দিল্লি জ্বলছে। সেই সঙ্গে জ্বলছে গোটা উত্তর ভারত। স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রার সঙ্গে জুড়েছে অসহনীয় আর্দ্রতা। জ্যৈষ্ঠের শেষের এই তাপ বৃদ্ধির দরুন দিল্লিতে জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’। তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে কী কী করা উচিত, সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন, আরও কয়েকটা দিন এই অসহনীয় পরিস্থিতি চলবে। তারপর দেখা দিতে পারে পশ্চিমি ঝড়। বলা হয়েছে, উত্তর–পশ্চিম ভারতে এখনো মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেনি। ফলে আগামী দিনের হাল আরও খারাপ হতে পারে।

গত মঙ্গলবার দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার তাপমান ৪৪ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই ছিল। গতকাল বুধবার তা ৪৫ ডিগ্রি পেরিয়ে যায়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, স্বাভাবিকের তুলনায় এই তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রি বেশি। রাজধানীর অভিজাত লুটেন্স দিল্লির আয়ানগরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি। সেই সঙ্গে আর্দ্রতা বৃদ্ধির দরুন তাপমাত্রা অনুভূত হয় ৫১ ডিগ্রির মতো। এই প্রবল তাপপ্রবাহের সঙ্গে জায়গায় জায়গায় যুক্ত হয় বিদ্যুৎ বিপর্যয়।

আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী নরেশ কুমার পিটিআইকে জানান, আগামী শনিবার নাগাদ পশ্চিমি ঝঞ্ঝার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। কিছুটা ঝড়বৃষ্টি সামান্য স্বস্তি দিতে পারে।

দিল্লিতে তাপপ্রবাহ হয় উত্তর ভারতের কারণে। জম্মু–কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম–উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানে তাপপ্রবাহ হলে তার প্রভাব পড়ে দিল্লিতে। যেমন রাজস্থানে মরুঝড় হলে দিল্লিতে আঁধি হয়। পশ্চিম রাজস্থানের গঙ্গানগরে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রির ওপরে ঘোরাফেরা করছে। পাঞ্জাবের লুধিয়ানাতে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। গোটা রাজস্থানেই জারি রয়েছে কমলা সতর্কতা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৫ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত আবহাওয়া এমনই থাকবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো জায়গায় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে আবহাওয়ার সার্বিক উন্নতি হবে উত্তর–পশ্চিমি মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করলে।

পাহাড়ি রাজ্য হিমাচল প্রদেশও তাপপ্রবাহ থেকে মুক্ত নয়। ওই রাজ্যের উনায় গতকাল তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রির ওপরে ছিল। শিমলা ও মানালির মতো পর্যটনকেন্দ্রেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। রাজ্যের কোনো কোনো এলাকায় জলকষ্টের খবর পাওয়া গেছে।

তাপপ্রবাহের পাশাপাশি দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে সতর্কতা জারি হয়েছে করোনাভাইরাস নিয়েও। হঠাৎই এই ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির দরুন কোভিড নিয়ে বেশ কিছু কর্তব্যের কথা জনসাধারণকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য গতকাল থেকে কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধের কারণে বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা অসহনীয় পর্যায়ে: ইউএনএইচসিআর

যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা অসহনীয় হারে পৌঁছেছে। বিপরীতে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তার তহবিল দ্রুত কমছে। বিশ্বে গত এক দশকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র ইতিবাচক দিক হচ্ছে সিরিয়ার বাস্তুচ্যুতদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট’–এ এমন চিত্র তুলে ধরেছে। জেনেভা থেকে ইউএনএইচসিআর আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট’ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১২ কোটি ২১ লাখে পৌঁছেছে। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ১২ কোটি। এ সংখ্যা প্রায় এক দশক ধরে প্রতিবছর শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিই তুলে ধরে। এই বাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণ হলো সুদান, মিয়ানমার ও ইউক্রেনের মতো বড় সংঘাত এবং যুদ্ধ থামাতে ক্রমাগত ব্যর্থতা।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক তীব্র অস্থিরতার সময়ে বাস করছি; যেখানে আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহ এক ভঙ্গুর, মর্মন্তুদ পরিস্থিতি তৈরি করেছে—তীব্র মানবিক দুর্ভোগ যার সাক্ষ্য দেয়। শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য শান্তি ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে।’

বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে রয়েছে নিজ দেশের অভ্যন্তরে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষ, যাদের সংখ্যা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ৬৩ লাখ বেড়ে বেড়ে ৭ কোটি ৩৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। আর দেশ ছেড়ে পালিয়ে শরণার্থী হয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ মানুষ। এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে সুদানে। দেশটিতে ১ কোটি ৪৩ লাখ শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে। এর আগে এ অবস্থানে ছিল সিরিয়া (১ কোটি ৩৫ লাখ)। এরপর রয়েছে আফগানিস্তান (১ কোটি ৩ লাখ) ও ইউক্রেন (৮৮ লাখ)।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধনী অঞ্চলে বেশি শরণার্থী আশ্রয় নেয়। আবার ৬৭ শতাংশ শরণার্থী প্রতিবেশী দেশগুলোতেই আশ্রয় নেন। বিশ্বজুড়ে ৭৩ শতাংশ শরণার্থী এই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই রয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ৬০ শতাংশ তাদের নিজ দেশের মধ্যেই থেকে যায়।

বিশ্বে গত এক দশকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু ইউএনএইচসিআরের তহবিল এখনো ২০১৫ সালের সমানই রয়েছে। মানবিক সহায়তায় চলমান কঠোর কাটছাঁটের কারণে শরণার্থী-বাস্তুচ্যুতরা আরও অতি ঝুঁকির মুখোমুখি।

ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘তহবিল কাটছাঁটের এমন পরিস্থিতির মধ্যেও গত ছয় মাসে আশার আলো দেখেছি। সিরিয়ার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এক দশকের বেশি সময় বাস্তুচ্যুত থাকার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটি এখনো ভঙ্গুর এবং মানুষের জীবন পুনর্গঠনের জন্য আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।’

ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে মোট ৯৮ লাখ জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মানুষ দেশে ফিরেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ১৬ লাখ শরণার্থী (যা গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ) এবং ৮২ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ (যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ)।

তবে এ প্রত্যাবর্তনের অনেকগুলোই প্রতিকূল রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে ঘটেছে। যেমন ২০২৪ সালে বিপুলসংখ্যক আফগানকে আফগানিস্তানে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল, যারা দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় দেশে ফিরেছে। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মিয়ানমার ও দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোতে শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে নতুন করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিও ঘটেছে।

এ পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিগুলোর জন্য ক্রমাগত অর্থায়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। এ কর্মসূচিগুলো দেশে ফেরত যাওয়া বাস্তুচ্যুতদের সহায়তা করে। এ ছাড়া কর্মসূচিগুলো বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়দানকারীদের মৌলিক অবকাঠামো ও সামাজিক পরিষেবাগুলোকে শক্তিশালী করে; যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক অপরিহার্য বিনিয়োগ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুদ্ধের কারণে বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা অসহনীয় পর্যায়ে: ইউএনএইচসিআর