরা দুটি সামিটের আয়োজন করেছি; একটি সবার জন্য, আরেকটি চীনকে ফোকাস করে। ৬৭৫ জন বিনিয়োগকারী এসেছেন এই প্রোগ্রামগুলোতে। দ্বিপাক্ষিক মিটিং হয়েছে বাংলাদেশি এবং বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনশ’র একটু বেশি। 

আমরা আগেও বলেছি, বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট একদিনে আসে না। সামিটে এসে ইমোশনাল হয়ে কেউ হুট করে ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে ফেলে না। যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে করেন তারা জানেন। তারপরও সৌভাগ্যক্রমে তিনটি একদম নতুন বিনিয়োগ অলরেডি কনফার্ম করেছে। একটি গার্মেন্টস, একটি এয়ারলাইন্স এর এমেনিটি কিট ও একটি ঘড়ি ম্যানুফ্যাকচারার। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। দশ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে ফ্যাক্টরিগুলো চালু হলে। আরও প্রায় ১৫ টি প্রজেক্ট আছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফাইনাল হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা একটা সলিড পাইপলাইন তৈরি হলো। আগামীতে যারা বিডা চালাবেন তাদের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে না। 

ইনভেস্টমেন্ট সামিট নিয়ে একটা হাইপ তৈরি হয়েছিল। সেটা আমাদের টার্গেট ছিল না। আমি আগেও অনেকবার বলেছি, যে আমরা খালি একটা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড প্রোগ্রাম ডেলিভার করতে চেয়েছিলাম। এটার জন্য আলাদা কোনো বাহবা পাবার আশা আমরা একদম করি না। আরও ভালো করার অনেক সুযোগ আছে। কাজগুলো কমিটেড সময়ের মধ্যে হচ্ছে কিনা, এর জন্য আমাদের অ্যাকাউন্টেবল করুন। ধন্যবাদ।  

পুনশ্চ ১: অক্টোবর থেকে এপ্রিল এর বিনিয়োগের পরিমাণ আর গত বছরের একই সময়ের নাম্বারটা প্রায় একই। কিন্তু এতে বিডার কোনো ক্রেডিট বা ফেইলিওর নাই। এতো বড়ো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পরে এতো তাড়াতাড়ি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের জায়গায় ফিরে গেছে তা আশার কথা। কিন্তু এর পেছনে মূল শক্তি অর্থনৈতিক টার্ন অ্যারাউন্ড: রিসার্ভ বৃদ্ধি, এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতি, ইত্যাদি। 

পুনশ্চ ২: ইনফর্মেশন প্লিজ ভেরিফায়েড সোর্স থেকে নেবেন। ভুল তথ্যের শিকার হবেন না। আমাদের জিজ্ঞেস করুন। আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র জন য ব যবস য় আম দ র ফ সব ক সরক র গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) খামখেয়ালিজনিত এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশকে দুই কোটি মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে।

খামখেয়ালিটি হলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে হওয়া ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে (বিরোধ নিষ্পত্তির আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা) একটি মামলায় পক্ষভুক্ত না হওয়া। পক্ষভুক্ত হতে গেলে বাংলাদেশকে ৬০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতে হতো। তা করেনি পিডিবি। ফলে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে একতরফা রায় হয়েছে। দুই যুগ পর এখন বাংলাদেশকে জরিমানা দিতে হয়েছে ৩৩৩ গুণ বেশি অর্থ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ১৯ মে পিডিবিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ হিসেবে পিডিবিকে দেওয়া হবে, যা তারা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডকে। হরিপুরে ১০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের স্পনসর (পৃষ্ঠপোষক) ছিল এই স্মিথ কো-জেনারেশন।

আইনজীবী ও পিডিবির তৎকালীন পর্ষদের খামখেয়ালির কারণে আজ এত বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হলো। আইসিসির আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না করাটা ছিল মস্ত ভুল। ফলে একতরফা রায় হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে।বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

অবশ্য পিডিবি অর্থ বিভাগের ঋণ নেয়নি। সংস্থাটি নিজের তহবিল থেকে গত ২৩ মে ২৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এই পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করেই ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। জটিলতা এড়াতে তাঁরা দুজন পরে হোটেল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় (বাংলাদেশ হাউস) গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনজীবী ও পিডিবির তৎকালীন পর্ষদের খামখেয়ালির কারণে আজ এত বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হলো। আইসিসির আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না করাটা ছিল মস্ত ভুল। ফলে একতরফা রায় হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে।’

ঘটনা শুরু যেভাবে

মূল ঘটনা ১৯৯৭ সালের অক্টোবরের। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার হরিপুরে বেসরকারি খাতে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কো-জেনারেশন ইন্টারন্যাশনালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে দুটি চুক্তি করে বাংলাদেশ। কোম্পানিটির সঙ্গে পিডিবির একটি চুক্তি হয় ১৯৯৭ সালের ১৪ অক্টোবর। দুই দিন পর ১৬ অক্টোবর সরকারের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি হয় বিদ্যুৎ কেনার (পিপিএ)।

চুক্তি অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু কোম্পানিটি তা পারেনি। শর্ত ছিল নির্ধারিত দিন থেকে উৎপাদন করতে না পারলে দুই মাস মেয়াদ বাড়াবে সরকার, তবে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোম্পানিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন তো দূরের কথা, কোনো নির্মাণকাজ করতে পারেনি; বরং আরও ৬ মাস ২০ দিন সময় চায়। সরকার তা না মেনে ১৯৯৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিপিএ ও জমির ইজারা চুক্তি বাতিল করে দেয়। শুধু তা–ই নয়, ব্যাংক নিশ্চয়তার (পিজি) ১৫ লাখ ডলারও নিয়ে নেয় পিডিবি।

সচিবালয়ে গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক থেকে মার্কিন কোম্পানিটিকে ২ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য যে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যুৎসচিব ফারজানা মমতাজ এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এতে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কথা আসেনি। যদিও সম্প্রতি আলাদা এক চিঠিতে অর্থ বিভাগ এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।

বিদ্যুৎসচিবের সঙ্গে গত ১৫ মে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করে জানতে চাওয়া হয় যে যাঁদের কারণে বাংলাদেশকে এখন ২৪৫ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে, তাঁদের তিনি বাঁচিয়ে দিলেন কেন। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান।

ঘটনাটা শেষ হয়েছে। তবে পিডিবির ভুল ছিল অনেক বড়অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদবিষয়টি যেভাবে আদালতে গড়াল

অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে পাঠানো বিদ্যুৎসচিবের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটি ২০০০ সালে ঢাকার সাব জজ পঞ্চম আদালতে আরবিট্রেশন মিসকেইস (বিবিধ মামলা) এবং নারায়ণগঞ্জের সাব জজ প্রথম আদালতে আরেকটি আরবিট্রেশন বিবিধ মামলা করে। উভয় মামলাই আদালত খারিজ করে দেন। আদালতে মামলার পাশাপাশি কোম্পানিটি পরে পিপিএ বাতিল ও পিজি নগদায়নের বিরুদ্ধে আইসিসি আরবিট্রেশনে যেতে পিডিবিকে নোটিশ দেয়। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি হতে পারেন আরবিট্রেটর।

কিন্তু আইসিসি বিদেশে আরবিট্রেশন মামলায় অংশগ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনাল খরচ বাবদ নির্ধারণ করে ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা উভয় পক্ষকে সমানভাবে বহন করতে হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার দিতে হবে অগ্রিম। অর্ধেক হিসেবে তখন পিডিবির খরচ করতে হতো অগ্রিমের ৬০ হাজার ডলার।

তখনকার পিডিবির পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ট্রাইব্যুনাল খরচের কোনো অর্থ দেবে না। পিডিবির তৎকালীন আইনজীবী প্যানেল একই পরামর্শ দেয়। আইনজীবীরা আরও মত দেন, দেশে আরবিট্রেশন আইন হয়েছে ২০০১ সালে। এর আগে আইসিসির আরবিট্রেশনের রায় বাংলাদেশের বাইরে কার্যকর হবে না। তাঁরা মামলায় পক্ষভুক্ত না হতে পিডিবিকে পরামর্শ দেন।

পরে একপক্ষীয় শুনানি শেষে আইসিসি আরবিট্রেশন আদালত ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে বলা হয়, পিডিবি বছরে ৪ শতাংশ সুদসহ মোট ১ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে স্মিথ কো-জেনারেশনকে।

রায় বাস্তবায়নের ছয় মামলা

আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের রায় বাস্তবায়নে স্মিথ কো-জেনারেশন পরে ছয়টি মামলা করে। এগুলো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব অব কলাম্বিয়া, ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক, সুপ্রিম কোর্ট অব নিউইয়র্ক, স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের কোর্ট অব সেশন, সুইজারল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব বাডেন এবং ঢাকার আদালতে।

আইসিসির রায় বাস্তবায়নে ২০০৭ সালের ২০ জুলাই রায় দেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব কলাম্বিয়া। স্মিথ কো-জেনারেশন এ আদালতে বিষয়টি আবার উত্থাপন করে। এরপর ২০২৪ সালের ১৯ মে পিডিবির বিরুদ্ধে সংশোধিত চূড়ান্ত রায় দেন আদালত। এবারের রায়ে বলা হয়, পিডিবি ৩ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার পরিশোধ করবে স্মিথ কো-জেনারেশনকে। কোম্পানিটি তখন তার আইনি প্রতিষ্ঠান ডোয়ান মরিস এলএলপিকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু রায় আর বাস্তবায়ন হচ্ছিল না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে গত ২৮ মে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনিও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর যে বিপদে পড়েছিলেন

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন যায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন একটি দল, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও ছিলেন। ২১-২৬ অক্টোবর (২০২৪) ছিল এ বার্ষিক সভা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপদেষ্টা ও গভর্নরের ওয়াশিংটন যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে স্মিথ কো-জেনারেশন আরেকটি মামলা করে ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায়। আদালত তখন অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের জবানবন্দি নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু যেহেতু অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা আছে এবং তাঁরা পিডিবির সঙ্গে সম্পর্কিত নন, তাই তাঁরা জবানবন্দি দেননি।

স্মিথ কো-জেনারেশন তখন আবার আদালতে (যুক্তরাষ্ট্র) যায়। আদালত ২৫ অক্টোবর (২০২৪) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আহসান এইচ মনসুরকে আটক করে আদালতে নিয়ে আসতে ইউএস মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা দুজন তখন আশ্রয় নেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবনে। তাঁরা ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসির ১০ নম্বর সড়কে অবস্থিত অ্যাম্বাসি স্টু হোটেলে। দূতাবাসের গাড়িতে করে তাঁরা ম্যারিল্যান্ডে রাষ্ট্রদূতের বাসায় চলে যান।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগ এলএলপিকে নিয়োগ দেয়। তারা আপিল করলে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করেন এবং শুনানির দিন ধার্য করেন ২৮ অক্টোবর (২০২৪)। ফলি হোয়াগ এলএলপি বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতার আবেদন জানায় বিচারকের কাছে এবং বিচারক তা গ্রহণ করেন। এভাবেই অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর ওই যাত্রায় রক্ষা পান।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ৩০ জুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটা শেষ হয়েছে। তবে পিডিবির ভুল ছিল অনেক বড়।’

বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ২ কোটি ডলারের বাইরে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডলার দিতে হয়েছে।নিষ্পত্তির পথ খুলল যেভাবে

মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়কে ভিত্তি ধরে দেশে তখন গুরুত্বের সঙ্গে কাজ শুরু করেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এরপর স্মিথ কো-জেনারেশনের মধ্যস্থতাকারী, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান অনলাইনে ৫টি বৈঠক করেন। শুরুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, জব্দ করা ব্যাংক নিশ্চয়তার ১৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হোক। বিপরীতে স্মিথ কো-জেনারেশন দাবি করে ৩ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। আরও দাবি করে, মামলার খরচ বাবদ আরও ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার তাদের দিতে হবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রস্তাবে কোম্পানিটিকে বলা হয়, ১৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান আইনের আওতায় বিদ্যুৎ খাতে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। এতেও রাজি হয়নি স্মিথ কো–জেনারেশন। বাংলাদেশ পরে ১ কোটি ডলারে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেয়। স্মিথ কো-জেনারেশন তখন নতুন প্রস্তাব দেয়। সেটি হলো, এককালীন ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। অথবা ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার ও দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তারা মেনে নেবে।

বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্ততায় থাকা বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে গত ২৬ মে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অবশ্য অর্থ বিভাগ ও পিডিবি সূত্র জানায়, পরে স্মিথ কো-জেনারেশন ২ কোটি ডলারে রাজি হয়। বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নেয়, এই পরিমাণ অর্থ ওই কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আগেই সম্মতি দিয়ে রেখেছিলেন (গত ১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা। গত ২৮ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ২ কোটি ডলারের বাইরে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডলার দিতে হয়েছে।

ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে অংশ নিলে বাংলাদেশেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল, যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি তারা (যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি) পারেনি। অথচ আজ বড় অঙ্কের জরিমানা তো গুনতে হচ্ছেই, মাঝখানে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হলো এবং দেশের বদনাম হলো।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ‘দেশের বদনাম হলো’

১৯৯৬-৯৯ সময়ে পিডিবির চেয়ারম্যান ছিলেন নুরউদ্দিন মাহমুদ কামাল, তিনি ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর মারা যান। ১৯৯৯-০০ সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সচিব কামরুল ইসলাম সিদ্দিক, যিনি মারা যান ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ২০০০-০২ সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ মালেক, যিনি মারা যান ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে অংশ নিলে বাংলাদেশেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল, যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি তারা (যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি) পারেনি। অথচ আজ বড় অঙ্কের জরিমানা তো গুনতে হচ্ছেই, মাঝখানে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হলো এবং দেশের বদনাম হলো।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ জীবিত থাকলে শাস্তি দিতে হবে। এমনকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডিবিরও শাস্তি পাওয়া উচিত। অর্থ বিভাগের পরামর্শ মেনে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ