চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে ধান আবাদে আগ্রহ বাড়ছে
Published: 14th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে ধান চাষে মানুষ আগ্রহ ফিরে পাচ্ছেন। ফলে বাড়ছে পতিত জমির ব্যবহার। ভালো দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরোর আবাদ বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে। সহনীয় দামে সার-কীটনাশক পেলে অনেকেই ধানের আবাদে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলা নিয়ে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চল। এ অঞ্চলের মধ্যে চাষাবাদ ও ধান উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় নোয়াখালীতে। তবে গত কয়েক বছর ধরে পুরো অঞ্চলেই বাড়ছে ধানের আবাদ। গত মৌসুমে এ অঞ্চলের ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। চাল পাওয়া যায় ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৩ টন। চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৮ হেক্টর জমির ধান থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৬ টন। গত মৌসুমের তুলনায় চালের উৎপাদন বেড়েছে ৪৭ হাজার ৬৬৩ টন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ, মাঠকর্মীর মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ, চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, মাঠ ও ফসল নিয়মিত তদারকি, ফসল বালাইমুক্ত রাখতে কম ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহারে বাড়ছে উৎপাদন। অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত জাতের ধান আবাদে ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা আশার আলো দেখছেন। তারা পতিত জমি কাজে লাগাচ্ছেন।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর ধোরলা গ্রামের চাষি মো.
কৃষি অধিদপ্তর চট্টগ্রামের জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, চট্টগ্রামে এবার অতিরিক্ত ৫৫০ হেক্টর জমিসহ আবাদ হয়েছে মোট ৬৯ হাজার ৩৪৯ হেক্টর। ৫ হাজার ৮২৮ টন বেশিসহ ধান হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৫০ টন। নোয়াখালীতে এবার ৪ হাজার ৩৫৬ হেক্টর বেশি জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। জেলায় মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৮৬ হেক্টর জমি থেকে ধান মিলেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭১৫ টন, যা গত মৌসুমের চেয়ে ২৪ হাজার ২৪৮ টন বেশি। এ ছাড়া কক্সবাজার, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে বাড়তি ২ হাজার ৬৯৯ হেক্টর পতিত জমিতে ধানের উৎপাদন বেড়েছে ১৭ হাজার ৫৮৭ টন।
এ অঞ্চলে মোট ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৩ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়েছে। তা থেকে চাল পাওয়া গেছে ৭ লাখ ৬ হাজার ১৮৩ টন। একইভাবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ হেক্টরে উফশী আবাদে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৪ এবং ১৮৫ হেক্টরে স্থানীয় জাতের ধান থেকে চাল মিলেছে ৩৮৮ টন।
কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উৎপাদনের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী রাখতে তারা কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৌরভ দাশ বলেন, ‘ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা ধান আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অনাবাদি জমির ব্যবহার বাড়ছে। আবার তিন ফসলি জমি আবাদে বাড়ছে উৎপাদন, যার সুফল বোরো মৌসুমে পাওয়া গেছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।