যথাসময়ে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে একটা আশঙ্কা কতখানি দুঃসহ বাস্তবতায় পরিণত হয়, তাহার ধ্রুপদি উদাহরণ হইতে পারে বরগুনা জেলার প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর হটস্পট হইয়া উঠা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব উদ্ধৃত করিয়া শুক্রবার সমকাল জানাইয়াছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমগ্র দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৫ সহস্র অপেক্ষা কিছু কম। তন্মধ্যে বরগুনাতেই ছিল প্রায় দেড় সহস্র, যাহা মোট রোগীর ২৫ শতাংশেরও অধিক। একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াইয়াছে সোয়া দুই সহস্রাধিক, যাহার অর্ধেকেরও অধিক ছিল বরগুনায়। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, বরগুনায় বৃহস্পতিবার অবধি পাঁচজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটিলেও বাসাবাড়ি ও জেলার বাহিরে চিকিৎসা গ্রহণ করিতে গিয়া তথাকার অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হইয়াছে। এহেন পরিস্থিতিতে জেলায় চিকিৎসা সংকট প্রকট রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। বহু সংখ্যক রোগী বরগুনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে অবস্থান করিয়াও পর্যাপ্ত ঔষধ ও স্যালাইন না পাইবার অভিযোগ করিয়াছেন সমকাল প্রতিবেদকের নিকট। অন্যদিকে, ১০ জুনের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়াছে, জেলার অন্তত ১৩ শত ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে সদরের গৌরীচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা ৩১৫ জন, দক্ষিণ মনসাতলী গ্রামের রহিয়াছেন ১০৫ জন। পৌর শহরের নিকটবর্তী উক্ত অঞ্চল খুবই ঘনবসতিপূর্ণ, যেথায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নির্দিষ্ট কোনো কার্যক্রম নাই। অসংখ্য ডোবা-নালা জলাবদ্ধ থাকে বেশির ভাগ সময়। অর্থাৎ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে শুধু বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতিই অধিকতর জটিল রূপ ধারণ করিবে না; সংক্রামক রোগ বিধায় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও তাহা সম্প্রসারিত হইতে পারে। এমনকি রাজধানীসহ বৃহৎ শহরগুলিও যে এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ নহে, তাহা বলা বাহুল্য।
এমন নহে যে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে সতর্ক করা হয় নাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড.
ইতোপূর্বে আমরাও একাধিক সম্পাদকীয় স্তম্ভে ঢাকাসহ সমগ্র দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে শিথিল সরকারি কার্যক্রম লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলাম। বিশেষত ২০১৯ সালের ডেঙ্গু মহামারির উদাহরণ টানিয়া উহার বিপদ সম্পর্কেও সতর্ক করা হইয়াছিল, যখন সরকারি হিসাবেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা লক্ষ অতিক্রম করিয়াছিল, আর মৃত্যু ঘটিয়াছিল ১৭৯ জনের। ২০২২ সালে প্রাণঘাতী এই রোগে মৃত্যু ছিল ২৮১, এবং উহার প্রধান কারণ ছিল সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলির উদাসীনতা– এই কথাও আমরা তখন স্মরণ করাইয়া দিয়াছিলাম। বাস্তবে ঐ সকলই অরণ্যে রোদন বলিয়া প্রমাণিত হইতে চলিয়াছে।
আমাদের প্রত্যাশা, এহেন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি হইতে পরিত্রাণে দ্রুত স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই নিদ্রাভঙ্গ ঘটিবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রশমন, তৎসহিত সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত বরগ ন য় কর য় ছ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮
কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার খামার থেকে গত শুক্রবার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এ সময় তাদের হামলায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত হন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে।
গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এর সংলগ্ন এতিমখানার খামারে ঘটনাটি ঘটে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু লুট করেছিল ডাকাতরা।
আরো পড়ুন:
খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
এলাকাবাসী জানান, মাদরাসার আয় এই খামারের মাধ্যমে হয়। তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খামারের বড় গরুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় এক পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে খামারে ১১টি গরু অবশিষ্ট রয়েছে।
খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাত দলের ব্যবহৃত তুষের বস্তা, যা দিয়ে গরুগুলো পিকআপ ভ্যানে তোলে তারা। গরু উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মামলার বাদী এবং মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে পাঁচটি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, খামারের আয়ের ওপর ভিত্তি করে মাদরাসার কার্যক্রম চলে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাতরা।
লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, “লুট হওয়া গরু উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ