সঙ্গী ডেভিড বেডিংহামকে নিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন টেম্বা বাভুমা। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের মুখে ছিল না হাসি। অস্ট্রেলিয়ার কারও কারও মুখে কিঞ্চিৎ হাসি লেগে ছিল। কিন্তু তা দেখে বোঝার উপায় নেই তাঁরা নির্ভার–চাপমুক্ত।
বরং কাগিসো রাবাদার তোপে প্রথম ইনিংসে ২১২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর পাল্টা জবাব যে দিতে শুরু করেছে, অস্ট্রেলিয়ানদের অভিব্যক্তিতে সেটাই প্রকাশ পেয়েছে। তিন পেস ব্যাটারি মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্স মিলে শেষ সেশনে তুলে নিয়েছেন প্রোটিয়াদের ৪ উইকেট।
ক্রিকেট–তীর্থ লর্ডসে তাতে যেন টেস্ট ক্রিকেটের সেকেলে দিনই ফিরে এল। তবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের প্রথম দিনে ১৪ উইকেট পড়লেও নির্দিষ্ট করে কাউকেই এগিয়ে রাখা গেল না। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এখনো ১৬৯ রানে পিছিয়ে। আগামীকাল দ্বিতীয় দিনে দুই দলেরই লক্ষ্য থাকবে প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার।
আজ টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বাভুমা। তাঁকে সঠিক প্রমাণ করতে দলের বোলাররা খুব বেশি সময় নেননি। রাবাদা–ইয়ানসেনের দারুণ বোলিংয়ে প্রথম সেশনেই ৪ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার। মধ্যাহ্ন বিরতির পর তবু স্বস্তিতে ছিল না প্রোটিয়ারা। কারণ, ‘লর্ডসের লর্ড’ হয়ে ওঠা স্টিভেন স্মিথ যে আরেকবার দেয়াল তুলে দাঁড়িয়েছিলেন!
কিন্তু খণ্ডকালীন স্পিনার এইডেন মার্করাম এসে পথের কাঁটা সরিয়েছেন। মার্করামের বলে তিনবারের চেষ্টায় ইয়ানসেন ক্যাচ নেওয়ার আগে স্মিথ করেছেন ৬৬ রান। আজ ইনিংসটি খেলার পথে একাধিক কীর্তি ছুঁয়ে ও ছাড়িয়ে গেছেন স্মিথ। লর্ডসে বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে এখন তিনিই সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। ইংল্যান্ডের মাটিতে বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফিফটিও এখন তাঁর।
তবে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৭তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে স্মিথের এসব কীর্তি ভুলিয়ে দিয়েছেন রাবাদা। টেস্টে এখন তাঁর উইকেট সংখ্যা ৩৩২। ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ শীর্ষ উইকেট শিকারি এখন তিনি। ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি পেসার অ্যালান ডোনাল্ডকে (৩৩০)।
৭২ রান করে দিনের সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছেন বো ওয়েবস্টার। তাঁর ইনিংসটির সুবাদেই অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দুইশর ওপারে পৌঁছায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঅস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫৬.
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২২ ওভারে ৪৩/৪ (রিকেলটন ১৬, বেডিংহাম ৮*, মুল্ডার ৬, বাভুমা ৩*, স্টাবস ২, মার্করাম ০; স্টার্ক ২/১০, হ্যাজলউড ১/১০, কামিন্স ১/১৪)।
* প্রথম দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৬৯ রানে পিছিয়ে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র কর ম ৪ উইক ট প রথম এখন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?