‘তথ্য আপা’দের কথা শুনতে সরকারের প্রতি আহ্বান
Published: 13th, June 2025 GMT
চাকরি স্থায়ীকরণ বা রাজস্ব খাতে নতুন পদ সৃষ্টি করে স্থানান্তরের দাবিতে ১৭ দিন ধরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। শিশুসন্তান নিয়েও অবস্থান করেছেন অনেকে। তবে তাঁদের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে আর বাকি রয়েছে মাত্র ১৭ দিন। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক নাগরিক সমাবেশ থেকে তথ্য আপাদের কথা শোনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
নাগরিক সমাবেশের পক্ষে অবস্থানপত্র পাঠ করেন লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা। অবস্থানপত্রে বলা হয়, তথ্য আপাদের কথা শুনতে হবে। অন্যায়ভাবে ১৯৬৮ জন নারীকে চাকরিচ্যুত করা চলবে না। এতে আরও বলা হয়, প্রকল্পের ১ হাজার ৯৬৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৭ বছরে মোট ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি কেটে নিয়েছে। সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। এই টাকা পাওয়ার জন্য ২০২২ সালে তথ্য আপারা আদালতে রিট করেন। আদালতের রায় তাঁদের পক্ষে গেলেও টাকা দেওয়া হয়নি।
অবস্থানপত্রে বলা হয়, দেশের গ্রামীণ নারীরা সরকারি সেবা, যেমন টিকা, ঘর বরাদ্দ, টিন, জাতীয় পরিচয়পত্র হালনাগাদ ইত্যাদি নানাবিধ অনলাইন সেবার জন্য তথ্য আপাদের ওপর ভরসা করে। কোনো সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হলে তথ্য আপাদের পরামর্শ নেয়।
অবস্থানপত্রে আরও বলা হয়, গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী আমলে প্রচুর লুটপাটের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোতেও বল্গাহীন লুটপাট চলেছিল। কিন্তু সেই দায় মাঠকর্মীদের নয়। বরং প্রকল্পের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং যাঁরা প্রকল্পটি তৈরি করেন, তাঁদের দায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ‘আওয়ামী আবর্জনা’ হিসেবে অভিহিত করে তথ্য আপারা চাকরিচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। কোনো সচিব বা উপসচিব এভাবে চাকরিচ্যুত হচ্ছেন না।
অবস্থানপত্রে অভিযোগ করা হয়, জুলাই গণহত্যার প্রকৃত রাজনৈতিক বিচার না করে, যে কেউ আন্দোলন করতে এলেই তাঁকে ‘আওয়ামী ট্যাগ’ দেওয়া একটি চিহ্নিত প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। এ কর্মসূচি চলার সময় কর্মীরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর শান্তিপূর্ণভাবে দেখা করতে গেলে তাঁদের ওপর পুলিশ ন্যক্কারজনক হামলা করে।
নাগরিক সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভা বলেন, যখন নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হচ্ছে, তখন এত নারীর চাকরিচ্যুতি প্রত্যাশিত নয়।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপ্রধান সীমা দত্ত, চিকিৎসক হারুন উর রশীদ, সাংস্কৃতিক কর্মী বীথি ঘোষ এবং মানবাধিকারকর্মী জাকিয়া শিশির।
সমাবেশে ঝালকাঠি তথ্যসেবা কর্মকর্তা সঙ্গীতা সরকার বলেন, ‘মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটা মানুষও আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। এটা লজ্জাজনক, দুঃখজনক। নিজেদের অভিভাবকহীন মনে হচ্ছে। কর্মকর্তারা যেন নিজেদের দরকারে প্রকল্প নিয়েছেন, বাণিজ্য করেছেন আর এখন প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগদলীয় ট্যাগ লাগিয়ে বিদায় করতে চাইছেন। অথচ আমরা কোনো দলের নয়, আমরা বাংলাদেশ সরকারের।’
সঙ্গীতা সরকার বলেন, তাঁদের দাবি, চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে অথবা নতুন পদ সৃষ্টি করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে এবং কেটে নেওয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন প্রকল্পে নিয়োগ পেতে তাঁরা নতুন প্রার্থীদের সঙ্গে আবার পরীক্ষা দিতে চান না।
শিশুসন্তানদের নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দুজন ‘তথ্য আপা’.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ কর চ য ত প রকল প র অবস থ ন সরক র র নত ন প
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।