দীর্ঘ ছুটিতে এটিএম বুথে যে কারণে গ্রাহক ভোগান্তি
Published: 11th, June 2025 GMT
প্রতিবছর দুই ঈদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, ব্যাংক ছুটির মধ্যে গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে এটিএম বুথ সার্বক্ষণিক সচল রাখতে হবে। যাতে গ্রাহকেরা টাকার সংকটে না পড়েন। তবে বাস্তবতা হলো বেশির ভাগ ব্যাংক এই নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করেন না। ফলে টানা কয়েক দিন ব্যাংক বন্ধ থাকলেই এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন গ্রাহকেরা। এবারও একই চিত্র দেখা গেছে। এবার ঈদের ছুটির মধ্যে টানা ১০ দিন ব্যাংক বন্ধ। ব্যাংক খুলবে আগামী রোববার।
টানা এই বন্ধের মধ্যে প্রায় সব ব্যাংকের গ্রাহকেরাই এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে কম বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। বেশির ভাগ ব্যাংক নিজ গ্রাহক ছাড়া অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য বুধ থেকে টাকা তোলার সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ব্যাংক নিজেদের গ্রাহকদের জন্যও টাকা তোলার সীমা কমিয়ে দিয়েছে।
রাজধানীর শাহবাগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ব্যাংকের একজন গ্রাহক জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে ব্যাংক এশিয়া, এনসিসি ও পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ যান। তবে কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি। একই অবস্থা সারা দেশের এটিএম বুথেও।
ছুটির মধ্যে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার ভোগান্তির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় দেশে সর্বোচ্চ এটিএম বুথ সেবাদানকারী ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এটিএম বুথ দুইভাবে পরিচালিত হয়। প্রথমত, যেসব এটিএম বুথ ব্যাংক শাখা–সংলগ্ন, সেসব বুথ পরিচালিত হয় সংশ্লিষ্ট শাখার তত্ত্বাবধানে। ঈদের ছুটিতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংকের শাখা–সংলগ্ন এটিএম বুথে নতুন করে আর টাকা জমা করা সম্ভব হয়নি। কারণ কর্মকর্তাদের সবাই ছুটিতে চলে গেছেন। তবে কিছু ব্যাংক বিশেষ উদ্যোগে শুধু এটিএম বুথে টাকা জমার জন্য শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে রেখেছিল।
এ ছাড়া যেসব ব্যাংকের এটিএম বুথ শাখা থেকে দূরে স্বতন্ত্র স্থানে রয়েছে, সেসব বুথ পরিচালিত হয় বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এসব প্রতিষ্ঠান বুথে টাকা জমার দায়িত্ব পালন করে থাকে। এবার কোরবানির ঈদের ছুটির পর অনেকেই কোরবানির পশু কিনেছেন। ফলে সব ধরনের এটিএম বুথে অন্য সময়ের চেয়ে টাকা তোলার চাপ বেশি ছিল।
আবার ভুট্টা উৎপাদন হয় এমন জেলাগুলোতে ব্যাংক বন্ধের পর এটিএমের ওপর চাপ বেশি ছিল। কারণ, মাঠ থেকে ভুট্টা কিনলে দাম কম পড়ে। এই সুযোগ হারাতে চাননি মজুতদারেরা। বেশি ভুট্টা উৎপাদন হয়—এমন জেলাগুলো হলো দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, জামালপুর ও গাইবান্ধা।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিটি ব্যাংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে পারে নিজ ব্যাংকের কোন এটিএম চালু ও কোনটি বন্ধ। তবে দীর্ঘ ছুটিতে জনবল না থাকায় ব্যাংকগুলো তথ্য জানলেও নিষ্ক্রিয় এটিএম সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা করতে পারেনি। আবার এটিএম সেবা থেকে আয় না থাকার কারণে অনেক ব্যাংক এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রাহকদের।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত একটি এটিএম বুথে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা জমা রাখা যায়। ঈদের সময় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই টাকা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। শহরের বুথগুলোতে কাছাকাছি শাখা থেকে টাকা সরবরাহ করা গেলেও দূরবর্তী বুথগুলোতে তাৎক্ষণিক টাকা জোগান দিতে সমস্যা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১২ হাজার ৯৪৬টি এটিএম বুথ এবং ৭ হাজার ১২টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র গ র হক র ক বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।