কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন (৪০) নামে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়েছে। এসময় কেটে দেওয়া হয়েছে তার মাথার চুল। এছাড়া তার বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু-ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুরে সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিনা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়। 

পুলিশ ও এলাকাবাসীর দাবি, সোমবার বিকেলে রিনা খাতুন প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়। এরপর রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

রাত ৮টার দিকে স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ রিনার বাড়ি ভাঙচুর করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। ফের রিপনের বাড়ি নিয়ে এসে তাকে ব্যাপক মারপিট ও মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। 

পরে সেখানে সালিশ বসান শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.

শাহ আলম। সালিশে রিনার দুইটা গরু, একটা ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রিনা খাতুন। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন। মাথার চুল কাটা। 

এসময় রিনা বলেন, “রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বিকেলে তাকে ডাকতে গেলে তার স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করে। এরমধ্যে মুক্তি ও পারভিন আমার চুল কেটে দেয়। বাড়িতে ভাঙচুর করে ও গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছেন। আমি এর বিচার চাই।” 

এদিকে রিনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকশ মানুষ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তার মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছে। তাকে নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছেন তারা। কেউ কেউ আবার এসব দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছেন।

বিকেলে মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাবপত্র ভাঙচুর। গোয়ালঘরে নেই গরু-ছাগল। 

রিপন বলেন, “রিনা ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেন। সেই রাগে লোকজন ধরে তাকে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।” 

অভিযুক্ত রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, “আমি দড়ি দিয়ে বেঁধে শুধু একটা চড় মারি। কিন্তু কারা চুল কেটেছে তা জানি না।” 

অপর অভিযুক্ত কাশেম বলেন, “রিনা বিভিন্ন বাড়ি চুরি করেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু-ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসব বিষয়ে মেম্বরের সঙ্গে কথা বলুন।” 

গরু-ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, “আমি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কী ঘটেছে তা জানি না। আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।”

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, “চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম ও তার স্বজনদের পায়নি পুলিশ। তবে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ভিকটিম। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযোজনায় বাজেট ও কনটেন্টের ভারসাম্য তৈরি করা কঠিন: সকাল

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত মো. আসাদুজ্জামান সকাল। হাফ স্টপ ডাউন থেকে প্রযোজনা শুরু, এরপর এক দশকে তিনি প্রযোজনা করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি, ওয়েব সিরিজ, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এরপর নিজেই খুলেছেন নতুন প্রযোজনা সংস্থা ডিজিটাল শ্যাডো।

ঈদে মুক্তি পেয়েছে তার সহ-প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’, যা দর্শক বেশ পছন্দ করছেন। সিরিজটি প্রযোজনা করতে আগ্রহী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’-এর প্রাথমিক ধারণা শুনি, তখনই বুঝি-এটা আমাদের সমাজ ও সময়কে নিয়ে এক সাহসী গল্প। নির্মাণের ভিশনটা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, প্রযোজনা করতে আগ্রহটা একেবারে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে।

ঈদের সময় দর্শকরা ভিন্নধর্মী কিছু খুঁজে থাকেন-ঠিক সেই জায়গা থেকেই সিরিজটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান।

আসাদুজ্জামান সকালের মতে, বর্তমানে প্রযোজকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- সাস্টেইনেবল মডেল খুঁজে পাওয়া। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এসেছে, কিন্তু বাজেট, রিটার্ন ও কনটেন্টের ভারসাম্য তৈরি করাটা কঠিন।

প্রযোজনার চ্যালেঞ্জিং দিক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একজন প্রযোজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ‘ভিশনকে বাস্তবে রূপ দেওয়া’। বাজেট, টেকনিক্যাল লজিস্টিক, ট্যালেন্ট, লোকেশন, সময়-সবকিছুর একটা ব্যালেন্স করতে হয়, যাতে নির্মাতার কল্পনা স্ক্রিনে ঠিকভাবে ফুটে ওঠে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রত্যেক মানুষের ইগো, আবেগ ও চাপের মাঝে একটা পজিটিভ টোন বজায় রাখা।’

এই মুহূর্তে কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান আসাদুজ্জামান। চেষ্টা চালাচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়ার গল্পকে বিশ্বদর্শকের সামনে তুলে ধরার। এছাড়া একটি ফিচার ফিল্ম, একটি ডকুফিকশন এবং দুটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিরিজ ডেভেলপমেন্টে আছে বলেও জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রযোজনায় বাজেট ও কনটেন্টের ভারসাম্য তৈরি করা কঠিন: সকাল
  • প্যারোলে মুক্তি, মায়ের মরদেহের পাশে রুপা-শাকিল
  • রূপগঞ্জের জামায়াতের কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুতি মূলক সভা  
  • কুষ্টিয়ায় মোটর শ্রমিকদের মারধরের প্রতিবাদে মহাসড়কে বিক্ষোভ 
  • কুমার নদে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
  • চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্নের অভিযোগ
  • রূপগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে গুলি, গুলিবিদ্ধ ১
  • দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
  • বাগেরহাটে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ১, আহত ৮