ইরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার ভোরে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধারে চালানো হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তত চার শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।
জবাবে অন্তত ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। গতকাল রাতে চালানো ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামের ওই অভিযানে ইসরায়েলের তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরপর দুই দফায় ইসরায়েলে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এ সময় সাইরেন বেজে ওঠে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
ইসরায়েলের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। তেল আবিবের পাশাপাশি জেরুজালেমের জনবহুল এলাকায়ও হামলা হয়েছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, ইরান সামরিক স্থাপনা, বিমানঘাঁটিসহ কয়েক ডজন লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে। তবে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন বলেন, ইরানের হামলায় তেল আবিবের ভবনগুলো কাঁপছে। তারা বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন এক কর্মকর্তা জানান, তারা ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ঠেকাতে কাজ করছেন।
এর আগে ইসরায়েলে দফায় দফায় হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক আলি শামখানি। অন্তত ২০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো ইরানের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীরও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা। ভোর থেকে দিনভর দফায় দফায় এ হামলা হয়।
বেসরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩২০ জন।
এটাকে ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বর্ণনা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের উচিত বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসা।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার রাতেও ইরানে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। বিবিসি জানায়, সন্ধ্যায় ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েল বলছে, ওই স্থাপনার অবকাঠামো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তেহরানের দক্ষিণের কউম শহরে পারমাণবিক স্থাপনায় দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ওই পারমাণবিক স্থাপনা ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ১০০ মিটার গভীরে। ওই স্থাপনায় ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হয়েছে বলে দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ।
ইস্পাহানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার পর সামাজিক মাধ্যম এক্সে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি লেখেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্তি দিয়েই জবাব দেবে ইরানের বাহিনী। এ অপরাধ সাজাবহির্ভূত থাকবে না। বিবিসি জানায়, ইরানের কিছু এলাকায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়েছে।
এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বলেছেন, হামলার জন্য ইসরায়েলকে ‘ভারী মূল্য’ দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল তার নিজের জন্য তিক্ত ও বেদনাদায়ক ভাগ্য বেছে নিল। ইসলামিক রিপাবলিকের সশস্ত্র বাহিনী এটাকে শাস্তির আওতার বাইরে রাখবে না।’ এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ইসরায়েল করত না।
দফায় দফায় ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের উদ্দেশে ১০০টি ড্রোন ছোড়ে ইরান, যা ভূপাতিত করেছে জর্ডান। আলজাজিরা জানায়, দুপুরে ইরাক সীমান্তের কাছে কারমেনশাহে ইরানের ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণান্ত্রের সংরক্ষণ স্থাপনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
কথিত ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এ সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান। সেখানে কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। শহরের দক্ষিণের ইস্পাহান, দক্ষিণ-পশ্চিমে আরেক বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ছাড়া নাতাঞ্জ শহরে ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তাবরিজ শহরে দুটি সামরিক স্থাপনা ও একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে হামলা হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে তেহরানে বহুতল ভবনে হামলার পর আগুনের কুণ্ডলী দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি ভবনে একাধারে হামলা হয়। এতে নিহত ইরানের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ছিলেন সর্বোচ্চ নেতা খামেনির পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আর রেভল্যুশনারি গার্ড আইআরজিসির প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামিও ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। নিহত হয়েছেন আইআরজিসির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদাহ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সহকারী কমান্ডার জেনারেল গোলাম আলি রশিদ।
ইসরায়েলের হামলায় নিহত পরমাণু বিজ্ঞানীদের মধ্যে আছেন– ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফেরেদুন আব্বাসি। পারমাণবিক পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রিধারী এ বিজ্ঞানী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিহত হয়েছেন ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানজি। তিনি আগে তেহরানের শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও পদার্থবিদ্যা অনুষদের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া পারমাণবিক প্রকৌশলে পিএইচডি ডিগ্রিধারী আবদুল হামিদ মিনুচেহর, শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক প্রকৌশলের অধ্যাপক আহমেদ রেজা জোলফাগারি, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের আমির হোসেন ফাগিহি ও পরমাণু বিজ্ঞানী মোতাল্লিবজাদেহ সস্ত্রীক নিহত হয়েছেন।
সন্ধ্যায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, নাতাঞ্জের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়ার সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানে বহুতল সমৃদ্ধকরণ কক্ষ ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ইরান বলছে, স্থাপনার আশপাশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের গণমাধ্যম বলছে, হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ইরানের অভ্যন্তরে মোসাদের ড্রোন ঘাঁটি
ইসরায়েলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরায়েল। সে অনুযায়ী তাদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানের অভ্যন্তরেই একটি ড্রোন ঘাঁটি নির্মাণ করে। সেটি ছিল রাজধানী তেহরানের কাছেই। এসব ড্রোন দিয়েও হামলা হয়েছে। ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানান, ঘাঁটি স্থাপনের পাশাপাশি চোরাপথে অস্ত্র নিয়ে সেখানে মজুত করা ও কমান্ডোদের ইরানে নেওয়া হয়। শুক্রবারের অভিযানে ইসরায়েলের বিমান থেকে ৩৩০টি বিস্ফোরক ফেলা হয়।
পাল্টা হামলার দাবিতে বিক্ষোভ
দ্রুত পাল্টা হামলার দাবিতে ইরানের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। স্থানীয় এক বিক্ষোভকারী এএফপিকে বলেন, ‘আর কতদিন আমরা ভয়ের মধ্যে বাস করব? আমি একজন ইরানি। আমি কঠোর জবাব দেওয়ার পক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘তারা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও গবেষকদের হত্যা করেছে। এখন তারা চাচ্ছে সমঝোতা? ইরানকে অবশ্যই কিছু করতে হবে।’ এর আগে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছিল ইরান। তারা বলেছিল, এ ধরনের হামলার জবাবে তারা ইসরায়েলেরও পারমাণবিক স্থাপনাকে টার্গেট করবে।
যুক্তরাষ্ট্র হামলায় জড়িত নয়– বলছেন ট্রাম্প
হামলার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার সঙ্গে ওয়াশিংটন জড়িত নয় বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ইরান পরমাণু বোমা বানাতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা, তারা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসবে। আমরা বিষয়টি দেখব।’ পাল্টা হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সুরক্ষা দেবে বলেও জানান তিনি। চুক্তিতে রাজি না হলে আরও নৃশংস হামলা হবে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
হামলায় জড়িত না থাকার কথা জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘ওই অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য) থাকা মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। আমি পরিষ্কার করতে চাই, আমাদের লক্ষ্যে পরিণত করা ইরানের উচিত হবে না।’
ইরানই এ গল্পের শেষ অধ্যায় লিখবে– বললেন পেজেশকিয়ান
বার্তা সংস্থ ইরনা জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় নিহত প্রত্যেক নাগরিকের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তাঁর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি ইসরায়েলের উদ্দেশে বলেন, ‘এমন বর্বর শাসকের সঙ্গে শুধু শক্তির ভাষায় কথা বলা উচিত।’ গত ২০০ বছরে ইরান আগ বাড়িয়ে কখনও কোনো যুদ্ধ শুরু করেনি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা কখনও পিছ পা হবো না। এই গল্পের শেষ অধ্যায় ইরানই লিখবে।’
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, নিন্দার ঢেউ
ইরানে হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও উদ্বেগ জানানো হয়। হামলার জেরে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাঁর মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, মহাসচিব যে কোনো সামরিক উস্কানির নিন্দা জানিয়েছেন। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যেবেক্ষক দলের প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, পারমাণবিক স্থাপনায় অবশ্যই হামলা হওয়া উচিত নয়। সব পক্ষকে অবশ্যই সংযত থাকতে হবে। যা ঘটছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, উত্তেজনা নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের মিত্রদের কাজ করতে হবে।
ইরানে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটি এ হামলাকে ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেছে। সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক এক্স পোস্টে লেখেন, সৌদি আরব ভ্রাতৃসুলভ ইসলামিক রিপাবলিক ইরানে জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এটা দেশটির সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
‘সামরিক আগ্রাসন’-এর নিন্দা জানিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ শিয়া আল-সুদানি। তিনি এ হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেন। পরমাণু সমৃদ্ধকরণ নিয়ে চুক্তির মধ্যস্থতাকারী ওমান এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের হামলা ‘ভয়াবহ’ ও ‘বেপরোয়া উস্কানি’। নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন ও পাকিস্তান।
চীন ও রাশিয়া এ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, তারা ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতিতে নজর রাখছেন।
আকাশসীমা বন্ধ, বিশ্বজুড়ে বিমান পরিষেবা ব্যাহত
হামলার জেরে ইরানের আকাশসীমা বন্ধ রয়েছে। এতে ওই পথে ইউরোপের দেশগুলোতে বিমান চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। একাধিক বিমান সংস্থার বিমানকে যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। আকাশসীমা বন্ধ করেছে ইরাক এবং জর্ডানও। এ দুই দেশের আকাশপথ ব্যবহার করে গন্তব্যে যেতে পারছে না কোনো বিমান। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকছে ইসরায়েলের তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরও।
তিনটি দেশের আকাশসীমা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের বিমান পরিষেবা। ইরানের সীমান্তবর্তী পূর্ব ইরাক বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ‘এয়ার করিডোর’। প্রতি মুহূর্তে এ আকাশপথ ধরে পশ্চিমের কোনো দেশে কিংবা ইউরোপে যায় এশিয়ার কোনো দেশের বিমান। ফিরতি পথেও এই করিডোর ব্যবহার করে বিমানগুলো। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ পথ বন্ধ হওয়ায় বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বিমানগুলোকে। ফলে বাড়ছে জ্বালানির খরচ।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র পরর ষ ট র য় ইসর য় ল কর মকর ত লক ষ য ন র পর স রক ষ পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের কত পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, কোথায় সেগুলোর অবস্থান
ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন শহরে আজ শুক্রবার ভোররাতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ হামলার আগে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন সময় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি দ্রুত সম্প্রসারণ করছে—ক্রমবর্ধমান এই আশঙ্কার কারণেই মূলত এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
২০১৫ সালে ছয় প্রভাবশালী দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে ইরানকে পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত রাখার শর্ত দেওয়া হয়। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরানে মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ছিল প্রায় ৯ হাজার ২৪৭ দশমিক ৬ কেজি বা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ বেশি।
মোট মজুতকৃত ইউরেনিয়ামের মধ্যে ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে ইরান, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রযোজ্য সমৃদ্ধকরণের চেয়ে সামান্য কম। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।ভিয়েনাভিত্তিক সংস্থা আইএইএ-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম রয়েছে, আরও কিছু পরিশোধন করলে তা দিয়ে দেশটি প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
তবে ইরান বরাবরই এ কথা অস্বীকার করে আসছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো অভিপ্রায় নেই বলে জানিয়েছে দেশটি।
নিচে ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক দল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে:
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র০১. নাতাঞ্জ
তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতাঞ্জ ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি গভীরভাবে সুরক্ষিত (বাংকারযুক্ত) একটি স্থাপনা। কেন্দ্রটির অস্তিত্ব প্রথম সামনে আসে ২০০২ সালে।
নাতাঞ্জের দুটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজের সারি আছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের কার্যক্রম ভূগর্ভে পরিচালিত হয়। সেন্ট্রিফিউজ হলো এমন যন্ত্র, যা ব্যবহার করে ধাপে ধাপে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।
আজ শুক্রবার ভোররাতে এই কেন্দ্রে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। কেন্দ্রটির পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত পরমাণুবিজ্ঞানীদেরও নিশানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
আইএইএ–এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি নিশ্চিত করেছেন, যেসব স্থান লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি নাতাঞ্জ।
মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।ফোর্ডো
মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘জরুরি’ স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করা হলেও পরে ইরান জানায়, এটি একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। সম্ভাব্য বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য মাটির নিচে এটি নির্মাণ করা হয়। এই কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার সেন্ট্রিফিউজ বসানো সম্ভব।
২০২৩ সালে এই কেন্দ্রে ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কণা পাওয়া যায়। ইরানের দাবি, পরিশোধন প্রক্রিয়ায় অনিচ্ছাকৃত তারতম্যের কারণে এমনটি হয়েছে।
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু কী, কারা জড়িত, নিহত কারা ৮ ঘণ্টা আগেইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র