কক্সবাজার সৈকতে উপচেপড়া ভিড়, লাল পতাকা উপেক্ষা করে সাগরে পর্যটকরা
Published: 9th, June 2025 GMT
ঈদের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সাগরের নোনাজলে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে উঠেছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। তবে সমুদ্রে গর্ত সৃষ্টি ও উল্টো স্রোতের কারণে সতর্কতা হিসেবে লাল পতাকা টানানো হলেও তা উপেক্ষা করে সাগরে নামছেন অধিকাংশ পর্যটক। এ কারণে গোসলে নেমে গত দুই দিনে তিন পর্যটকসহ মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতে ব্যাপক ভিড়। প্রায় ৩ কিলোমিটারজুড়ে সৈকতে জড়ো হয়েছেন দুই লাখেরও বেশি পর্যটক।
ছুটির সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার ছুটে এসেছেন। কেউ সাগরের নোনাজলে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, কেউবা বালুচরে ছবি তোলা কিংবা খেলায় মেতে উঠেছেন।
ঢাকা থেকে আসা রাইসা সমকালকে বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সৈকতের ভিড় আর প্রাণচাঞ্চল্য দেখে আনন্দ আরও বেড়ে গেছে।’
আরেক পর্যটক আব্দুল্লাহ বাকি বলেন, ‘কক্সবাজার এমন একটি স্থান, যেখানে বারবার এলেও নতুন মনে হয়। বিচ বাইক, জেট স্কি, ঘোড়ায় চড়া—সব মিলিয়ে চমৎকার সময় কাটছে।’
রুবিনা আলম নামের এক পর্যটক বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি, ইনানী—সব জায়গাই অনেক সুন্দর। ঈদের ছুটি কাটাতে এর চেয়ে ভালো জায়গা হতে পারে না।’
এদিকে কয়েকদিন ধরে সাগর উত্তাল রয়েছে। কিছু অংশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, আবার কোথাও উল্টো স্রোতের টান রয়েছে। এই ঝুঁকির কথা জানিয়ে সাগরসীমায় লাল পতাকা টানানো হলেও অধিকাংশ পর্যটক তা উপেক্ষা করে সমুদ্রে নামছেন।
সি-সেফ লাইফ গার্ডের সিনিয়র কর্মী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন স্তরে দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের কর্মীরা—টাওয়ার থেকে নজরদারি, বালিয়াড়িতে টহল, আর পানিতে বোট নিয়ে টহল। তবে নিরাপত্তার জন্য পর্যটকদেরই সচেতন হওয়া জরুরি।’
হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা জানান, ৯, ১০ ও ১১ জুন টানা তিন দিনে সৈকত ভ্রমণে আসবেন অন্তত চার লাখ পর্যটক। এই তিন দিনের জন্য ইতিমধ্যে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজের ৯৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ১২ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত সাত দিনে আরও পাঁচ লাখের বেশি পর্যটকের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের জন্য কক্ষ বুকিং হয়েছে ৮০ শতাংশ। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটির ১০ দিনে সৈকতে অন্তত ৯ লাখ পর্যটক আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও কটেজে দৈনিক সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। পর্যটকদের বরণে হোটেল-রেস্তোরাঁ, বিনোদনকেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ঈদের আগে থেকেই। তবে কক্ষভাড়ায় বিশেষ কোন ছাড় নেই।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের উপপরিদর্শক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সৈকতে দুই লাখের বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন। তাই বালিয়াড়ি, হোটেল-মোটেল জোন ও বিনোদন স্পটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটকদের সমস্যাও দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর
টাঙ্গুয়ার হাওর সৌন্দর্যে অনন্য এক জলাভূমি। পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয়। ভরা বর্ষায় সেই রূপ উপচে পড়ে। হাওরের স্বচ্ছ জলে জলকেলি, রাতে জল-জোছনার মায়াবী খেলায় তনু–মন দুটোই জুড়িয়ে যায়। শেষ বিকেলে উত্তরের সবুজ মেঘালয় পাহাড়, আকাশে থাকা মেঘের ছায়া অন্য রকম এক মায়ায় বিলিয়ে দেয়, মুগ্ধতা ছড়ায় চারপাশে।
হাওর, পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য একসঙ্গে ধরা দেয় সুনামগঞ্জে। টাঙ্গুয়ার হাওর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে তাই মুগ্ধতা নিয়ে ফেরেন পর্যটকেরা। ঈদের লম্বা ছুটি এবার। তাই টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ঢল নামবে। টাঙ্গুয়ার হাওরে এলে পর্যটকেরা বাড়তি হিসেবে জাদুকাটা নদী, বারিক টিলা, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক), শিমুলবাগান ও লাকমাছড়া ঘুরে যান। পুরো এলাকা কাছাকাছি, ছবির মতো সুন্দর।
হাওর পর্যটনে গত পাঁচ বছরে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে হাউসবোট। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ টাঙ্গুয়ার হাওরে নিবন্ধিত প্রায় এক শ হাউসবোট আছে। এর বাইরে নানা জায়গা থেকে ছোট-বড় আরও শ খানেক নৌকা ও বোট আসে টাঙ্গুয়ার হাওরে। পর্যটকেরা এসব বোটে সারা দিন হাওরে ঘুরে বেড়ান, পরে বোটেই রাত যাপন করেন হাওরের টেকেরঘাট এলাকায়। আবার অনেক বোট সারা দিন ঘুরে পর্যটকদের নিয়ে হাওরে থেকে ফিরে আসে।
পর্যটকদের নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসার অপেক্ষায় হাউসবোটগুলো