শরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
Published: 16th, August 2025 GMT
শরীয়তপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা যাওয়ার পথে আটকে রাখায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে মামলাটি করেছেন ওই নবজাতকের বাবা নূর হোসেন। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে আজ শনিবার ভোরে প্রধান আসামি সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় একটি ক্লিনিকের সামনে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কয়েকজন চালকের বিরুদ্ধে। পরে ওই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অসুস্থ এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। ওই নবজাতক ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ছাতিয়ানি গ্রামের নূর হোসেন সরদার ও রুমা বেগম দম্পতির সন্তান।
আরও পড়ুন‘বাইরের’ অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখলেন স্থানীয় চালকেরা, ধস্তাধস্তির মধ্যেই নবজাতকের মৃত্যু১৫ আগস্ট ২০২৫র্যাব-৮–এর মাদারীপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার ঘটনার প্রধান আসামিকে আজ ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সদর উপজেলার চিকন্দি এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব ও পুলিশ কাজ করছে।
আজ সকালে শহরের বেসরকারি ক্লিনিক নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ওই নবজাতকের মা রুমা বেগম বারবার সন্তানের সন্ধান করছিলেন। কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘আমার কলিজার টুকরাকে ১০ মাস শরীরের ভেতর আগলে রাখলাম। কেন সে চলে গেল? তোমরা কেন তাকে কবরে শোয়াইয়া দিলা। আমি এখন কাকে নিয়া বাঁচুম।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ছাতিয়ানি গ্রামের নূর হোসেন সরদার ঢাকায় বিদ্যুৎশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী রুমা বেগমের প্রসববেদনা উঠলে স্বজনেরা শরীয়তপুর জেলা শহরে নিয়ে আসেন। গত বৃহস্পতিবার শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একটি ক্লিনিকে রুমা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর নবজাতকটির শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর রুমারও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। স্বজনেরা ওই শিশুটিকে আরেকটি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খাজা হুমায়ুন কবিরকে দেখান। তিনি শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন স্বজনেরা রাত আটটার দিকে একটি ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পথে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সের চালক সবুজ দেওয়ান ওই অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিয়ে চালককে মারধর করেন। স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স থাকতে কেন ঢাকার অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখা হয়। সবুজের সঙ্গে আরও তিন-চারজন অ্যাম্বুলেন্সচালক তাতে অংশ নেন। অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার পর দীর্ঘ সময় ওই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সচালকদের তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন চিকিৎসা না পেয়ে ওই নবজাতকটি মারা যায়।
গতকাল গভীর রাতে সদরের পালং মডেল থানায় মামলা করেন মৃত নবজাতকের বাবা নূর হোসেন। তিনি ওই মামলায় অ্যাম্বুলেন্সচালক সবুজ দেওয়ানকে প্রধান আসামি করেছেন। এ ছাড়া আরও চার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
নূর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের জীবনধারনের জন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা কষ্টকর। তাই অসুস্থ ছেলেকে ঢাকা নেওয়ার জন্য অল্প টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছিলাম। তাতেই কাল হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের নির্মমতায় ছেলেকেই হারাতে হলো। প্রথমে মামলা করতে চাইনি। পরবর্তী সময় অনেকে সাহস জুগিয়েছেন, তাই মামলা করেছি। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে, এমন দাবি জানাই।’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য ম ব ল ন স আটক গ র প ত র কর শহর র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জেনে জি এম কাদের কাউন্সিল স্থগিত করেন
জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরবিরোধী অংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, গত ২০ মে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ২৮ জুন জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জেনে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন। পরে আদালতের নির্দেশে সদস্যপদ ফিরে পেয়ে তাঁরা সম্মেলন আয়োজন করেন। তাই জি এম কাদের আর আইনত চেয়ারম্যান নন।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই অভিযোগ করেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে দাবি করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আদালতে যাই, আদালত আমাদের সদস্যপদ বহাল করেন ও কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। আমরা রায় পেয়েছি ৩০ জুলাই। কাউন্সিল হয় ৯ আগস্ট। এই মধ্যবর্তী সময়ে জি এম কাদের আদালতে যাননি। এখন তিনি বাইরে চিল্লাচিল্লি করছেন। সুতরাং বিষয়টি আপনাদের বুঝতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা কাউন্সিল করেছি।’
সম্মেলন আয়োজনে কোনো তড়িঘড়ি বা লুকোচুরি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এই নেতা। তিনি বলেন, অনৈতিকভাবে জি এম কাদের যে সম্মেলন স্থগিত করেছিলেন, সেই সম্মেলন তাঁরা আবার আয়োজন করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙ্গল’ এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নম্বর–১২ তাঁরা ব্যবহার করবেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁরা সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী তাঁদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবেন।
জি এম কাদের সম্মেলনের ট্রেন মিস করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন কাদেরবিরোধী অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, কাউন্সিল হয়ে গেছে। এখন আর কোনো আকুতির সুযোগ নেই। তাঁরা পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস ব্যবহার করছেন, এটা অন্যায় করছেন। শিগগির এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাদেরবিরোধীদের কাউন্সিলে জি এম কাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৯ আগস্ট কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। আগের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। তাই আইনত জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদের ভিত্তি নেই। তাঁরা মিলেমিশে কাজ করার জন্য জি এম কাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির কাদেরবিরোধী অংশের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের সর্বাত্মক সংস্কারে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে যে ক্রান্তিকাল চলছে, তার উত্তরণে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দরকার।
আরও পড়ুননির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি চেয়ে আনিসুল-হাওলাদার কমিটির চিঠি১৩ আগস্ট ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু হোসেন, শফিকুল ইসলাম, নাজমা আক্তার, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম, মাসরুর মাওলা, সাইদুর রহমান, ইয়াহইয়া চৌধুরী, সরদার শাহজাহান, নুরুল ইসলাম মিলন, লিয়াকত হোসেন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, হারুন আর রশিদ, সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, মো. ইয়াকুব হোসেন, শেখ আলমগীর হোসেন, নীগার সুলতানা, মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, নাসির উদ্দিন সরকার, হাফেজ মাহমুদুর রহমান, সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, শারমিন পারভীন লিজা, মিজানুর রহমান, তাসলিমা আকবর রুনা, শারমিন আকতার, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
আরও পড়ুনজাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর আনিসুল, ঠেকাতে সক্রিয় জি এম কাদের১৩ আগস্ট ২০২৫