ঘুমাতে প্রায় দুইটা বেজে যায়, কী করি
Published: 11th, June 2025 GMT
প্রশ্ন: আমি একাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। প্রতিরাতে বিছানায় যেতে যেতে রাত একটা–দেড়টা বেজে যায়। বিছানায় গেলেই আবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম আসে না, ঘুমাতে প্রায় দুইটা বেজে যায়। কিন্তু আমার ক্লাস শুরু হয় সাড়ে আটটায়। এত রাতে ঘুমিয়ে সকালে উঠতে সমস্যা হয়। এক মাস পর পরীক্ষা, অথচ ঘুমের এ সমস্যার কারণে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। পড়াশোনা করার জন্য ঘুমটা দরকার। এখন আমি কি ঘুমানোর জন্য কোনো ওষুধ খাব? দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
জাবের আহামেদ, ময়মনসিংহ।
পরামর্শ: রাত দেড়টা-দুইটায় ঘুমাতে যাওয়ার বদভ্যাস পরিহার করে আরও তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি কর। তোমার বয়সী কিশোরদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, মুঠোফোন ইত্যাদি ব্যবহারে আসক্তি দেখা যায়। ঘুমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে এসব ডিভাইস ব্যবহার কমাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ধরনের ঘুমের ওষুধ খাবে না। এটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকির কারণ হতে পারে।
দিনের যেকোনো সময় শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো কিংবা যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করতে পারো। এতে রাতে দ্রুত ঘুম চলে আসবে। তবে মনে রাখতে হবে, দিনে ভুল করেও ঘুমানো যাবে না। রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়া সবচেয়ে উত্তম। সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পরপর রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারো। ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে থেকে মুঠোফোন ও কম্পিটার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। যখন শুয়ে পড়বে, তখন আর কোনো ধরনের কাজের কথা ভাববে না। ঘুম না এলেও চুপচাপ শুয়ে থাকবে।
আরও পড়ুনরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে আবার ঘুম না এলে এসব নিয়ম আপনার জন্য০৮ মে ২০২৫প্রথম প্রথম দেখা যাবে শুয়ে আছ, তবু ঘুম আসছে না। তবে এভাবে কয়েক দিন চেষ্টা করলে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে ঘুমের এমন যন্ত্রণাদায়ক সমস্যাও কেটে যাবে। এরপরও যদি উপকার না পাও, তাহলে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে পারো। অনেক সময় শরীরের অন্য কোনো রোগ বা জটিলতার উপসর্গ হিসেবে নিদ্রাহীনতা তৈরি হয়। যদি শরীরে কোনো ব্যথা, মাইগ্রেনের সমস্যা, রেনাল ডিজিজ, অটো ইমিউন ডিজিজ থাকে, তাহলেও ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষা করিয়ে নাও। সঠিক কারণ নির্ণয় করে সুচিকিৎসা গ্রহণ করলে আশা করি উপকার পাবে।
আরও পড়ুনরাতের ঘুমের সময়সূচি ঠিক করবেন কীভাবে০১ ডিসেম্বর ২০২৩.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫