এই প্রথম এভাবে ভারতে ভেঙে পড়ল বোয়িং ৭৮৭
Published: 12th, June 2025 GMT
এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার শিকার বোয়িং ৭৮৭ মডেলের কোনো উড়োজাহাজ এর আগে কখনো এভাবে ভেঙে পড়েনি।
বোয়িং ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজটি ‘ড্রিমলাইনার’ নামেও পরিচিত, যা ১৪ বছর আগে আকাশে উড্ডয়ন করে। মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি মডেলটির ১০০ কোটি যাত্রী পরিবহনের মাইলফলক উদ্যাপন করেছে।
সে উপলক্ষে কোম্পানিটি জানিয়েছিল, বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ১৭৫টির বেশি ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ প্রায় ৫০ লাখ ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। এ সময় মডেলটির ফ্লাইটগুলো তিন কোটি ঘণ্টার বেশি সময় আকাশে ছিল।
এ দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের জন্য বড় একটি ধাক্কা। এমন এক সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন কোম্পানিটি ৭৩৭ সিরিজের উড়োজাহাজ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা ও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এ দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কেলি ওর্টবার্গের জন্যও একটি বড় পরীক্ষা। শিগগিরই তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির নানা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার জন্যই কেলিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এসব সমস্যার কারণে কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল।
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই শিশুসহ ২৩২ যাত্রী এবং ১২ জন ক্রুবাহী যুক্তরাজ্যের লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। উড্ডয়নের মাত্র পাঁচ মিনিট পর আহমেদাবাদের মেঘানি অঞ্চলের আবাসিক এলাকায় চিকিৎসকদের হোস্টেলের ওপর এটি বিধ্বস্ত হয়।
এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। উড়োজাহাজটি বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সমন্বয়ের অভাবে চামড়া শিল্পে বড় ক্ষতি
ঈদুল আজহার পর দেশের চামড়ার বাজারে চলছে অস্থিরতা। মাঠপর্যায়ে চাহিদা থাকলেও সরকার নির্ধারিত চামড়ার দরের সঙ্গে বাস্তবতার মিল না থাকায় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।
চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, যশোর ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে, সংগ্রহ করা চামড়ার বড় একটি অংশ ব্যবস্থাপনার অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাতেও দেখা গেছে একই চিত্র। গরুর কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়—যা সরকার নির্ধারিত দামের প্রায় অর্ধেক।
সরকারি দাম কাগজে, বাস্তবে অর্ধেক
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৬ মে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে প্রতি বর্গফুট ৬০–৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫–৬০ টাকা। এর ভিত্তিতে একটি মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার মূল্য ঢাকায় ১,৩৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ১,১৫০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে অনেক জায়গায় ৭০০–৯০০ টাকার বেশি চামড়ার দর ওঠেনি।
৭ জুন ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ ২৩টি চামড়া আনেন। প্রতিটি চামড়া তিনি কিনেছিলেন ৬০০–৭০০ টাকায়। কিন্তু বিক্রি করতে হয়েছে গড় মূল্য ৭৫০ টাকায়। কাউছার বলেন, ‘‘৮৫০–৯০০ টাকা আশা করেছিলাম, কিন্তু বাজারে কেউ সে দাম দেয়নি। লোকসান গুনেই বিক্রি করেছি।’’
যশোর, নাটোর ও চট্টগ্রামের শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, ঈদের দিন ও পরদিন তারা চড়া দামে চামড়া কিনলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক কমে। নাটোরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ট্যানারি মালিকদের অনাগ্রহ ও স্থানীয় দালালদের কারণে তারা চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, চামড়া নিয়ে অপপ্রচার চলছে, একটি মহল কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। তবে মাঠপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সমস্যা কোনো অপপ্রচারে নয়, বরং বাস্তবতারই অংশ।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘সরকারি হস্তক্ষেপে বাজারে একটি মানসিক জড়তা তৈরি হয়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আত্মবিশ্বাস হারান, ফলে অনেকেই বড় ধরনের লোকসানে পড়েন।’’
৯১ লাখ কোরবানির পশু, সম্ভাবনার অপচয়
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের ঈদুল আজহায় ৯১ লাখ ৩৬ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে—যার মধ্যে ৪৭ লাখ গরু-মহিষ এবং ৪৪ লাখ ছাগল-ভেড়া। সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে (২৩ লাখ ২৪ হাজার), এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
অর্থনীতিবিদ ড. এম মুইদ রহমান বলেন, ‘‘কোরবানির চামড়া আমাদের গার্মেন্টসের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হতে পারতো। কিন্তু মূল্য নির্ধারণ, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতার অভাবে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রতি বছর যদি গড়ে ৮০ লাখ গরু কোরবানি হয় এবং প্রতি চামড়া গড়ে ১ হাজার টাকা ধরে হিসাব করি, তাহলে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারতো।’’
ট্যানারি পল্লীর কাঠামোগত দুর্বলতা
সাভারে স্থাপিত আধুনিক ট্যানারি পল্লী এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ফলে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘‘ছোট গরুর চামড়া বেশি এসেছে, সরবরাহ ভালো ছিল। কিন্তু কাঠামোগত দুর্বলতায় কেউ চামড়ার প্রকৃত মূল্য পাচ্ছেন না।’’
সকালাম ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক সাজেদুল খায়ের বলেন, ‘‘প্রতিটি চামড়ায় লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে পড়ে যাচ্ছে ৩৫০–৪০০ টাকা। বাজার ভালো না হওয়ায় আমরা কম দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছি।’’
একটি মাঝারি আকারের চামড়া নষ্ট হওয়ায় শুধু ৫০০–৭০০ টাকার সম্পদই নয়, পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পচা চামড়া থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যর জন্য ঝুঁকির কারণ। বিভিন্ন এলাকায় এসব চামড়া নালায়, খালে ও উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
সমাধান কী?
শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘চামড়া শিল্পে সরকার, ট্যানারি মালিক, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মধ্যে কোনো কার্যকর সমন্বয় নেই। একটি জাতীয় সমন্বয় কমিটি ছাড়া এই খাতকে সুষ্ঠু পথে আনা সম্ভব নয়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চামড়া শিল্পের সংকট সমাধানে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ভর পদক্ষেপ। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ, লবণ সংরক্ষণ কেন্দ্র, স্বচ্ছ মূল্য কাঠামো এবং দ্রুত ট্যানারি পল্লীর পূর্ণ কার্যকারিতা ছাড়া প্রতিবছর একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি হবে।’’
এক সময় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত ছিল চামড়া শিল্প। আজ তা অব্যবস্থাপনা, কাগুজে সিদ্ধান্ত এবং দুর্বল সমন্বয়ের কারণে ধ্বংসের পথে। বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা ও মাঠপর্যায়ে কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া এই খাত পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলে মনে করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
এএএম//