কয়েক দিন ধরে প্রায়ই মাথাটা ব্যথা করছে। মনে হলো, অনেক প্রশ্নের উত্তরই তো গুগলে পাওয়া যায়, এ বিষয়ে একটু সার্চ করে দেখি তো। উপসর্গ লিখে অনুসন্ধান করতেই সব কারণ, লক্ষণ বিশদভাবে তুলে ধরল গুগল। আসতে থাকল একের পর এক রোগের বর্ণনা। মাথাব্যথার একটি অন্যতম কারণ ব্রেন টিউমার—এটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মাথায় ঢুকে গেল, নিশ্চয় ব্রেন টিউমার হয়েছে। অন্যান্য উপসর্গ পড়তে পড়তে দেখেন, আরে, সব তো মিলে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেল। দুর্বল লাগতে থাকল। আতঙ্কে কোনো কাজ করতে আর ভালো লাগে না, খেতে ইচ্ছে করে না, কোনো কাজে আগ্রহ পাওয়া যায় না। ওজন কমে যাচ্ছে। নতুন সৃষ্ট সমস্যাগুলোকে আরও বেশি ক্যানসারের সঙ্গে মেলানো যাচ্ছে। জীবন শেষ, এই হতাশা পেয়ে বসল।

তারপর এসব সমস্যা নিয়ে আপনি চিকিৎসকের কাছে গেলেন। চিকিৎসক পরীক্ষা করে টিউমারের কোনো লক্ষণ না পেয়ে আশ্বস্ত করলেন। কিন্তু আপনি আশ্বস্ত হতে পারলেন না। আপনার দৃঢ় বিশ্বাস যে টিউমারই হয়েছে। মাথার সিটিস্ক্যান স্বাভাবিক, তাতে কী, এমআরআই করার জন্য জোর করতে লাগলেন। এমআরআইও স্বাভাবিক, কিন্তু আপনি সন্তুষ্ট নন। নিশ্চয় এই চিকিৎসক ধরতে পারছেন না, আপনি আরেক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হলেন। এভাবে একের পর এক চিকিৎসকের কাছে যেতে যেতে আপনার দস্তা দস্তা ফাইল হয়ে গেল, কিন্তু রোগনির্ণয় হয় না। মানসিক চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদিকে বাড়ছে মাথাব্যথার তীব্রতাও। আপনার স্বাভাবিক জীবন লাটে উঠল। আপনি রীতিমতো শয্যাশায়ী। এই যে গোটা জার্নি, এটি নিজেই আসলে এক ধরনের রোগ, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় হাইপোকনড্রিয়াসিস।

হাইপোকনড্রিয়াসিস কী

হাইপোকনড্রিয়াসিস হচ্ছে একধরনের মানসিক ব্যাধি, যেখানে রোগীর মনে হতে থাকে তাঁর কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছে, কিন্তু যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এ সমস্যায় রোগীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের কোনো জটিল রোগে ভুগছেন বলে মনে করতে থাকেন, যেমন ক্যানসার, স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ বা হার্টের রোগ। সচরাচর যেসব লক্ষণ দেখা যায়:

১.

   কোনো একটা রোগ বা সমস্যা নিয়ে সর্বদা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে। সেই ভয়, আতঙ্ক থেকে শরীরে আরও ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ উপসর্গ তৈরি হতে থাকে।

২.   এই রোগীরা বারবার চিকিৎসকের কাছে সমস্যা নিয়ে যান। বারবার চিকিৎসক পরিবর্তন করেন।

৩.  শরীরে নতুন কোনো সমস্যা তৈরি হলো কি না, বারবার তা পর্যবেক্ষণ করেন। যেকোনো সমস্যা বা শারীরিক পরিবর্তনকে তাঁর মনে সৃষ্ট রোগের সঙ্গে মেলাতে থাকেন। যেমন একটু কাশি হলেই মনে করেন, ফুসফুসে ক্যানসার হয়েছে। বুকে সামান্য ব্যথা করলেই মনে হয় হার্টঅ্যাটাক করেছে বা চোখের পাপড়ি, মাংসপেশি একটু কাঁপলেই ভাবেন স্ট্রোক করেছে।

৪.   চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করলেও মাথা থেকে দুশ্চিন্তা সরাতে পারেন না বা কিছুদিন আশ্বস্ত হলেও কয়েক দিন পর আবার ফিরে আসে দুশ্চিন্তা।

৫.   চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে নানা রকমের পরীক্ষা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন, যেমন সিটিস্ক্যান, এমআরআই, কোলনোস্কপি, এন্ডোস্কোপি। একটা করার পর আরেকটা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। অনেক সময় চিকিৎসক কথা না শুনলে আরেক চিকিৎসকের কাছে একই অনুরোধ করতে থাকেন।

৬.   অনেকেই ওই রোগ বা সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন ও পড়াশোনা করেন। গুগলে সার্চ করেন। একে-ওকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন ও তথ্য নিতে চেষ্টা করেন।

৭.   চিকিৎসা নেওয়ার চেয়ে রোগনির্ণয়ের ব্যাপারে তাঁরা বেশি আগ্রহী থাকেন। চিকিৎসকেরা তাঁর দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় বাতলে দিলেও রোগী তা গ্রহণ করতে আগ্রহী হন না। এই ব্যক্তিরা সব সময় মনে করেন, কোনো না কোনো একটি পরীক্ষা করা বাকি আছে, যা তাঁর রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হবে। আসল রোগটি এখনো ধরা পড়েনি, তাই ওষুধ খেয়ে লাভ নেই।

গুগলের কারণে আমাদের অনেক কাজ সহজ হয়ে গেছে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র ক ছ সমস য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের

প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।

ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।

লক্ষণ বা উপসর্গ

এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—

অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।

তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।

ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।

সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।

গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।

বয়স ও বংশগতির প্রভাব।

ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।

নির্ণয় ও চিকিৎসা

আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।

টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কেন সচেতনতা জরুরি

ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
  • ডোনাল্ড ট্রাম্প ভুগছেন ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সিতে, এই রোগ সম্পর্কে কতটা জানেন