রাজধানীর অলিগলির রাস্তায় পশু কোরবানি
Published: 7th, June 2025 GMT
দেশে আজ শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে। সকালে ঈদের নামাজ শেষে রাজধানীর মহল্লার অলিগলির রাস্তায় পশু কোরবানি করছেন নগরবাসী। দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানির অনুরোধ করা হলেও তা তেমন মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ নগরবাসী বাড়ির সামনের রাস্তায় কোরবানি দিচ্ছেন।
রাজধানীর রায়েরবাগ, সেগুনবাগিচা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকাসহ প্রায় সব এলাকায় এই চিত্র দেখা গেছে। যত্রতত্র চলছে পশু জবাই, মাংস কাটাকাটি আর চামড়া ছাড়ানোর কাজ।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্ধারিত জায়গা কোথায় আছে? কোনো পার্ক বা মাঠে নিতে গেলে অনেক দূর। সেখানে গরু নেয়া কষ্টকর। তাছাড়া ঈদের দিনে এত মালামাল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া সহজ না।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই রাস্তাটাই তো আমাদের। আমরা নিজেরাই তো পরিষ্কার করে ফেলি। কারো তো অসুবিধা করছি না।’’
আরো পড়ুন:
গোর-এ-শহীদ ময়দানে লক্ষাধিক মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়
বায়তুল মোকাররমে ২য় জামাতে মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা
সেগুনবাগিচার একটি মসজিদের ইমাম হাফেজ বারেক বলেন, ‘‘সকালের মধ্যে রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে রাজধানীর অনেক রাজপথ। কোরবানির পরপরই কেউ কেউ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেও অধিকাংশ স্থানে রক্ত জমে থাকছে। কিছু এলাকায় রাস্তার পাশে ড্রেনের মুখে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।’’
বৃষ্টি হলে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তারা বলেন, ‘‘পানি নামতে পারবে না, ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন দুর্গন্ধে চলা দায় হবে।’’
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পশুবর্জ্য সরাতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হলেও দেখা গেছে, তারা সব জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না। গত কয়েক বছর ধরে পশু জবাইয়ের স্থানে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবাণুনাশক কার্যক্রম চলত। কিন্তু এ বছর তা নেই বললেই চলে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র বহিষ্কৃত হয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর তাদের বহিষ্কার করা হয়। সেখানে সরকারি নির্ধারিত দুই প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, ‘‘পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থান বাসা থেকে অনেক দূরে। তাই বাধ্য হয়ে তারা ঘরের সামনের রাস্তা বেছে নিয়েছেন।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানির সময় শহরের এ অব্যবস্থা আসলে দীর্ঘদিনের নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতার প্রতিফলন। প্রতি বছরই এমন দৃশ্য দেখা গেলেও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড.
যদিও অনেকে কোরবানির পর নিজেরা পানি দিয়ে রক্ত ধুয়ে দিচ্ছেন। বর্জ্য বস্তায় ভরে রাখছেন। নিজেরা জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি গলিতে কথা হয় গৃহিণী রুবিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো এখানেই থাকি। কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে তো আমরাও ভুগবো। তাই নিজেরাই পরিষ্কার করছি।’’
সেখানে কথা হয় আব্দুল জব্বারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘কোরবানি দেয়া শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, নাগরিক দায়িত্ববোধও বটে। সিটি কর্পোরেশনের একদিনের অভিযান যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন পরিকল্পিত প্রস্তুতি, কঠোর প্রয়োগ এবং নাগরিকদের আন্তরিক অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে হয়ত একদিন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোরবানির উৎসব উদযাপন হবে।’’
ঢাকা/এএএম/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ইদগাহে ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন: ডিএসসিসি প্রশাসক
পবিত্র ইদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থাটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ।
তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জামাত আয়োজন অনুপযুক্ত হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।”
আরো পড়ুন:
ঈদযাত্রা: কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ঢল
১৯৮তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, নিরাপত্তায় জোর
মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘ঈদের নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের জন্য নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সেবা ব্যবস্থা, যেমন: প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য বিশাল আয়োজনে ঈদ জামাতের আয়োজন, ভিআইপি ব্লকে একসঙ্গে ২৫০ জনের নামাজের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন, ওজু, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থা, মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা, পৃথক প্রবেশ ও প্রস্থান গেট, নারী মুসল্লির জন্য পৃথক ব্লকে নামাজের ব্যবস্থা ও পৃথক প্রবেশপথ।”
তিনি আরো বলেন, “নগরবাসীর কোরবানির পশু কেনাবেচার সুবিধার্থে ৮টি জায়গায় অস্থায়ী হাট স্থাপন করা হয়েছে। এসব হাটে পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পুলিশ ও এটিএম বুথ, পশু স্বাস্থ্য সেবার জন্য চিকিৎসক ও মেডিকেল টিম থাকবে। হাট শেষ হওয়ার পরপরই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”
শাহজাহান মিয়া বলেন, “কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের লক্ষ্যে ডিএসসিসির প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ২০৭টি ডাম ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি রেখেছি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ, ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ২২২ গ্যালন স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের জামাত, কোরবানি হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা- কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কোরবানির হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগর ভবনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।”
“নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে এবং বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে সহযোগিতা করত”, যোগ করেন তিনি।
নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, “আপনারা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের জামাতে অংশ নিন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করব, ইনশাআল্লাহ।”
সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমানসহ সব বিভাগীয় প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/মাসুদ