ঈদের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সাগরের নোনাজলে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে উঠেছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। তবে সমুদ্রে গর্ত সৃষ্টি ও উল্টো স্রোতের কারণে সতর্কতা হিসেবে লাল পতাকা টানানো হলেও তা উপেক্ষা করে সাগরে নামছেন অধিকাংশ পর্যটক। এ কারণে গোসলে নেমে গত দুই দিনে তিন পর্যটকসহ মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতে ব্যাপক ভিড়। প্রায় ৩ কিলোমিটারজুড়ে সৈকতে জড়ো হয়েছেন দুই লাখেরও বেশি পর্যটক।

ছুটির সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার ছুটে এসেছেন। কেউ সাগরের নোনাজলে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, কেউবা বালুচরে ছবি তোলা কিংবা খেলায় মেতে উঠেছেন।

 ঢাকা থেকে আসা রাইসা সমকালকে বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সৈকতের ভিড় আর প্রাণচাঞ্চল্য দেখে আনন্দ আরও বেড়ে গেছে।’

আরেক পর্যটক আব্দুল্লাহ বাকি বলেন, ‘কক্সবাজার এমন একটি স্থান, যেখানে বারবার এলেও নতুন মনে হয়। বিচ বাইক, জেট স্কি, ঘোড়ায় চড়া—সব মিলিয়ে চমৎকার সময় কাটছে।’

রুবিনা আলম নামের এক পর্যটক বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি, ইনানী—সব জায়গাই অনেক সুন্দর। ঈদের ছুটি কাটাতে এর চেয়ে ভালো জায়গা হতে পারে না।’


এদিকে কয়েকদিন ধরে সাগর উত্তাল রয়েছে। কিছু অংশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, আবার কোথাও উল্টো স্রোতের টান রয়েছে। এই ঝুঁকির কথা জানিয়ে সাগরসীমায় লাল পতাকা টানানো হলেও অধিকাংশ পর্যটক তা উপেক্ষা করে সমুদ্রে নামছেন।


সি-সেফ লাইফ গার্ডের সিনিয়র কর্মী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন স্তরে দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের কর্মীরা—টাওয়ার থেকে নজরদারি, বালিয়াড়িতে টহল, আর পানিতে বোট নিয়ে টহল। তবে নিরাপত্তার জন্য পর্যটকদেরই সচেতন হওয়া জরুরি।’


হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা জানান, ৯, ১০ ও ১১ জুন টানা তিন দিনে সৈকত ভ্রমণে আসবেন অন্তত চার লাখ পর্যটক। এই তিন দিনের জন্য ইতিমধ্যে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজের ৯৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ১২ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত সাত দিনে আরও পাঁচ লাখের বেশি পর্যটকের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের জন্য কক্ষ বুকিং হয়েছে ৮০ শতাংশ। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটির ১০ দিনে সৈকতে অন্তত ৯ লাখ পর্যটক আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও কটেজে দৈনিক সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। পর্যটকদের বরণে হোটেল-রেস্তোরাঁ, বিনোদনকেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ঈদের আগে থেকেই। তবে কক্ষভাড়ায় বিশেষ কোন ছাড় নেই।


ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের উপপরিদর্শক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সৈকতে দুই লাখের বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন। তাই বালিয়াড়ি, হোটেল-মোটেল জোন ও বিনোদন স্পটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটকদের সমস্যাও দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে।’

 

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা