ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফা। শহরটি নিশানা করে গতকাল শনিবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে। খবরে হাইফায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়ার তথ্যও জানানো হয়।

খবরে আরও বলা হয়, হাইফার উত্তরের কিছু শহরেও গতকাল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। বদলা হিসেবে হাইফাসহ ইসরায়েল বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইরান।

হাইফায় ইরানের হামলা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়, গতকাল ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়, যার লক্ষ্য ছিল হাইফা ও তেল আবিব।

চ্যানেল ১২, টাইমস অব ইসরায়েলসহ ইসরায়েলি গণমাধ্যমে হাইফায় বিস্ফোরণ, বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের খবর দিয়ে বলা হয়েছে, এগুলো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব।

অন্যদিকে বিবিসি প্রথমে বলেছিল, হাইফায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। সেখানে পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে আবার বিবিসি বলে, হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানার খবরটি ঠিক নয়।

হাইফা ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। কিন্তু ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় এ শহরটি কেন গুরুত্বপূর্ণ, কেনইবা ইরানের লক্ষ্যবস্তু হাইফা?

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, হাইফায় ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি আছে। এ ছাড়া এখানে বেশ কিছু তেল শোধনাগার ও বহু রাসায়নিক কারখানা আছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার হাইফা এলাকায় অবস্থিত।

হাইফা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটি বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, হাইফা ইসরায়েলের প্রধান গভীর সমুদ্রবন্দর। ইসরায়েলের সামুদ্রিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এখান থেকে পরিচালিত হয়। ইসরায়েলের মোট পণ্য পরিবহনের প্রায় অর্ধেকই এই বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়।

বাণিজ্যিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে হাইফায় আয়রন ডোম স্থাপনসহ নানা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ইসরায়েল গ্রহণ করে রেখেছে বলে জানায় রয়টার্স।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইফায় অবস্থিত নৌঘাঁটি, তেল শোধনাগার ও রাসায়নিক কারখানাগুলো তেল আবিবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

হাইফায় ইরানি হামলা প্রত্যাশিত ছিল বলে উল্লেখ করেছে আল–জাজিরা। কারণ হিসেবে বলা হয়, এই শহরে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস অবকাঠামো রয়েছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে হাইফায় ইরানের হামলা এই ইঙ্গিত দেয় যে তেহরান তার অঙ্গীকার অনুযায়ী পাল্টা জবাব দিচ্ছে। কারণ, তেহরান বলেছিল, ইসরায়েল যদি ইরানের বেসামরিক অবকাঠামো বা জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে তারাও ঠিক একই রকম জবাব দেবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র খবর

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা