শরীয়তপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা যাওয়ার পথে আটকে রাখায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে মামলাটি করেছেন ওই নবজাতকের বাবা নূর হোসেন। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ও র‍্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে আজ শনিবার ভোরে প্রধান আসামি সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় একটি ক্লিনিকের সামনে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কয়েকজন চালকের বিরুদ্ধে। পরে ওই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অসুস্থ এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। ওই নবজাতক ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ছাতিয়ানি গ্রামের নূর হোসেন সরদার ও রুমা বেগম দম্পতির সন্তান।

আরও পড়ুন‘বাইরের’ অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখলেন স্থানীয় চালকেরা, ধস্তাধস্তির মধ্যেই নবজাতকের মৃত্যু১৫ আগস্ট ২০২৫

র‍্যাব-৮–এর মাদারীপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার ঘটনার প্রধান আসামিকে আজ ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সদর উপজেলার চিকন্দি এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য র‍্যাব ও পুলিশ কাজ করছে।

আজ সকালে শহরের বেসরকারি ক্লিনিক নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ওই নবজাতকের মা রুমা বেগম বারবার সন্তানের সন্ধান করছিলেন। কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘আমার কলিজার টুকরাকে ১০ মাস শরীরের ভেতর আগলে রাখলাম। কেন সে চলে গেল? তোমরা কেন তাকে কবরে শোয়াইয়া দিলা। আমি এখন কাকে নিয়া বাঁচুম।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ছাতিয়ানি গ্রামের নূর হোসেন সরদার ঢাকায় বিদ্যুৎশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী রুমা বেগমের প্রসববেদনা উঠলে স্বজনেরা শরীয়তপুর জেলা শহরে নিয়ে আসেন। গত বৃহস্পতিবার শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একটি ক্লিনিকে রুমা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর নবজাতকটির শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর রুমারও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। স্বজনেরা ওই শিশুটিকে আরেকটি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খাজা হুমায়ুন কবিরকে দেখান। তিনি শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন স্বজনেরা রাত আটটার দিকে একটি ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পথে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সের চালক সবুজ দেওয়ান ওই অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিয়ে চালককে মারধর করেন। স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স থাকতে কেন ঢাকার অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখা হয়। সবুজের সঙ্গে আরও তিন-চারজন অ্যাম্বুলেন্সচালক তাতে অংশ নেন। অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার পর দীর্ঘ সময় ওই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সচালকদের তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন চিকিৎসা না পেয়ে ওই নবজাতকটি মারা যায়।

গতকাল গভীর রাতে সদরের পালং মডেল থানায় মামলা করেন মৃত নবজাতকের বাবা নূর হোসেন। তিনি ওই মামলায় অ্যাম্বুলেন্সচালক সবুজ দেওয়ানকে প্রধান আসামি করেছেন। এ ছাড়া আরও চার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

নূর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের জীবনধারনের জন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা কষ্টকর। তাই অসুস্থ ছেলেকে ঢাকা নেওয়ার জন্য অল্প টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছিলাম। তাতেই কাল হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের নির্মমতায় ছেলেকেই হারাতে হলো। প্রথমে মামলা করতে চাইনি। পরবর্তী সময় অনেকে সাহস জুগিয়েছেন, তাই মামলা করেছি। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে, এমন দাবি জানাই।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য ম ব ল ন স আটক গ র প ত র কর শহর র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার

দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।

পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ