ফেসবুকে বুঁদ আমরা। একটু সময় পেলেই চোখ রাখি। কিংবা বসে যাই ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপে। নিজের একাকিত্ব দূর করতে চাই ফেসবুকে ঢু মেরে। বন্ধুদের জালে জড়িয়ে পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসি। আসলে কি আসে পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়? একাকিত্বের বেড়াজাল ছিন্ন হয় কি? ফেসবুক আপনাকে কতটা আপন করে নিতে পারে, তা একবার চোখ বন্ধ করে ভাবলে বুঝতে পারবেন। তাই বলছিলাম কী, ফেসবুকে আপনি থাকুন; তবে এ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে পারেন চাইলে- 
- ফেসবুক বন্ধুদের সম্পর্কে অতিরিক্ত আবেগী হয়ে পড়বেন না এবং খোঁজ-খবর না নিয়ে মন দেওয়া-নেওয়া করতে যাবেন না।  
- ওপাশের বন্ধুটি যদি আপনার সত্যিকার বন্ধুই হতে চায় তবু দেখা করতে একটু সময় নিন। 
- স্বাভাবিক বন্দুদের সঙ্গে চাইলেই আপনি আড্ডায় বসতে পারেন। চটপটি-ফুচকায় সুর তুলতে পারেন; কিন্তু ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে চাইলেই এসব করতে পারবেন না। 
- বাস্তবিক বন্ধুরা আপনার বিপদে এগিয়ে আসতে পারে; কিন্তু ফেসবুক বন্ধুরা কখনোই তা করবে না। 
- খুব সহজেই ফেসবুক বন্ধুর কাছ থেকে আপনি ধোঁকা খেতে পারেন। 
- পাড়া বা মহল্লায় কিংবা কলেজ ক্যাম্পাসে আপনি পছন্দের মেয়ে অথবা ছেলেটির পেছনে ঘুরে বা দূর থেকে দেখে যে মজা পাবেন, ফেসবুক কিন্তু আপনাকে সে মজা থেকে দূরে রাখে; যদিও এই পথে পা বাড়াবেন কি-না তা ভাবনার বিষয়! 
- আর সব কিছু ফেসবুকে শেয়ার করার দরকারইবা কী! জন্মদিনে আপনার একান্ত প্রিয় মানুষটির সঙ্গে আপনি যে সময় কাটিয়েছেন; তা ক্যামেরায় ধরে ফেসবুকে দেওয়ার কোনো মানে হয়, বলুন? দেখবেন, আপনার রোমান্টিক দৃশ্যগুলো সত্যিই একদিন আপনার মনে ছবি হয়ে ভেসে বেড়াবে। 
- মনে রাখবেন, ফেসবুক আপনাকে অসংখ্য কমেন্ট এনে দিতে পারে; কিন্তু আপনি যদি কখনও বিছানায় কাতর হয়ে পড়ে থাকেন, তাদের কেউ আপনাকে  দেখতে আসবে না।
- তাই বলছিলাম কী, বাস্তব বন্দুদের গুরুত্ব 
দিন। আর ফেসবুকে থাকুন না পারতে। মানে থাকার জন্য থাকা যাকে বলে আর কী! আর 
মনে রাখবেন, সবই ভালো, যদি তা মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়!u

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ সব ক ব ক বন ধ র আপন ক আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ