হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাটির সুবিচার কত বছরে মিলবে– এমন প্রশ্ন তুলেছেন রাঙামাটির রাজনীতিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচিত এই ঘটনার ২৯ বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় এমন প্রশ্ন করেন তারা।
এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার মামলাটির তদন্তের নামে ২৯ বছর ধরে তামাশা করে যাচ্ছে। এই বিচার না হওয়ার জন্য তারা দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেও দায়ী করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখা যৌথভাবে আশিকা হল রুমে সভাটির আয়োজন করে। এতে কল্পনা চাকমা মামলার আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০২৪ সালে অপহরণ মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এ সময় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে বাদী কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালেন্দী কুমার চাকমা রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গৃহীত হয়। আগামী ১৭ জুন মামলাটির শুনানি হবে।
তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে কল্পনা চাকমা অপহরণের শিকার হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তবু বিচার ও তদন্তের নামে তামাশা চলছে। তিনি প্রকৃত সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে মামলার সমাপ্তি টানার দাবি জানান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা স্পষ্ট করে দেখেছিলেন, কারা এই অপহরণ করেছিলেন। বিষয়টি শুধু আমাদের দেশে সীমাবদ্ধ নয়, সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মানবধিকার সংস্থা থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সবাই স্বীকার করেছে কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছেন। কিন্তু বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদে কেঁদে মরছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় এক বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। এ স্বাধীন-সার্বোভৌম দেশে শুধু পাহাড়ের মানুষই নয়, দেশের সুবিধাবঞ্চিত সব মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির জেলা শাখার সভাপতি রিতা চাকমার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী কক্সি তালুকদার, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কবিতা চাকমা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ র ব যবস থ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক যুবলীগ নেতাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, যৌথ বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জহির উদ্দিন মিন্টু (৪৯) নামে সাবেক এক যুবলীগ নেতাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে অপহরণের শিকার ওই নেতাকে উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের স্লুইস গেট এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের বইক্যারপাড়া এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহরণের শিকার জহির উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি বলে জানিয়েছেন বর্তমান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন।
যুবলীগ নেতা জহিরের সঙ্গে তার ছোট ভাই মো. সোহেলকেও (৩৫) অপহরণ করা হয়। পরে তাকে বাড়ি থেকে মুক্তিপণের টাকা আনার জন্য ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
সোহেল বলেন, ‘আমার ভাই মিন্টু ডলু নদী থেকে বৈধ ইজারাকৃত জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করে ভিটা ও গর্ত ভরাটের কাজ করেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার ভাইকে মোবাইল ফোনে কল করে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি বালু ভরাটের কথা বলে এওচিয়া ইউনিয়নের বইক্যারপাড়া এলাকায় ভাইকে যেতে বলে। সে অনুযায়ী, আমি ও আমার ভাই মোটরসাইকেলে অপহরণকারীদের বলা জায়গায় গেলে তারা আমাদের মারধর শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে তারা আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবির টাকা দিতে আমার এক প্রতিবেশীর মোবাইল ফোনে কথা বলি। এ টাকা না দিলে তারা আমাদের হত্যার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ভাইকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। অপহরণকারী দলের সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন হবে। তারা সবাই অস্ত্রধারী। তবে তাদেরকে আমরা চিনতে পারিনি। পরে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ঘটনাটি জানাই। বিষয়টি জানতে পেরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে কাঞ্চনা ইউনিয়নের স্লুইস গেইট এলাকা থেকে আজ ভোরে আমার ভাইকে উদ্ধার করে।’
সাতকানিয়া সেনাবাহিনী ক্যাম্পে দায়িত্বরত ক্যাপ্টেন পারভেজ বলেন, অপহরণকারীরা ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। মু্ক্তিপণ দেওয়ার আগেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে জহির উদ্দিন মিন্টুকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তফিকুল আলম বলেন, অপহরণের বিষয়ে পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সাড়ে ৮ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।