গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভোটে ১৯৩টি দেশের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৯টি, বিপক্ষে ১২টি এবং ভোটদানে বিরত থাকে ১৯টি দেশ।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে। সেখানকার মানুষের জন্য সহায়তা নিশ্চিতে  ইসরায়েলকে অবরোধ তুলে নিতে হবে। এ ছাড়া যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন মানা নিশ্চিত করতে সদস্য দেশগুলোকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে অস্ত্র, টাকা ও বাণিজ্য বন্ধ করুন।’ অন্যদিকে, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি দানন এই প্রস্তাবকে ‘নৈতিক ব্যর্থতা’ এবং ‘রাজনৈতিক প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজার মানুষ মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পুরো জনসংখ্যা খাদ্য, পানি, ওষুধের অভাবে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের এ প্রস্তাবে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে মানবিক সাহায্য আটকে সাধারণ মানুষকে অভুক্ত রাখার মতো পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

এদিকে, গাজায় সাহায্য পাঠানোর দাবিতে মিসরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পদযাত্রার অংশ নিতে চাওয়া ২০০ জনের বেশি সমাজকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে আলজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা রয়েছেন।

অন্যদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় সহায়তা পৌঁছাতে অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা জাহাজ ম্যাডলিন থেকে আটক ছয় যাত্রীকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রিমা হাসানও রয়েছেন।

ইসরায়েলের হামলায় গাজার ইন্টারনেট ও ফোন সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এতে গাজার মানবিক সহায়তা কার্যক্রম এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে। তবে ইরানের ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হামাস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব আহ ব ন ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের আগে সিলেটের জাফলংয়ের পাথর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কবজায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর রাজত্ব বদলেছে। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীর হাতে এখন পাথর কোয়ারির চাবি। ইজারা স্থগিত থাকলেও রাতদিন বোমা মেশিন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাথর তোলা থেমে নেই। গত ৫ আগস্টের পর ৯ মাসে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার বালু পাথর লুট হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানিয়েছে।

লুটের অভিযোগে একাধিক নেতাকর্মী দলের পদ পদবি হারালেও এ পথ থেকে তারা ফিরছেন না। থানায় মামলা করেও দমানো যাচ্ছে না তাদের। সর্বশেষ শনিবার সরকারের দুই উপদেষ্টা জাফলংয়ে পরিদর্শনে গেলে তাদের গাড়িবহরে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের একাধিক নেতাকেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়।

শনিবার দুপুরে জাফলংয়ের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) পরিদর্শনে যান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষে ফেরার পথে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে একদল মানুষ পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে উপদেষ্টাদের গাড়িবহরের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন, যুবদল নেতা সুমন আহমদ ও শ্রমিক দলের দেলওয়ার হোসেনকে দেখা যায়। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদসহ আরও কয়েক নেতাকর্মীকে সেখানে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পরিদর্শন শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে। এ রকম জায়গায় আমরা আর পাথর তোলার অনুমতি দেব না। এখানকার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছি। পরে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলার কারণে পরিবেশের ধ্বংস হচ্ছে। আপাতত পাথর তুলতে দেওয়া হবে না।

গাড়িবহরে বাধার বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, হঠাৎ কিছু লোক উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে দেয়। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে।

শুরুতে জাফলং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাটের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে গত ১৬ অক্টোবর রফিকুল ইসলামের দলীয় পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সর্বশেষ ৯ জুন জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। বালু ও পাথর তোলার দায়ে গত ২৫ মার্চ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদ এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, দলের কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে দলের নাম ভাঙিয়েও অপরাধ করছে।

আজিরের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ