২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের জিও কোম্পানি বাজারে আসে। তারা সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া শুরু করে। তখন ইন্টারনেটের দাম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয় তারা। এই একটি সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে যায় ৭০০ শতাংশ। এটি ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন তৈরি করে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিশাল জনগোষ্ঠীর বাজার হয়ে ওঠে। ব্যাপক হারে অনলাইনে ব্যবসা বাড়তে থাকে। এই বিশাল ডিজিটাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করতে নতুন নতুন স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের জন্য উদাহরণটি গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু এখনও অনেকেই সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না শুধু এর খরচ বেশি হওয়ার কারণে। দুই সপ্তাহ আগে আমি একজনকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করেছিলাম, কিন্তু কল পৌঁছায়নি। পরে তাকে মোবাইলের সিমে ফোন দিলাম, সে ধরল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেছিলাম, পাইনি। সে উত্তর দিল, ভাই, আমি ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিলাম। তার কথা শুনে আমি তো একদম হতবাক। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি নেট বন্ধ রাখো কেন? সে বলল, যখন চালু রাখি তখন ৫০০ এমবি বা ১ জিবি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। তখন আমি বুঝলাম, মানুষের মনে একটা ভয়– যদি নেট চালু রাখি, তাহলে সব ডেটা শেষ হয়ে যাবে। 

ইন্টারনেট এমন একটি মৌলিক সেবা হয়ে উঠুক, যা বিদ্যুৎ বা পানির মতো– সব সময় চালু থাকে। আমাদের এমন একটা অবস্থায় পৌঁছাতে হবে, যেখানে মানুষ নিজে থেকেই বলবে– যেহেতু ইন্টারনেটের দাম এত কম, তাহলে আমি বন্ধ রাখব কেন? এটা হলো অর্থনীতিতে ভারসাম্য বিন্দু। যখন দাম এতটা সহনীয় হয়ে যাবে যে কেউ আর ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে চাইবে না। কম দামে ইন্টারনেট শুধু একটি প্রযুক্তিগত সুবিধা নয়; এটি অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। প্রথম ধাপে ইন্টারনেট সাশ্রয়ী হলে মানুষ বেশি ব্যবহার করতে শুরু করবে। দ্বিতীয় ধাপে এই বাড়তি ব্যবহার উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন বাজার সৃষ্টি করবে। তৃতীয় ধাপে এই বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন স্টার্টআপ ও ব্যবসা। চতুর্থ ধাপে এসব স্টার্টআপের জন্য আসবে নতুন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। এর ফলে অর্থনীতিতে বড় ঢেউ তৈরি হবে। এই পুরো প্রক্রিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে, এটির অন্তর্নিহিত গণতান্ত্রিকতা। কম দামে ইন্টারনেট প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন তরুণকেও সুযোগ করে দেবে, যার আগে হয়তো রাজধানীতে আসার সামর্থ্য ছিল না। সে তার গ্রামের মধ্যেই প্রযুক্তিনির্ভর একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা চালু করতে পারবে– হোক সেটা হোয়াটসঅ্যাপভিত্তিক হোম ডেলিভারি সেবা, একটি অনলাইন কোচিং বা সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি। এই ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি শুধু শহুরে নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতির জন্যও গেম চেঞ্জার হতে পারে। 

বর্তমানে ইন্টারনেটের একটা চাহিদা আছে, একটা সরবরাহ আছে। চাহিদা হচ্ছে– যত দাম বেশি, তত ব্যবহারকারী কম। তাই দাম যখন বেশি থাকে, তখন চাহিদা কম থাকে। আমাদের করতে হবে কী? দাম এতটা কমিয়ে আনতে হবে যেন চাহিদা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। মানে এটা শুধু ঢাকার জন্য না, গুলশানের জন্যও না– পুরো বাংলাদেশের জন্য। যখন ইন্টারনেটের দাম কমে যাবে তখন দেশের সর্বত্র– গ্রাম, মফস্বল, শহরে– ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়বে। তখনই নতুন নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। 

এই প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো ইকোনমিকস অব স্কেল। সহজভাবে বললে, যখন কোনো জিনিসের চাহিদা কম থাকে, তখন সেটার জন্য ব্যবসা চালানো হয়তো লাভজনক হয় না। কিন্তু যখন ব্যবহারকারী বাড়ে, তখন সেই একই ব্যবসা অনেক বেশি লাভজনক হয়ে ওঠে। 

 বাংলাদেশে এখনও অনেক অঞ্চল– যেমন কুমিল্লা, জয়পুরহাট বা ঠাকুরগাঁও– এমনকি জেলা শহরগুলোতেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। যদি ইন্টারনেটের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় এবং এসব এলাকায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে বেড়ে দুই লাখে পৌঁছে যায়, তখন স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসার viability (টেকসই সম্ভাবনা) অনুভব করবে। সে নিশ্চিত হবে যে তার সেবা গ্রহণের মতো পর্যাপ্ত গ্রাহক রয়েছে।

যদি কোনো উদ্যোক্তা দেখে যে তার এলাকায় দুই লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, তার সেবার সম্ভাব্য গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে, তখন নিজেই উদ্যোগ নেবে একটি ফুড ডেলিভারি সেবা, একটি অনলাইন বাজার কিংবা একটি ঘরোয়া অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম শুরু করার। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহী হবে। যখন তারা দেখবে একটি অঞ্চলে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ব্যবহারকারীতে রূপান্তর হচ্ছে, তখন তারা বুঝবে– হ্যাঁ, এখন এখানে বাজার তৈরি হয়েছে, চাহিদা আছে। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ যদি সত্যিকার অর্থেই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদ্ভাবনী ও বিকাশবান্ধব ডিজিটাল অর্থনীতির স্বপ্ন দেখে, তবে ইন্টারনেটের মূল্যহ্রাসকে শীর্ষ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ নয়; ডিজিটাল সচেতনতা, শিক্ষা ও উদ্যোক্তাদের সহায়তাও একযোগে নিশ্চিত করতে হবে। 

এখানে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট, উদ্যোক্তা মানেই শুধু সিলিকন ভ্যালির স্টার্টআপ সংস্কৃতি নয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় সমস্যার সমাধান যে করবে সেও উদ্যোক্তা। তাই ভবিষ্যতের উদ্যোক্তারা কেবল ধানমন্ডি বা বনানীতে জন্মাবে না– তারা উঠে আসবে ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা কিংবা নীলফামারীর মতো জায়গা থেকেও, যদি সেখানে ইন্টারনেট থাকে এবং তা হয় সাশ্রয়ী। 

ধরা যাক, বগুড়ার ১০ হাজার মানুষ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আছে। তারা একে অপরের কাছ থেকে পণ্য অর্ডার দিচ্ছে, কেউ গিয়ে সেটা পৌঁছে দিচ্ছে। এটাও এক ধরনের ব্যবসা। উদ্যোক্তা মানেই যে বড় কোম্পানি বানাতে হবে, তা নয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেউ যদি একটা সমস্যার সমাধান বের করতে পারে, সে এক ধরনের উদ্যোক্তা। তরুণদের সবার হাতে এখন স্মার্টফোন আছে, কিন্তু অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে শুধু ফেসবুক বা ইউটিউব দেখতে। অথচ সঠিক প্রশিক্ষণ ও উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে এই তরুণদের অনেকেই হয়ে উঠতে পারে একজন ডিজিটাল উদ্যোক্তা। 

এটি সম্ভব তখনই যখন ইন্টারনেট থাকবে সর্বত্র, সর্বদা এবং সবার নাগালে। সুতরাং ইন্টারনেটকে বিলাসিতা নয়, বরং মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করার সময় এসেছে। একবার যদি মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে ইন্টারনেট অফ রাখার দিন শেষ, আর ‘সর্বদা অন’ নেটওয়ার্কেই রয়েছে ভবিষ্যৎ, তখনই আমরা দেখতে পাব একটি নতুন তরুণ প্রজন্ম উঠে আসছে, যারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। 
 
তানভীর আলী: কনস্টিলেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর; সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এর অন্যতম প্রবন্ধ উপস্থাপক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প ব যবহ র কর স ট র টআপ বন ধ র খ রক র র র জন য র করত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে

মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)

মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।

মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তি

পৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)

আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭

মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।

এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্ব

মৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।

এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)

হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)

মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়

ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।

তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়

ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।

বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।

প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।

আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়া

মৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)

মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।

নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।

হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১

সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)

এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।

মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)

মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)

ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।

আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ