ঢাকা-রংপুর-যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে যানজট ১০ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১৪ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। এতে যানবাহন চলছে থেমে থেমে, অন্যদিকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরত আসতে থাকা মানুষেরা।

শনিবার (১৪ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, বাস-ট্রাক, পিকআপভ্যান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ছুটছেন রাজধানীতে। এ কারণে চাপ বেড়েছে যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জের সব রুটে। এতে যমুনা সেতুতে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সকাল থেকে যমুনা সেতু টোল প্লাজা পর্যন্ত ঝাউল ওভার ব্রিজ এলাকায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের সয়দাবাদ গোলচত্বর থেকে কামারখন্দ উপজেলার সীমান্ত বাজার পর্যন্ত ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী উভয় লেনে বিপুল পরিমাণ যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। যানজট নিরসনে সেতু পশ্চিম থানা ও কড্ডা ট্রাফিক ফাঁড়ির পুলিশ কাজ করছে। যদিও সকাল ৯টার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। পরে সকাল ১০ টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও ঢাকা অভিমুখে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক থেমে থেমে চলছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক, জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ।

এদিকে, মহাসড়কে যাত্রীদের ভিড় আরো বেড়েছে। সয়দাবাদের কাঁঠালতলা, কড্ডার মোড় ও নলকা এলাকায় হাজার হাজার মানুষ যানবাহনের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের গন্তব্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। তবে সড়কে নেই পর্যাপ্ত যানবাহন। অনেক যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাচ্ছেন না। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও গাড়ির দেখা পাচ্ছেন না। বাসে সাধারণত যাতায়াতে যে ভাড়া নেওয়া হয়, তার চেয়ে দুই থেকে তিনগুন ভাড়াও দাবি করছে কিছু পরিবহন।

প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ গার্মেন্টস কর্মী লায়না বেগম, পারভীন খাতুন ও মাহফুজুল হোসেন জানান, প্রত্যেক ঈদ-পরবর্তী দিনগুলোতে একই চিত্র দেখা যায়, কিন্তু এবার ভিড় তুলনামূলক অনেক বেশি। কোনো গাড়িতেই সিট খালি নেই।

ছুটির শেষ দিন হওয়ায় একসঙ্গে অনেক মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ অবস্থায় নারী ও শিশু যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে চরমে। অনেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে রওয়ানা দিয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের প্রশাসনিক শাখার ইন্সপেক্টর মো.

মোফাখ্খারুল ইসলাম বলেন, ‘‘সেতুর ওপর ও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ঝাউল ওভার ব্রিজের সামনে একটি আমের ট্রাকসহ কয়েকটি যানবাহন গত রাত থেকে বিকল হয়ে পড়ে। সেগুলো সরিয়ে যানবাহন সচল করতে গিয়েও সেতু বিভাগের তিনটি রেকার বিকল হয়ে যায়। রেকারগুলো ঠিকঠাক করে যানবাহন আবার সচল করতে কিছুটা অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। এতে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন সচল হলেও ঢাকাগামী যানবাহন থেমে থেমে যাচ্ছে। পুলিশ মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় নিয়ন্ত্রণ করাটা দুরূহ হয়ে পড়েছে।’’   

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ‘‘সেতুর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার অংশে থেমে থেমে যানজট রয়েছে। সেতুর ওপরে এবং পশ্চিম দিকে কয়েকটি যানবাহন বিকল হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। হাটিকুমরুল মোড়ে যান চলাচল সচল রয়েছে।’’ 

যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সেতুর ওপরে চারটি এবং পশ্চিম দিকে একটিসহ পাঁচটি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। এই যানবাহনগুলো সরাতে গিয়ে সেতু ও জেলা পুলিশের তিনটি রেকার বিকল হয়ে যায়। একারণে যানজটে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা/অদিত্য/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ