Samakal:
2025-09-18@03:35:09 GMT

শিক্ষা বাজেট: যেই লাউ সেই কদু

Published: 9th, June 2025 GMT

শিক্ষা বাজেট: যেই লাউ সেই কদু

বাজেট নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই এর আগে ও পরে অনেক আলোচনা হয়। বাজেটের আগে সব খাতের অংশীজনই তাদের স্ব-স্ব খাতের জন্য প্রত্যাশিত বরাদ্দ দাবি করেন। শিক্ষা খাত নিয়েও এমন বিস্তর আলোচনা হয়। গত ২৯ এপ্রিল সিরডাপে এমনই এক আলোচনায় বলেছিলাম, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট এবং হয়তো শেষ বাজেটও। সে জন্য এ সরকার শিক্ষা বাজেটে এমন উদাহরণ সৃষ্টি করুক, যা পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। বাস্তবে এবারের বাজেটে সেই পুরোনো ধারাই দেখলাম। অন্তত শিক্ষা বাজেটের ক্ষেত্রে তা-ই বলা যায়।    

২ জুন অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপনের আগেই সংবাদমাধ্যমে খবর হয়, প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ কমছে আর মাদ্রাসা ও কারিগরিতে বাড়ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা– যা আগের বছরের মূল বাজেটের তুলনায় কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে। আমি মনে করি না, এই কিছু বরাদ্দ বাড়ানো বা কমানোর মধ্যে কোনো অংশকে বেশি বা কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বরং সার্বিকভাবে গোটা শিক্ষা খাতই যে অবহেলিত থাকছে, সে আলাপটা জরুরি। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের মূল বাজেটে ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা যেমন জরুরি, তেমনি মাধ্যমিক, কারিগরি, মাদ্রাসা কিংবা উচ্চশিক্ষা কোনোটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সামগ্রিকভাবে আমরা দেখছি, বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশেরও কম। অথচ শিক্ষা বাজেটের আলোচনায় এলেই আমরা ইউনেস্কোর নির্দেশনা অনুযায়ী জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলি। মোট বাজেটের শতাংশ হিসেবে দেখলেও ১২ শতাংশের বৃত্তেই ঘুরপাক খায় শিক্ষা বাজেট। এখানে ২০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি করা হয়। এবার শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি মোট বাজেটের ১২ দশমিক ১ শতাংশ আর জিডিপির ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।   

তার মানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আগের মতো যেই লাউ সেই কদুই আছে। যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করার যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। অবশ্য বাস্তবতাও অস্বীকার করা যাবে না। অর্থ উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, হঠাৎ করে বিপ্লবী বাজেট করে বাস্তবায়ন করা যায় না। তারপরও শিক্ষা বাজেটে অন্তর্বর্তী সরকার আরও সদিচ্ছা দেখাতে পারত। শ্রেণিকক্ষ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো এবং পাঠ্যবই দেওয়া বলা চলে শিক্ষার রুটিন কাজ। সেগুলো জরুরি বটে। অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায়ও তা এসেছে। কিন্তু এর বাইরে অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষার জন্য বিশেষ কী উপহার দিয়ে যাচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। 

এ ক্ষেত্রে  স্কুল ফিডিং কর্মসূচি তাৎপর্যপূর্ণ বলা যায়। এ কর্মসূচি অনেকদিন ধরে বন্ধ আছে। সরকার যেহেতু এ খাতে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, সেহেতু এটি শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা যায়। এটি ভর্তির হার ও শিশুর পুষ্টিতে সাহায্য করার প্রত্যাশা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কলম শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জরুরি অনুষঙ্গ। সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু শিক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত যে কর্মসংস্থান, সেখানেও জোর দেওয়া দরকার ছিল। বেকারত্বের বিশাল বোঝার মধ্যে সরকারের চাকরিকেন্দ্রিক চিন্তা আরও জোরালো হওয়া দরকার ছিল।

আমাদের শিক্ষার সব পর্যায়েই নানামুখী সংকট রয়েছে। বিশেষ করে মানের সংকট প্রবল। সে জন্যই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষায় জিডিপির ৪ শতাংশ কিংবা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া এবং যথাযথভাবে তার বাস্তবায়নের বিষয়টি আগামী দিনের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। 

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com  
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর দ দ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ