কুষ্টিয়ায় নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, কাটা হলো চুল
Published: 11th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন (৪০) নামে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়েছে। এসময় কেটে দেওয়া হয়েছে তার মাথার চুল। এছাড়া তার বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু-ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুরে সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিনা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর দাবি, সোমবার বিকেলে রিনা খাতুন প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়। এরপর রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
রাত ৮টার দিকে স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ রিনার বাড়ি ভাঙচুর করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। ফের রিপনের বাড়ি নিয়ে এসে তাকে ব্যাপক মারপিট ও মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।
পরে সেখানে সালিশ বসান শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.
মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রিনা খাতুন। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন। মাথার চুল কাটা।
এসময় রিনা বলেন, “রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বিকেলে তাকে ডাকতে গেলে তার স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করে। এরমধ্যে মুক্তি ও পারভিন আমার চুল কেটে দেয়। বাড়িতে ভাঙচুর করে ও গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছেন। আমি এর বিচার চাই।”
এদিকে রিনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকশ মানুষ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তার মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছে। তাকে নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছেন তারা। কেউ কেউ আবার এসব দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছেন।
বিকেলে মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাবপত্র ভাঙচুর। গোয়ালঘরে নেই গরু-ছাগল।
রিপন বলেন, “রিনা ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেন। সেই রাগে লোকজন ধরে তাকে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।”
অভিযুক্ত রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, “আমি দড়ি দিয়ে বেঁধে শুধু একটা চড় মারি। কিন্তু কারা চুল কেটেছে তা জানি না।”
অপর অভিযুক্ত কাশেম বলেন, “রিনা বিভিন্ন বাড়ি চুরি করেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু-ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসব বিষয়ে মেম্বরের সঙ্গে কথা বলুন।”
গরু-ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, “আমি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কী ঘটেছে তা জানি না। আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।”
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, “চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম ও তার স্বজনদের পায়নি পুলিশ। তবে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ভিকটিম। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল
কেউ এসেছেন সৈয়দপুর থেকে, কেউ–বা নওগাঁ থেকে। কেউ নিঃসন্তান, কারও আবার ছেলেসন্তান থাকলেও মেয়ে নেই। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিরকুট লিখে এক মায়ের রেখে যাওয়া বাচ্চার অভিভাবক হতে আগ্রহী তাঁরা। কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তাঁরা আবেদনও করেছেন। এ ছাড়া বাচ্চাটির অভিভাবক হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালের পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের কাছে কয়েক শ ফোনকল এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের পঞ্চম তলায় শিশু ওয়ার্ডের শয্যায় এক নবজাতক কন্যাসন্তান রেখে যান তাঁর স্বজনেরা। শয্যার পাশে একটি বাজারের ব্যাগে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। শিশুটির মা চিরকুটে লিখেছেন, ‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন।’ এরপর এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে বাচ্চাটির অভিভাবক হতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন হাসপাতালে ছুটে আসছেন এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশুবিশেষজ্ঞ শেখ সাদেক আলী বলেন, ‘বাচ্চাটির আজ একটু খিঁচুনির মতো দেখা দিয়েছে। দুধ পান করছে কম। অন্য সবকিছু স্বাভাবিক আছে। একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, সবার আগে বাচ্চাটির সুস্থতা। পরে অন্য সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
আজ শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের সামনে মানুষের ভিড়। কেউ বাচ্চাটির দত্তক নিতে, কেউ–বা একনজর দেখতে এসেছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বাচ্চা রেখে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর হাসপাতালের পরিচালক, ওয়ার্ড মাস্টারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তিন শতাধিক ফোন এসেছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সুমন কুমারের কক্ষে বাচ্চা নিতে আসেন মুনিরা-আনোয়ার দম্পতি। তাঁদের বাড়ি জেলার বিরামপুর উপজেলায়। মুনিরা জানান, তাঁদের দুই ছেলে আছে। কিন্তু মেয়ে নেই। তাঁর একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু ছেলেরা তাঁদের একটি বোন চায়।
বাচ্চাটির অভিভাবক হওয়ার জন্য হাসপাতালের পরিচালক বরাবর অনেকে আবেদন করেছেন। পেশায় ব্যবসায়ী এক ব্যক্তি আবেদনপত্রে লিখেছেন, বিয়ের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো বাবা হতে পারেননি। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি বাচ্চাটির অভিভাবক হতে চান।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত শিশুটির সুস্থতা। এরপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশুকল্যাণ বোর্ড আছে। বোর্ডের সদস্যরা বসে যাঁরা আবেদন করেছেন, সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সচ্ছল নিঃসন্তান দম্পতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।’
সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হাবিবা আক্তার বলেন, বাচ্চাটির দায়িত্ব নিতে আগ্রহী অনেক দম্পতি ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ হাসপাতালের পরিচালক বরাবর আবেদনও করেছেন। তবে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের শিশুকল্যাণ কমিটি আছে। বাচ্চাটির সুস্থতা সাপেক্ষে ওই কমিটি আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করবে। বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে রেজল্যুশনের পর বাচ্চা হস্তান্তর হবে।
বাচ্চাটির জন্য তারেক রহমানের উপহারএদিকে নবজাতক শিশুটির জন্য উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ দুপুরে তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং নিপীড়িত নারী-শিশু আইনি ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা সেলের প্রধান সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালকের হাতে উপহারসামগ্রী তুলে দেন। এতে বাচ্চাটির জন্য পোশাক ও নগদ কিছু অর্থ আছে।
এ সময় বিএনপির নিপীড়িত নারী-শিশু আইনি ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা সেলের দিনাজপুর শাখার সদস্য চিকিৎসক মাসতুরা বেগম, জিয়াউল হক, নুর জামান সরকার, তামান্না নুসরাত, হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’০৭ নভেম্বর ২০২৫