৫৮ দিন পর সাগর যাত্রার প্রস্তুতি জেলেদের
Published: 11th, June 2025 GMT
আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে শেষ হচ্ছে সমুদ্রে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তাই গভীর সমুদ্রে যাত্রার শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। ভারতের সঙ্গে মিল রেখে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এবছর প্রচুর ইলিশ মিলবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। এ বছরই প্রথম ভারতের সঙ্গে মিল রেখে এ অবরোধ দেওয়া হয়। দুই দেশের একসঙ্গে অবরোধের কারণে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকেন জেলেরা। এ কারণে সামুদ্রিক ৪৭৫ প্রজাতির মাছের সুষ্ঠ প্রজনন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এবার কোমর বেঁধে সাগরে নামার শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা।বুধবার (১১ জুন) সকাল থেকে দেখা গেল কেউ ট্রলারে রং করছেন, কেউ ট্রলারে জাল তুলছেন, কেউ আবার বরফ কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলছেন। মোটকথা যেন দম ফেলার ফুরসত নেই জেলেদের।
লতাচাপলী ইউনিয়নের মুসল্লিয়াবাদ গ্রামের জেলে হোসেন মাঝি বলেন, “ভারতের সঙ্গে মিল রেখে এ বছর অবরোধ দেওয়ায় সাগর অনেকটা নিরাপদ ছিল। আশা করছি আমাদের জালে এ বছর প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়বে।”
মহিপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের জেলে তোফায়েল মিয়া বলেন, “দীর্ঘ ৫৮ দিন একেবারে বেকার ছিলাম। কিছু টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েছি। এছাড়া মহাজনও দাদনের টাকা পাবে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি সরকার মেনে নেওয়ার কারণে আশা করছি আমরা এবছর ভালো পরিমাণে মাছ পাবো। তারপরও যদি মাছ না পাই তাহলে অন্য কাজ করতে হবে। এ পেশাই ছেড়ে দিতে হবে।”
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “অবরোধ শতভাগ সফল হওয়ায় মাছের সুষ্ঠ প্রজনন হয়েছে। তাই জেলেরা তাদের কাঙ্খিত মাছ শিকার করতে পারবেন বলে আশা করছি।”
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৫৮ দ ন অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।