মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি ও ইউক্রেন শান্তি আলোচনার বিষয় নিয়ে গতকাল শনিবার প্রায় ৫০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিন—উভয় পক্ষ থেকেই এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিন আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল ইরান নিয়ে আলোচনা। দেশটি সম্পর্কে তিনি ভালোই জানেন।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে তুলনামূলকভাবে কম কথা হয়েছে, তবে সেটা আগামী সপ্তাহে আলোচনা করা হবে।’

বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ফোনালাপটি ছিল ‘প্রায় এক ঘণ্টা।’ ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি যেমন মনে করেন, আমিও তেমন মনে করি—ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত। আমি তাঁকে বলেছি, তেমনি তাঁর যুদ্ধটিও (ইউক্রেন) শেষ হওয়া দরকার।’

পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলাপের বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানাননি ট্রাম্প।

পুতিনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, আলোচনার সময় পুতিন ট্রাম্পকে সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে রাশিয়ার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।

সাংবাদিকদের উশাকভ বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির বিপজ্জনক উত্তেজনা দুজনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তিনি বলেন, ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়ে সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ পরিস্থিতির ‘অপ্রত্যাশিত পরিণতি’ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

উশাকভ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের আলোচনার সময় রাশিয়া তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছে, যা পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য চুক্তি খুঁজে পেতে সহায়ক হতে পারে। রাশিয়া এই ইস্যুতে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাতে আগ্রহী এবং তাদের মূলনীতি ও অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ট্রাম্প ওই অঞ্চলকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বলে জানান উশাকভ। তবে তিনি ইরানে ইসরায়েলের হামলার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

উশাকভ বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি দুই নেতা।

পুতিনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ইস্তাম্বুলে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের শান্তি আলোচনার সময় যেসব সমঝোতা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন, বিশেষ করে যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের বিষয়টি ট্রাম্পকে অবহতি করেছেন পুতিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এক পানশালায় ‘অমর্যাদাকর’ আচরণের জেরে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে হিব্রু সংবাদমাধ্যমের এক খবরে জানা গেছে।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়েছে, আবুধাবি কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা আর ওই রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এরপরই তেল আবিব সরকার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ইয়োসি আব্রাহাম শেলিকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে হিব্রু সংবাদমাধ্যম এন১২ বলেছে, শেলি কয়েকজন ইসরায়েলিকে নিয়ে আমিরাতের একটি বারে হাজির হন এবং এমন আচরণ করেন, যা আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা ‘অগ্রহণযোগ্য ও মর্যাদাহানিকর’ বলে ইসরায়েলকে জানান। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গীদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন।

২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের তুমুল সমালোচনা চললেও আবুধাবি এখনো দেশটির ঘনিষ্ঠতম আরব মিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে একমাত্র আরব দেশে সফর করতে পেরেছেন, তা হলো আরব আমিরাত। গত জানুয়ারিতে গাজায় এক সাময়িক যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার আমিরাত সফর করেন।

শেলির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ আমিরাতের নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র এক কোটি জনসংখ্যার এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই আমিরাতি নন। দেশটিতে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিক, ব্রিটিশ অভিবাসী, রুশ ধনকুবের ও অন্য প্রভাবশালীদের উপস্থিতি রয়েছে। আর দুবাই উপসাগরীয় অঞ্চলের নৈশকালীন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

গত সপ্তাহে হিব্রু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে আবুধাবিতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শেলি এমন ‘অমর্যাদাকর’ আচরণ করেন, যা ব্যক্তি পরিসরের সীমা অতিক্রম করে। এর আগে তিনি ব্রাজিলে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং সেখানে দুটি বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।

এক ঘটনায় শেলি ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সেই ডিনারের ছবিতে দেখা যায়, টেবিলে একটি লবস্টার কালো মার্কার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইহুদি খাদ্যবিধি অনুযায়ী ঝিনুক–জাতীয় খাবার নিষিদ্ধ।

২০২৩ সালে হারেৎজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, এক ব্রাজিলীয় নারীর ভিসা–সংক্রান্ত আবেদনের জবাবে শেলি নিজে ই-মেইল ও ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, ইসরায়েলের ভিসা পেতে হলে ওই নারীকে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে। পরে ওই নারী বলেন, এক ভিডিও কলে তিনি দেখেন, শেলি বিছানায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছেন।

‘আমি যখন ক্যামেরা চালু করলাম, দেখি তিনি বিছানায় শুয়ে ঘামছেন। বললেন, তিনি হাঁটাহাঁটি করে ফিরেছেন। খুবই অনুচিত ছিল ব্যাপারটা। আমি বলি, পরে কথা বললে হয় না? উনি বলেন, ‘‘না, এখনই বলি।’’ এরপর ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার কথা বলেন ও ব্রাসিলিয়ায় রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। আমি ভীষণ চাপে ও অস্বস্তিতে পড়ে যাই’, বলেন ওই নারী।

পরে শেলিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘ইয়োসি ব্রাজিলে অত্যন্ত দক্ষ রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি শুধু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই নন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা
  • আগামীকাল গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দেওয়া হবে: আলী রীয়াজ
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • ৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়
  • সরকারের ঘনিষ্ঠরাই বলছে, এই সরকারের নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা নেই: জি এম কাদের