আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নওগাঁয় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঈদুল আজহার ছুটিকে তাঁরা গণসংযোগের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন।

ঈদ উদ্‌যাপন করতে কর্মজীবী মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ফিরেছিলেন। সেই সময়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তৎপরতাই বেশি ছিল।

নওগাঁর ১১টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ছয়টি সংসদীয় আসনে এখনো বিএনপি দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই প্রতিটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ঈদের শুভেচ্ছা জানান ও নিজেদের বিষয়ে জানান দেন।

নওগাঁ–১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছালেক চৌধুরী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের আগে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সেমাই ও চিনি বিতরণ করেছেন। ঈদের ছুটিতে পুনর্মিলনী ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুল হকও বিভিন্ন মসজিদে দোয়ার অনুরোধ জানানো ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গণসংযোগ করেছেন।

বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা আসছে, সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, দলের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচার ও লিফলেট বিতরণ, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়াদাওয়া, নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

নওগাঁ–২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনজন—কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান চপল চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, পুনর্মিলনী, ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী এনামুল হকও সক্রিয় ছিলেন।

খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার এলাকার মানুষের সুখে–দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছি। ঈদের ছুটির সময়টাতে চেষ্টা করেছি আমার নির্বাচনী এলাকার সব গ্রামে সব মানুষের কাছে পৌঁছাতে। মানুষের ভোটের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছি। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন চাইব।’

নওগাঁ–৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী। জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমানও তৎপর ছিলেন।

বিএনপি নেতা ফজলে হুদা বাবুল বলেন, ‘শুধু এবার নয়, প্রতি ঈদেই চেষ্টা করি এলাকার গরিব–অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ঈদের আগে দুই উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি বিতরণ করেছি। ঈদের ছুটিতে নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মানুষ ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। ভোট মানে, তাঁদের কাছে একটা উৎসব। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মানুষ সেই উৎসব থেকে বঞ্চিত।’

নওগাঁ–৪ (মান্দা)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল মতিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী ও আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম। জামায়াতের প্রার্থী জেলা আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিব।

আব্দুল মতিন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন দেওয়া। কিন্তু তারা নির্বাচন রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত। কেউ দেশের মানচিত্র পরিবর্তন করতে চায়, কেউ সংস্কারের নামে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। যে কারণে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাঁরা সব পরিস্থিতিতে জনগণের সঙ্গেই আছি।’

নওগাঁ–৫ (সদর উপজেলা)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমবায়–বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম, আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ স ম সায়েম।

নওগাঁ–৬ (রাণীনগর ও আত্রাই)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রোজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইছাহাক আলী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আলমগীর কবিরও এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে তৎপর আছেন।জামায়াতের প্রার্থী আত্রাই উপজেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ খবিরুল ইসলাম।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এরপর মানুষের কল্যাণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এরপর দলের সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে থেকে কাজ করেছি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দলের জন্য কাজ করেছি। দলের একজন দীর্ঘদিনের কর্মী হিসেবে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’

বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক স ঈদ র ছ ট ত র রহম ন র উপজ ল ল ইসল ম কর ছ ন মন ন ত ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করলেন সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আদিবা হোসেন

সর্বস্তরের মানুষের অধিকার রক্ষা হয়, এমন বাংলাদেশ বিএনপি গড়ে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সৈয়দা আদিবা হোসেন। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম চায় দুর্নীতি বন্ধ হোক এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে উঠুক। জাতি চায় সত্যিকারের সংস্কার। সত্যিকারের সংস্কার হবে জনগণের মাধ্যমে।

আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মুকামবাজার এলাকায় গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় সৈয়দা আদিবা হোসেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার বাবা প্রয়াত সৈয়দ মকবুল হোসেন লিচু মিয়া এ আসনে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকাবাসীর জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করেছেন। আমি তাঁর পথ অনুসরণ করে ধানের শীষের আদর্শে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’

সামাজিক, সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে আদিবা হোসেন বলেন, ‘আমাদের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। শিক্ষা, যোগাযোগ, চিকিৎসা—সব দিক দিয়েই অনেক কাজ করতে হবে। আমরা একটা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সর্বস্তরের মানুষের নাগরিক অধিকার রক্ষা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি সারা দেশে কাজ করছে।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সৈয়দা আদিবা হোসেনের প্রয়াত বাবা এই অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করেছেন। তাঁরই রাজনৈতিক উত্তরসূরি সৈয়দা আদিবা হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এখানকার গ্রাম, হাটে ঘুরে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এখন দুই উপজেলার প্রতিটি ঘরে গিয়ে তিনি বিএনপির ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলছেন। তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত রাখতেও তিনি কাজ করছেন। জনবান্ধব এই নেত্রীকেই আগামী নির্বাচনে দল মনোনয়ন দেবে বলে কর্মী-সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাদেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তারেক জলিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হেলালুজ্জামান হেলাল, সহসভাপতি আবদুল কাদির সেলিম, আমুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রুহেল আহমেদ, ভাদেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাদেক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মিলাদ আহমেদ, আলীনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন আহমেদ, লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করলেন সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আদিবা হোসেন