Samakal:
2025-07-31@07:20:31 GMT

শিক্ষা বাজেট: যেই লাউ সেই কদু

Published: 9th, June 2025 GMT

শিক্ষা বাজেট: যেই লাউ সেই কদু

বাজেট নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই এর আগে ও পরে অনেক আলোচনা হয়। বাজেটের আগে সব খাতের অংশীজনই তাদের স্ব-স্ব খাতের জন্য প্রত্যাশিত বরাদ্দ দাবি করেন। শিক্ষা খাত নিয়েও এমন বিস্তর আলোচনা হয়। গত ২৯ এপ্রিল সিরডাপে এমনই এক আলোচনায় বলেছিলাম, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট এবং হয়তো শেষ বাজেটও। সে জন্য এ সরকার শিক্ষা বাজেটে এমন উদাহরণ সৃষ্টি করুক, যা পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। বাস্তবে এবারের বাজেটে সেই পুরোনো ধারাই দেখলাম। অন্তত শিক্ষা বাজেটের ক্ষেত্রে তা-ই বলা যায়।    

২ জুন অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপনের আগেই সংবাদমাধ্যমে খবর হয়, প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ কমছে আর মাদ্রাসা ও কারিগরিতে বাড়ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা– যা আগের বছরের মূল বাজেটের তুলনায় কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে। আমি মনে করি না, এই কিছু বরাদ্দ বাড়ানো বা কমানোর মধ্যে কোনো অংশকে বেশি বা কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বরং সার্বিকভাবে গোটা শিক্ষা খাতই যে অবহেলিত থাকছে, সে আলাপটা জরুরি। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের মূল বাজেটে ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা যেমন জরুরি, তেমনি মাধ্যমিক, কারিগরি, মাদ্রাসা কিংবা উচ্চশিক্ষা কোনোটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সামগ্রিকভাবে আমরা দেখছি, বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশেরও কম। অথচ শিক্ষা বাজেটের আলোচনায় এলেই আমরা ইউনেস্কোর নির্দেশনা অনুযায়ী জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলি। মোট বাজেটের শতাংশ হিসেবে দেখলেও ১২ শতাংশের বৃত্তেই ঘুরপাক খায় শিক্ষা বাজেট। এখানে ২০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি করা হয়। এবার শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি মোট বাজেটের ১২ দশমিক ১ শতাংশ আর জিডিপির ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।   

তার মানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আগের মতো যেই লাউ সেই কদুই আছে। যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করার যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। অবশ্য বাস্তবতাও অস্বীকার করা যাবে না। অর্থ উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, হঠাৎ করে বিপ্লবী বাজেট করে বাস্তবায়ন করা যায় না। তারপরও শিক্ষা বাজেটে অন্তর্বর্তী সরকার আরও সদিচ্ছা দেখাতে পারত। শ্রেণিকক্ষ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো এবং পাঠ্যবই দেওয়া বলা চলে শিক্ষার রুটিন কাজ। সেগুলো জরুরি বটে। অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায়ও তা এসেছে। কিন্তু এর বাইরে অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষার জন্য বিশেষ কী উপহার দিয়ে যাচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। 

এ ক্ষেত্রে  স্কুল ফিডিং কর্মসূচি তাৎপর্যপূর্ণ বলা যায়। এ কর্মসূচি অনেকদিন ধরে বন্ধ আছে। সরকার যেহেতু এ খাতে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, সেহেতু এটি শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা যায়। এটি ভর্তির হার ও শিশুর পুষ্টিতে সাহায্য করার প্রত্যাশা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কলম শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জরুরি অনুষঙ্গ। সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু শিক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত যে কর্মসংস্থান, সেখানেও জোর দেওয়া দরকার ছিল। বেকারত্বের বিশাল বোঝার মধ্যে সরকারের চাকরিকেন্দ্রিক চিন্তা আরও জোরালো হওয়া দরকার ছিল।

আমাদের শিক্ষার সব পর্যায়েই নানামুখী সংকট রয়েছে। বিশেষ করে মানের সংকট প্রবল। সে জন্যই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষায় জিডিপির ৪ শতাংশ কিংবা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া এবং যথাযথভাবে তার বাস্তবায়নের বিষয়টি আগামী দিনের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। 

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

[email protected]  
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর দ দ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ