সাবেক যুবলীগ নেতাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, যৌথ বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার
Published: 12th, June 2025 GMT
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জহির উদ্দিন মিন্টু (৪৯) নামে সাবেক এক যুবলীগ নেতাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে অপহরণের শিকার ওই নেতাকে উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের স্লুইস গেট এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের বইক্যারপাড়া এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহরণের শিকার জহির উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি বলে জানিয়েছেন বর্তমান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন।
যুবলীগ নেতা জহিরের সঙ্গে তার ছোট ভাই মো.
সোহেল বলেন, ‘আমার ভাই মিন্টু ডলু নদী থেকে বৈধ ইজারাকৃত জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করে ভিটা ও গর্ত ভরাটের কাজ করেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার ভাইকে মোবাইল ফোনে কল করে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি বালু ভরাটের কথা বলে এওচিয়া ইউনিয়নের বইক্যারপাড়া এলাকায় ভাইকে যেতে বলে। সে অনুযায়ী, আমি ও আমার ভাই মোটরসাইকেলে অপহরণকারীদের বলা জায়গায় গেলে তারা আমাদের মারধর শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে তারা আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবির টাকা দিতে আমার এক প্রতিবেশীর মোবাইল ফোনে কথা বলি। এ টাকা না দিলে তারা আমাদের হত্যার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ভাইকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। অপহরণকারী দলের সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন হবে। তারা সবাই অস্ত্রধারী। তবে তাদেরকে আমরা চিনতে পারিনি। পরে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ঘটনাটি জানাই। বিষয়টি জানতে পেরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে কাঞ্চনা ইউনিয়নের স্লুইস গেইট এলাকা থেকে আজ ভোরে আমার ভাইকে উদ্ধার করে।’
সাতকানিয়া সেনাবাহিনী ক্যাম্পে দায়িত্বরত ক্যাপ্টেন পারভেজ বলেন, অপহরণকারীরা ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। মু্ক্তিপণ দেওয়ার আগেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে জহির উদ্দিন মিন্টুকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তফিকুল আলম বলেন, অপহরণের বিষয়ে পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সাড়ে ৮ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বল গ ন ত অপহরণ ম ক ত পণ উদ ধ র অপহরণক র অপহরণ র আম র ভ ই য বল গ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ
গাজীপুরের শ্রীপুরে রিয়াদ আদনান অন্তর (৩৫) নামে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাকে অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে একদল যুবকের বিরুদ্ধে।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সংঘটিত এ ঘটনায় বুধবার (১১ জুন) শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী ইসরাত জাহান আঁখি।
অপহৃত রিয়াদ আদনান অন্তর শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহসম্পাদক।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, অপহরণের ঘটনাটি ঘটে গত ২৮ মে রাত ৯টার দিকে। শ্রীপুর পৌর শহরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকার মালেক মাস্টার মার্কেটের সামনে থেকে রিয়াদকে তুলে নেয় একদল যুবক। এ সময় তিনি মেয়ের ওষুধ কিনে অটোরিকশায় বাসায় ফিরছিলেন। অভিযুক্তরা নিজেদের এনসিপির নেতা পরিচয় দিয়ে রিকশার গতিরোধ করে রিয়াদকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় স্থানীয় ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ারের পেছনের একটি কক্ষে। সেখানে হাত-পা বেঁধে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
ফেসবুক পোস্ট
তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বলেন, ‘‘তারা আমার স্বামীকে ব্যাপক নির্যাতনের পর মোবাইলে ফোন দেয় এবং অপর প্রান্ত থেকে আমি ‘আমাকে বাঁচাও’ শুনতে পাই। এরপর তারা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরদিন (২৯ মে) ভোরে এমসি বাজার এলাকায় অভিযুক্তরা প্রথম দফায় ২ লাখ টাকা, একটি আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স, মোবাইলের বক্স ও কাগজপত্র আদায় করে। পরে আরও ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেওয়ার পর ২৯ মে রাত ১০টার দিকে একই এলাকার নির্জন স্থানে রিয়াদকে ফেলে রেখে যায়।’’
এই পুরো ঘটনা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা কথোপকথন এবং সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে প্রমাণিত বলে দাবি করেছেন ইসরাত জাহান আঁখি।
অভিযুক্তরা হলেন, মো. উজ্বল হোসাইন (২২), আলিফ মোড়ল (২০), কাইফাত মোড়ল (২৪), মারুফ খান (২২) ও মিঠুন (২০)। তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এনসিপির সংগঠক হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে।
এদিকে অভিযুক্ত আলিফ মোড়ল নিজেই একটি ফেসবুক পোস্টে মুক্তিপণ আদায়ের কথা স্বীকার করে লেখেন, তিনি মোটরসাইকেলে করে দুই দফায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এনেছেন এবং নিজে ১০ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছেন। বড় ভাইদের ফাঁদে পা দিয়ে তিনি এসবে জড়িয়েছেন। জীবনেও আর এমন করবেন না বলে জানান।
তবে এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তরা কেউ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। শ্রীপুর উপজেলা এনসিপির আহ্বায়ক প্রার্থী আবু রায়হান মেজবাহ বলেন, ‘‘তারা কেউ আমাদের দলের নেতা নয়। পুলিশকে বলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তারা মিছিল-ছবিতে থাকলেও মূলত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো দায় নেওয়া হবে না।’’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীর স্ত্রী বিষয়টি আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি নজরে নিয়েছি। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।’’
ঢাকা/রফিক/টিপু