‘কতক্ষণ প্রাণে বাঁচবেন’, তা নিয়েই ভাবনা ইউক্রেনে বাংলাদেশিদের
Published: 7th, June 2025 GMT
ইউক্রেনে রুশ হামলার পর এবার তৃতীয়বারের মতো সেখানে ঈদুল আজহা পালন করলেন মো. আবদুল জব্বার। তাঁর গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বাজারে। ইউক্রেনে রুশ হামলার পর তাঁর সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। তিনি থাকেন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একেবারে কেন্দ্রস্থলে, দেশটির পার্লামেন্ট ভবনের কাছে। গত তিন বছরে, বিশেষ করে ঈদের দিনটায় রাজধানী কিয়েভ বা অন্যত্র থাকা বাংলাদেশিরা কেমন করে ঈদ করছেন, তা জানতেই জব্বারসহ অনেকের সঙ্গেই আগে কথা হয়েছে। আজ শনিবারও কথা বললাম। ইউক্রেনে অবশ্য গতকাল শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হয়েছে।
যুদ্ধের মধ্যে থাকা দেশটিতে ঈদের আনন্দ ম্রিয়মান ছিল বরাবরই। কিন্তু এবারের মতো অবস্থা আগে হয়নি, এমনটাই বলছিলেন জব্বার। এর কারণ প্রসঙ্গে জব্বার বলছিলেন, ‘শহরে টেকা যাইতেছে না। একটু পরপর সাইরেন বাজে। বিস্ফোরণের শব্দ সবখানে। কোথায় পড়তেছে বোমা, কারা মরে যাইতেছ, বোঝা যায় না। যুদ্ধের পর এমন অবস্থা দেখিনি।’
প্রায় সাত দিন ধরেই ইউক্রেন এবং সেই সঙ্গে কিয়েভে বিস্ফোরণ বাড়ছে, এমন কথা জানালেন সেখানে বাংলাদেশিদের কয়েকজন। বৃহস্পতিবার রাতটা প্রায় পুরোটাই নির্ঘুম কাটিয়েছিলেন জব্বার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তার পরদিন ঈদ মোটেও ভালো কাটেনি তাঁর। নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন কাছের মসজিদে। কোরবানি করার কথা ছিল বাসা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের বরিসপিল বিমানবন্দরের কাছের একটি এলাকায়, কিন্তু পারেননি। কারণ জানতে চাইলে জব্বার বলছিলেন, ‘সেখানে বেশির ভাগ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ওই এলাকায় যাওয়ার পথে যদি কোনো ঝামেলা হয়, সেই ভয়েই আর যাইনি। এই প্রথম কোরবানির দিন কোরবানি দিতে পারলাম না। অথচ গরুর অভাব নেই। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব এখন প্রকট।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরু হয়। এরপর দেশটির রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা বাংলাদেশিদের অনেকেই চলে যান। তবে এখন পর্যন্ত জব্বারের মতো কেউ কেউ আছেন। যাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই দেশটিতে আছেন দুই থেকে তিন দশক ধরে। সেখানেই বিয়েথা করে থিতু হয়েছেন। সুন্দর জীবনের সন্ধানেই ছিল এই বিদেশযাত্রা। সবকিছু ভালোই চলছিল। তারপর যুদ্ধের ইউক্রেন তাঁদের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে এল। ঈদের মতো আনন্দের দিনগুলোও এখন আর আগের মতো নেই। এবার সেই ঈদের দিন পরিণত হয়েছে ‘ভয়ানক’ দিনে, বলছিলেন কিয়েভের নিপ্রোস্কি এলাকার বাসিন্দা মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী
অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।
ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।