বাসযোগ্য কক্ষ বরাদ্দসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকেরা। রোববার বিকেলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা বলছেন, ইন্টার্ন হলের অধিকাংশ কক্ষ এখনো বসবাসের অযোগ্য। কিছু অংশে সংস্কারকাজ চলমান। এর মধ্যে প্রশাসনের নির্দেশে আবাসিক হলের কক্ষ থেকে তাঁদের জোর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল মধ্যরাতে অন্তঃসত্ত্বা এক নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে চার ঘণ্টার মধ্যে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে কক্ষের তালা ভেঙে তাঁদের মালামাল বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে তিন দফা দাবিতে তাঁরা কর্মবিরতির ডাক দিচ্ছেন।

দাবিগুলো হলো বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনার দায় স্বীকার ও প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও বাসযোগ্য আবাসিক কক্ষ নিশ্চিতকরণ ও বুঝিয়ে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা।

ওসমান‌ী মে‌ডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকেরা ‌দিলরুবা হলে থাকতেন। তবে নতুন শিক্ষার্থীদের জায়গা করে দিতে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বি‌বি আয়েশা হলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। হল‌টি শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত ও বাসযোগ্য নয় বলে দাবি শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের। এর মধ্যে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের মালপত্র কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক পরিষদের কমিটি গঠন হয়নি। তবে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের নেতৃস্থানীয় তিনজনের সঙ্গে আলাপ করে কর্মবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি পালন করবেন।

এদিকে বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মারদিয়া আলম নামের এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি আজ সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানান। পরে হাসপাতাল থেকে নিজের কক্ষে ফিরে মালামাল কক্ষের বাইরে ফেলে রাখা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ভিডিও করেন বলে উল্লেখ করেন।

মারদিয়া আলম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের যে কক্ষ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বাসযোগ্য নয়। সেগুলো দরজা-জানালা ছাড়া ও অপরিচ্ছন্ন। পানির ব্যবস্থা নেই এমন কক্ষ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে কক্ষের মালামাল বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন।

জানতে চাইলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতির বিষয়টি তিনি জানেন না। তাঁদের আগেও একাধিকবার আলাদা হলে উঠতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা তাঁদের হলের কক্ষ ছাড়ছেন না। এমন অবস্থায় ১৭ জুন কলেজের ২৪৯ জন শিক্ষার্থী আবাসিক হলে উঠবেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের কক্ষ বরাদ্দ দিতে হবে। এ জন্য শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, তাঁদের বরাদ্দ করা হলে অবস্থান করতে। কিন্তু অনেকেই কথা শোনেননি। চূড়ান্ত সতর্কবাণী দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর যাঁরা কক্ষ পরিবর্তন করেননি, তাঁদের বিষয়ে বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এরপরও বিষয়টি তিনি বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে জানান।

রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। সন্ধ্যার পর থেকে তাঁরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এদিকে হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগ ও মে‌ডিকেল কলেজের শিক্ষকেরা শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত‌্যাহারে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন।

শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এমাদ উদ্দিন বলেন, তিন দফা দাবিতে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছেন। রোববার হাসপাতালের ক‌্যাজুয়া‌লি‌টি ওয়ার্ডে তাঁর দায়িত্ব ছিল। কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় তিনি কাজে যাননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ক ল কল জ চ ক ৎসক র বর দ দ ব র কর ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন

কর্দোভার সংকীর্ণ গলিতে এক নারী দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর হাতে একটি কাঠের বাক্স, ভেতরে হাতে তৈরি মলম ও ঔষধি গাছ। তিনি আল-জাহরাভির কন্যা, একজন ধাত্রী, যিনি প্রসূতি মায়েদের সেবা করছেন। তাঁর কাজ শুধু শারীরিক নিরাময় নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের আস্থা ও আশার প্রতীক।

মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এমন অগণিত গল্প রচনা করেছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সমাজের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তৃতীয় ও শেষ পর্বে আমরা তাঁদের প্রভাব, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে তুলনা এবং তাদের ঐতিহাসিক স্বীকৃতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করব।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নারীদের ছাপ

মুসলিম নারী চিকিৎসকদের কাজ মুসলিম বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থাকে একটা কাঠামো দিয়েছে। রুফায়দা আল-আসলামিয়া (রা.)-এর মোবাইল হাসপাতালের ধারণা আধুনিক ফিল্ড হাসপাতালের পূর্বসূরি। তাঁর তাঁবু যা মদিনার মসজিদে নববিতে স্থাপিত হয়েছিল, স্বাস্থ্যসেবার মডেল হিসেবে কাজ করেছে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে মসজিদগুলো চিকিৎসা ও টিকাকরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা রুফায়দার মসজিদভিত্তিক তাঁবুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

এই মডেল পরবর্তী সময়ে আব্বাসীয় যুগের বিমারিস্তানে (হাসপাতাল) প্রতিফলিত হয়, যেখানে শিহাবুদ্দিন আল-সায়িগের (মৃ. ১৬২৭ খ্রি.) কন্যার মতো নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। (আল-সাঈদ, আত-তিব ওয়া রায়িদাতুহু আল-মুসলিমাত, পৃ. ১৮৯, আম্মান: দারুল ফিকর, ১৯৮৫)

নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আল-জাহরাভির (৯৩৬-১০১৩ খ্রি.) গ্রন্থ আত-তাসরিফ নারী চিকিৎসকদের জন্য শিক্ষার ভিত্তি ছিল, বিশেষ করে প্রসূতি ও গাইনোকোলজিতে। এই গ্রন্থ ইউরোপে অনূদিত হয়ে রেনেসাঁসের চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভাব ফেলেছে। ১৯০৮ সালে গ্রন্থটির আধুনিক সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে কায়রো ‘দারুল কুতুব’ থেকে।

আন্দালুসে উম্ম হাসান বিনত কাজি তানজালি (১৪ শতক) চিকিৎসাশিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তৈরি করেন, যা শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। (আবু বকর ও আল-সাদি, আন-নিসা ওয়া মিহনাত আল-তিব, পৃ. ২১২, কায়রো: দারুল কুতুব, ১৯৯৯)

এই কাজগুলো আধুনিক পাবলিক হেলথ সিস্টেমের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুনযে নারী সাহাবির বিয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন রাসুল (সা.)২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উদ্ধার হলো এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স
  • মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন