ঈদের ছুটি শেষ। কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখে ফিরতি পথেও যানবাহনের ব্যাপক চাপ পড়েছে। যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সয়দাবাদ গোলচত্বর থেকে কড্ডা পর্যন্ত থেমে থেমে ঢাকা অভিমুখে চাপ দৃশ্যমান।

শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ের সয়দাবাদ থেকে কড্ডা পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশে থেমে থেমে ফিরতি যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। যমুনা সেতু পশ্চিম টোল প্লাজার টোল কেন্দ্রে নিয়ন্ত্রিত হারে ঢাকার দিকে যান পারাপার করায় সেতুর পশ্চিম পাড়ে চাপ সৃষ্টি হয়, যা সরেজমিনেও দেখা যায়। যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় সেতু পশ্চিম থানা ও ট্রাফিক পুলিশ।

সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা অভিমুখে যানবাহন পারাপারে সাতটি বুথই খুলে দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত যানবাহন প্রতিটি বুথে ভিড় করে। হুড়োহুড়ি করে আগে যাবার প্রতিযোগিতা দেখা যায় চালকদের মাঝে। যেখানে সাতটি যানবাহন একসাথে টোল দিয়ে ঢাকার দিকে যেতে পারবে, সেখানে ভীড় করে কমপক্ষে সাতশো যানবাহন। এ কারণে দুপুর থেকেই থেমে থেমে যানবাহনের ধীরগতি দেখা যায়। তবে এখানে যানবাহনের পেছনে পেছনে যানবাহন থাকলেও কোন যানজট নেই।

যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল সন্ধ্যায় বলেন, ফিরতি পথেও চালকদের হুড়োহুড়ি কারণে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। পশ্চিম টোলপ্লাজায় নিয়ন্ত্রিতভাবে যানবাহন ছাড়ায় এক ধরনের চাপের যানজট হয়। সেতুর দু’পারের জেলা ও ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

কড্ডা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টিআই সাইফুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বলেন, সেতুর পশ্চিম টোলপ্লাজা থেকে কড্ডা পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারজুড়েই ঢাকা অভিমুখে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। জেলার ট্রাফিক পুলিশ এখানে দায়িত্বে আছি। পোশাক শ্রমিকদের কাজে ফেরার জন্য একসঙ্গে যাত্রা করায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

এদিকে কর্মস্থলে ফেরার যাত্রায় দুর্ভোগ ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। শুক্রবার যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। গাবতলীগামী শাপলা-সিহাব দম্পতি বলেন, সকালে এসেছি, বাসের খোঁজ-খবর নেই। হাজার টাকার নিচে কেউ যাবে না। ভাড়া দিয়ে কীভাবে যাব। চন্দ্রা (চান্দুরা) পর্যন্ত যেতে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। অথচ সেখানে বাসের সুপারভাইজার-হেল্পাররা ৮০০-১০০০ টাকা চাচ্ছেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক আকাশ মাহমুদ বলেন, সকাল ১০টায় এসেছি। দুপুর দুইটা পর্যন্ত গাড়ি পাইনি। ভাড়া শুনলে মাথা ঘুরে যায়। আরেক যাত্রী আব্বাস বলেন, ভাড়া তো বেশি নিচ্ছে। সরকার এত চেষ্টা করছে। তারপরও পেরে উঠছে না।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, হাটিকুমরুল মোড়ে বাস ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে নির্দিষ্ট ভাড়ায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকার দিকে তুলে দিয়েছি। পথে যদি অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নেয়, তখন আমরা কি করতে পারি।

সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ভাড়ার বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়নি কেউই।

সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) মো.

মোফাখারুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড রোদের মধ্যে আমাদের অবস্থা দুরহ। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় গার্মেন্টস শ্রমিক যাত্রীদের অনেক কষ্ট বেড়েছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সেতু কর্তৃপক্ষ থেমে থেমে নিয়ন্ত্রিতভাবে যান পারাপার করায় এমন সমস্যা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইরানের

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার জবাব শেষ হয়নি বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও ইরানের হামলা ‌‘চলবে’।

নাম প্রকাশ করেননি এমন একজন কর্মকর্তার বরাতে ফার্স এ তথ্য দিয়েছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাতে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইরান ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

তেহরানে শুক্রবার পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। 

অন্যদিকে ইসরায়েলের ইংরেজি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিব ও জেরুসালেমে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এছাড়া ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সমতল এলাকায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মাঝে একজন ছিলেন ৬০ বছর বয়সী একজন নারী, যাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে, তখন তার শরীরে কোনও প্রাণচিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষকেও উদ্ধার করা হয়, পরে যাকে মৃত ঘোষণা করা হয়, জানিয়েছে এমডিএ।

ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।

এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‌‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে। তবে, ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ দুর্ভেদ্য না’ উল্লেখ করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তারা যেন সমস্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে।

এর আগে ইরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার ভোরে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধারে চালানো হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তত পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।

জবাবে অন্তত ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। শুক্রবার রাতে চালানো ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামের ওই অভিযানে ইসরায়েলের তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরপর দুই দফায় ইসরায়েলে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এ সময় সাইরেন বেজে ওঠে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। 

এর আগে ইসরায়েলে দফায় দফায় হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক আলি শামখানি। অন্তত ২০০ ‍যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো ইরানের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীরও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা। ভোর থেকে দিনভর দফায় দফায় এ হামলা হয়। 

বেসরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩২০ জন। এটাকে ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বর্ণনা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের উচিত বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসা।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার রাতেও ইরানে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ