ঈদের দিন বিকেলে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে বেড়িয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে সংসদ ভবন ও জিয়া উদ্যান এলাকায় দেখা গেল অসংখ্য মানুষের ভিড়। কেউ দাঁড়িয়ে দূর থেকে সংসদ ভবন দেখছেন। কেউবা আবার সংসদ ভবনকে পেছনে রেখে ছবি তুলছেন। লেকের পাশে সড়কের ফুটপাতে বসে বেলুন বিক্রি করছেন এক দোকানি। তাঁর দোকান ঘিরে বেশ কয়েকজন উৎসাহী শিশু দাঁড়িয়ে।
সামান্য দূরেই চার–পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশু রাস্তা দিয়ে যাওয়া গাড়ি দেখছে আর বারবার দুই হাতে তালি দিয়ে লাফ দিয়ে উঠছে। পাশে থাকা বাবা–মায়ের দিকে ফিরে বলছে, ‘গাড়ি গাড়ি, বড় বড় গাড়ি।’ আনন্দ যেন তার ধরছেই না। শিশুর হাসি ছড়িয়ে পড়ছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাবা–মায়ের মধ্যেও।
কথা বলে জানা গেল, শিশুর বাবার নাম আজিজুল ইসলাম। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। ঈদে ছুটি কম থাকায় পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করছেন। বললেন, ‘শহরে তো সব সময় বেড়ানো যায় না। তাই ফাঁকা ঢাকাতে বাচ্চাকে সংসদ ভবন দেখাতে নিয়ে এসেছি। খুব আনন্দ পাচ্ছে।’
আজিজুল ইসলামের মতোই ফাঁকা ঢাকায় ঈদের খুশি আরও বাড়াতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের আগমনে ঢাকার সড়কগুলো রীতিমতো একেকটি বিনোদনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনা পার্ক, শাহবাগ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জিয়া উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ছোট ছেলেমেয়েদের কেউ কেউ হাতে বেলুন, মাথায় ক্যাপ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই দল বেঁধে নতুন পোশাক পরে ছবি তুলছেন।
বিকেল যত গড়াতে লাগল, তত মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে রাজধানীর জিয়া উদ্যানে। কেউ পরিবার, কেউ বন্ধুবান্ধব আবার কেউবা একাই চলে এসেছেন ঘুরতে। ঘোরার ফাঁকে ফাঁকে ভেলপুরি, আম মাখানো, ঘটি গরম আর আইসক্রিম খাচ্ছেন কেউ কেউ। উদ্যানের সঙ্গের লেকের পাশেই বাঁশির পশরা সাজিয়ে বসেছেন এক বাঁশিওয়ালা। তাঁকে ঘিরেও ভিড় করে রয়েছে কিছু মানুষ। শিশুদের চোখ পথের দুই পাশে থাকা রঙিন খেলনার দিকে।
এ সময় কথা হয় পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শর্মিলা মুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ঢাকাতে ঈদ করছি। এত ফাঁকা ঢাকা আগে কখনো দেখিনি। যানজট নেই, ফাঁকা সড়কে ঘুরে আনন্দ পাচ্ছি।’
ঈদে ঢাকায় ঘোরাঘুরি করা মানুষদের কেউ কেউ ঈদ উদ্যাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যেতে চেয়েও পারেননি বা যাননি। তাই ঈদকে আনন্দময় করতে সামান্য সময়ের জন্য হলেও বের হয়েছেন তাঁরা। ঘুরতে বের হওয়া নগরবাসী বলছেন, ঢাকার রাস্তায় এই স্বস্তিকর পরিবেশ আসলে শহরবাসীর চাপমুক্তির একটি দিন। যানজটমুক্ত একটি দিনে এই নগরের ভিন্ন এক রূপের স্বাদ পায় মানুষ।
সন্ধ্যায় রমনা পার্কে কথা হয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন তিনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বের হওয়ার জন্য আলাদাাভাবে সময় পাই না। রাস্তায়ও জ্যাম থাকে। ঈদের দিন রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় ভালো লাগছে।’
বিকেল শেষে সন্ধ্যার আলো ছায়ায় যখন রাস্তার বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে, তখনো সড়কে মানুষ হাঁটছে, হাসছে, ছবি তুলছে। ঢাকার সড়কগুলো আজ শুধু চলাচলের পথ নয়, হয়ে উঠেছে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির উন্মুক্ত এক মঞ্চ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তরিক হোন
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার এবং এর নিচের সড়কগুলো ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল যানজট নিরসন করা; অপরিকল্পিত নকশা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং আইন না মানার কারণে সেটিই হয়েছে এখন গলার কঁাটা। পদ্মা সেতু থেকে পাওয়া মূল্যবান সময়টুকু ঢাকার প্রবেশপথেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে এই যানজট কেবল সময়ের অপচয় নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির ওপরও ফেলেছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।
প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ফ্লাইওভার শনির আখড়া থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করলেও এর তিনটি অংশ স্থায়ী যানজটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে—উঠে আসার অংশ, সায়েদাবাদ অংশ এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান টোল প্লাজা ও চানখাঁরপুল অংশ। গুলিস্তান টোল প্লাজার ধীরগতি এবং সায়েদাবাদে সৃষ্টি হওয়া জট মূলত ফ্লাইওভারের সুফলকে ম্লান করে দিচ্ছে। কিন্তু এই জটের মূল কারণ নিছক বেশি যানবাহন নয়, বরং ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা।
নগর–পরিকল্পনাবিদদের মতে, আধুনিক পরিবহনব্যবস্থায় অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয় না, কারণ এটি নিচের রাস্তার ট্রাফিক পরিচালন ক্ষমতাকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেয়। হানিফ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ফ্লাইওভারের ওপর চাপ কমাতে নিচের সড়কগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। ফলে নিচের যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ সড়কটি সংস্কারের অভাবে বেহাল এবং রাস্তাজুড়ে গর্ত, পানি আর ধুলার রাজত্ব। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের চাপ গিয়ে পড়ছে ফ্লাইওভারের ওপর, যেখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে নামার মুখে।
তবে এই অব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটি হলো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক নৈরাজ্য। ধারণক্ষমতা ৭০০-৮০০ বাস হলেও সেখানে রাখা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার বাস। টার্মিনালের বাইরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শত শত পরিবহন কাউন্টার। দুর্ঘটনা বা অবৈধ কাউন্টারের কারণে যখন একটি লেনের যানবাহন উল্টো সড়কে চলে আসে, তখন যাওয়া-আসা উভয় পথের গতি রুদ্ধ হয়ে যায়।
যাত্রাবাড়ী এলাকার যানজট কেবল ট্রাফিক আইন অমান্য বা রাস্তার দুর্বলতার ফল নয়, এর জন্য দায়ী পরিবহন খাতে জেঁকে বসা প্রভাবশালী সিন্ডিকেটও। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
প্রতিদিন লাখো যাত্রীর দুর্ভোগ কমাতে হলে এখন শুধু ফ্লাইওভারের ওপর নয়, নজর দিতে হবে এর নিচেও। নিচের ভাঙাচোরা সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। এর ফলে ফ্লাইওভারের ওপরের চাপ কমে আসবে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, এর আশপাশ এলাকা ও সড়কগুলোকে অবৈধ দখল ও কাউন্টারমুক্ত করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে নিচের সড়কগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।